ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগ বাহিনীই ভাংচুর করেছে, আগুন দিয়েছে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

ছাত্রলীগ বাহিনীই ভাংচুর করেছে, আগুন দিয়েছে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের জন্য ছাত্রলীগকেই দোষারোপ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যোগসাজশে সরকার পুলিশকে দিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির অফিসের সামনে আগত নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বুধবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মির্জা ফখরুল এমন দোষারোপ করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ। বিএনপি মহাসচিব বলেন, পুরোপুরি বিনা উস্কানিতে মিছিলের মধ্যে ঢুকে পুলিশ হামলা করেছে। একইসঙ্গে শিশুদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন বানচালকারী ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী এসে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করেছে এবং সেখানে আগুন দিয়েছে। আমাদের দলের কোন নেতাকর্মীর হেলমেট পরে আসার কথা নয়। আমাদের নেতাকর্মীরা দু’দিন যাবত উৎসাহ-উদ্দীপনার মাঝে ফরম নিতে এসেছেন, যেটা ছিল পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়ে আবার আগের মতো আমাদের সারাদেশের কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী কাজ শুরু করেছিলাম, সেটা যদি আমরা করতে না পারি এবং নির্বাচনে থাকতে না পারি, তাহলে সেজন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকার দায়ী থাকবে। তিনি অভিযোগ করেন, রাতে যারা বিএনপি অফিস থেকে বেরিয়েছে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন। পাশাপাশি তিনি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ভ‚মিকা রাখার আহŸান জানান। নির্বাচন বাতিল করতে হামলা করেছে সরকারই- বিএনপি ॥ দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশের এলাকা উৎসবমুখর থাকলেও এরপর দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। বুধবার দুপুর ১টায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, অগ্নিসংযোগ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনার পর সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। দুপুরের পর থেকে নেতাকর্মীদের আনাগোনা কমে যায়। এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে নির্বাচন বাতিল করতে সরকারই নয়াপল্টনে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। পরপর ২ দিন নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশের এলাকা নেতাকর্মীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে সরগরম থাকলেও বুধবার তৃতীয় দিনে বিপত্তি ঘটে। বুধবারও সকাল থেকে দপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত ওই এলাকায় ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, অগ্নিসংযোগ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনার পর পুরো এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। সকাল ১০টা থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। এর আগেই বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এক এক করে শোডাউন করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। দুপুর ১২টার দিকে সবচেয়ে বড় শোডাউন করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে তিনি সেখানে আসেন। এ সময় তার অনুসারীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচে গেয়ে ¯েøাগান দিয়ে পুরো এলাকা সরগরম করে তুলেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিতে আসা প্রার্থীরা বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে ওই এলাকায় শোডাউন করে। উল্লেখ্য, ১২ সেপ্টেম্বর প্রথম দিন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ১ হাজার ৩২৬ জন। আর ১৩ নবেম্বর দ্বিতীয় দিনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ১ হাজার ৮৯৬ জন। ৩ ঘণ্টা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ বন্ধ থাকায় তৃতীয় দিন বুধবার রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৪৪৮ জন। এই তিনদিনে মনোনয়পত্র সংগ্রহ করেছেন মোট ৩৬৭০ জন। মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ৩৯১ জন। ১৬ নবেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেয়া যাবে। বুধবার বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে যারা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস (ঢাকা-৮), ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু (লক্ষ্মীপুর-২), সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ (মুন্সীগঞ্জ-১), দলের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম হিলালী (নেত্রকোনা-৩), স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ (কুমিল্লা-২), ছাত্রদলের নেতা আরিফা সুলতানা রুমা (পাবনা-৩), বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেসউয়িং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার (কুমিল্লা-১০) প্রমুখ। পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার পর বেলা ২টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, বিনা উসকানিতে মনোনয়ন ফরম নিতে আসা নেতাকর্মীদের ওপর সরকার পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ দিয়ে এ হামলা চালিয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। আপনারা মৌচাকে ঢিল মেরেছেন কেন? পুলিশ বাহিনীর প্রতি এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনারা ভেবেছেন আমাদের শান্তিপূর্ণ এই মনোনয়ন ফরম বিক্রি করার সময় হামলা চালিয়ে আমাদের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ করবেন সেটি আর হবে না। কোন রক্ত চক্ষুকে জিয়া সৈনিকরা ভয় করে না। এই আক্রমণ সরকারের নির্দেশে দাবি করে রিজভী আমাদের নেতাকর্মীদের গুলি করা হয়েছে, কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, সরকার বিভিন্নভাবে উস্কানি দেবে। আপনারা তাদের ফাঁদে পা দেবেন না। নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতেই বিধিনিষেধ জারি করেছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, এ জন্য ভোটকেন্দ্র থেকে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে সরাসরি স¤প্রচার বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, বর্তমান ইলেকশন কমিশন সরকারের খয়ের খাঁ। সরকারের হুকুমে নানা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। এমনিতে একের পর এক কালাকানুন তৈরি করে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। বিকেল ৫টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল রিজভী বলেন, নয়াপল্টনে সহিংসতার ঘটনায় নির্বাচন কমিশন দায়ী। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর তিন ঘণ্টা মনোনয়নপত্র বিক্রি এবং জমাদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, ইসির প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় পুলিশ নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, আজকের ঘটনায় নির্বাচন কমিশন দায়ী, তারা পুলিশকে ব্যবহার করেছে। এদিকে বিকেলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়ার সময় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টন বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। ১৮ নবেম্বর থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার ॥ ১৮ নবেম্বর থেকে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নেবে বিএনপি। চলবে ২১ নবেম্বর পর্যন্ত। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কৃষক লীগ নেতার বিএনপিতে যোগদান ॥ বিএনপিতে যোগ দিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ফারুক আলম সরকার। বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। এ সময় মির্জা ফখরুল তাকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান। যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, গাইবান্ধা জেলা বিএনপি সভাপতি ডাঃ সৈয়দ ময়নুল হাসান সাদিক, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী টিটুল, ডাঃ জিয়াউল ইসলাম জিয়া প্রমুখ।
×