ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিদিন আড়াই কোটি মিনিট অবৈধ কল

ভিওআইপি কল টার্মিনেশন বন্ধ করতে পারছে না বিটিআরসি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

ভিওআইপি কল টার্মিনেশন বন্ধ করতে পারছে না বিটিআরসি

ফিরোজ মান্না ॥ বিটিআরসি হাজার চেষ্টা করেও অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) কল টার্মিনেশন বন্ধ করতে পারছে না। সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ৪২ হাজার সিমসহ অবৈধ ভিওআইপির যন্ত্রপাতি উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান রাষ্ট্রায়াত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের। মোবাইল সিম নিবন্ধন হওয়ার পরেও দেশ-বিদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অবৈধ কল আদান-প্রদান হচ্ছে টেলিটকের সিমের মাধ্যমে। বর্তমানে প্রতিদিন আড়াই কোটি মিনিটের বেশি কল অবৈধ পথে দেশ আসছে। ফলে প্রতিবছর অবৈধ ভিওআইপির জন্য সরকার এক থেকে দেড় শ’ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে। অথচ বিটিআরসি বলেছে, আগের তুলনায় বৈধ পথে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানের হার বেড়েছে। ফলে কল আদান-প্রদান থেকে রাজস্বও বেড়েছে। বিটিআরসি এক হিসাবে বলা হয়েছে, গত ৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিটিআরসি ও র‌্যাব যৌথভাবে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ১০ হাজারের ওপর সিমসহ ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এরমধ্যে টেলিটকের ৫ হাজার ৭৫টি, এয়ারটেল ও রবির ৩ হাজার ৮৯৭টি, গ্রামীণফোনের ১ হাজার ৪১৪টি, বাংলালিংকের ৪২৬টি, র‌্যাংকসটেলের ১২০টি এবং বাংলালায়নের ১৫টি সিম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিটিআরসির এই হিসাব দেয়ার মাসখানেকের মধ্যে চট্টগ্রামে ৪২ হাজার সিম উদ্ধার করেছে। বিভিন্ন কোম্পানির এই সিম দিয়ে অবৈধ ভিওআইপি করা হতো। একই সঙ্গে প্রায় কোটি টাকার অবৈধ ভিওআইপি যন্ত্রপাতি উদ্ধার করে তারা। বিটিআরসি জানিয়েছে, অবৈধ ভিওআইপি শনাক্তে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি আনার পরই অবৈধ ভিওআইপি কমতে শুরু করেছে। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে কোন এলাকার কোন বাসা বা অফিসে অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে, যদি কোন যন্ত্রাংশ আলমারি বা ড্রয়ারেও থাকে -তাও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। আর এ কারণে সম্প্রতি অবৈধ ভিওআইপি কল ধরা সম্ভব হচ্ছে। গত মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার অবৈধ ভিওআইপির যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। অবৈধ ভিওআইপি নিয়ে বিটিআরসি বেশ কয়েকটি মামলা করেছে। সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসি এর আগে অবৈধ ভিওআইপি রোধ করতে জার্মানির সিগসের ও যুক্তরাজ্যের থ্রিডিআই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। ওই দুই প্রতিষ্ঠান অবৈধ পথে কল শনাক্ত করার কাজ করবে। বিটিআরসি অবৈধ কল কোনভাবেই ঠেকাতে পারছিল না। এ জন্য বিটিআরসি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্ত বিটিআরসি ওই দুই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি ধরে রাখেনি। ফলে প্রতিদিন গড়ে আড়াই কোটি মিনিট অবৈধ ভিওআইপি কল আদান-প্রদান হচ্ছে। দেশে বৈধ সিম দিয়েই অবৈধ কল আনা হচ্ছে। এই কল বিটিআরসি কোনভাবেই বন্ধ করতে পারছে না। বৈধ পথে প্রতিদিন কল নেমে সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি মিনিটে চলে এসেছিল। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসির নিয়মানুযায়ী প্রতি মিনিট কল থেকে যে আয় হয় বিটিআরসি তার ৪০ শতাংশ, ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, মোবাইল অপারেটর ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আইজিডব্লিউ অপারেটরগুলো বাকি ২০ শতাংশ পাচ্ছে। দেশে ২১ আইজিডব্লিউ অপারেটরের মধ্যে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর সিন্ডিকেট করে কলরেট বাড়ানোর ফলে আগের নিয়মেই অর্থের অংশ পাচ্ছে সরকার। নতুন নিয়মে মাত্র সাতটি অপারেটর কল টার্মিনেট বা গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। আইজিডব্লিউ (ইন্টারনেট গেটওয়ে) কোম্পানিগুলো বাড়তি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছে। ফলে বৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান কমে গেছে। আগে বৈধভাবে প্রতিদিন সাড়ে ১১ থেকে ১২ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান হতো। এখন বৈধভাবে কল আদান-প্রদান হচ্ছে সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি মিনিট। অবৈধ পথের টাকা চলে যাচ্ছে আইজিডব্লিউ অপারেটরদের পকেটে। আন্তর্জাতিক কল কমে যাওয়ার জন্য দুটি বিষয়কে দায়ী করছে বিটিআরসি। কল সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য বড় দায়ী আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটররা। তারা কল রেট দেড় থেকে দুই সেন্ট করে বৈধ পথে কলসংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। এই কলগুলোর মধ্যে অবৈধ ভিওআইপি হচ্ছে সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটির মিনিটের বেশি। এই কল থেকে প্রতিবছর দেড় শ’ কোটি টাকার বেশি সরকারের হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এই টাকা প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির পকেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
×