ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুমধুম জিরো পয়েন্ট দিয়েই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

ঘুমধুম জিরো পয়েন্ট দিয়েই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু আজ

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ নানা প্রতিবন্ধকতা, আপত্তি, অনুরোধসহ বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনার মধ্যে ঘুমধুম জিরো পয়েন্ট দিয়েই আজ থেকে শুরু হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। এ জিরো পয়েন্টটি উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত সংলগ্ন। এ পয়েন্টে এপার ও ওপারের যে সংযোগ সেতুটি রয়েছে সেটির দূরত্ব সর্বোচ্চ ২০ ফুট। এ ২০ ফুট দূরত্বের বিপরীতে এপার ও ওপারের উভয় দেশের প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আজ দুপুরের মধ্যে প্রথম দফায় ৩০ পরিবারের ১৫০ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধিগণ সংযুক্ত থাকবেন। এছাড়া টেকনাফের কেরুনতলী ঘাটও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে প্রত্যাবাসনপূর্ব অবস্থানের জন্য ঘরও নির্মিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে এক ধরনের লুকোচাপা তৎপরতা নানা জিজ্ঞাসার সৃষ্টি করেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো কেন জানি এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে মুখ খুলছে না। তবে প্রত্যাবাসন হবে এটাই জানান দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতা কেবলই বিস্তৃত হচ্ছে। কিছু এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে এখনই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি অনুরোধ অব্যাহত রেখেছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বুধবার দিনভর পর্যায়ক্রমে সরকারী বিভিন্ন প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিকেল ৫টায় নিজ দফতরে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, আজ বৃহস্পতিবার পূর্ব নির্ধারিত দিনক্ষণ অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে। এছাড়া কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ রেজাউল করিমও নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম জিরো পয়েন্ট দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে। এপার এবং ওপারে দুদেশের প্রশাসনিক সকল তৎপরতা সম্পন্ন হয়েছে। এপার থেকে ৩০ পরিবারের দেড়শ’ রোহিঙ্গাকে অভ্যর্থনা জানাতে ওপারে উপস্থিত থাকবেন সে দেশের একজন মন্ত্রী। তবে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম ওই দেশের কোন মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন তা জানাননি। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু সড়ক পথে এ প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে সে লক্ষ্যে যাবতীয় যানবাহন যেমন প্রস্তুত রাখা হয়েছে, তেমনি নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কোন মুহূর্তে যে কোন ঘটনা ঘটেও যেতে পারে। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের তৎপরতাও বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা মুখ খুলতে পারছে না। কারা প্রত্যাবাসিত হতে যাচ্ছে তাদেরও খুঁজে বের করতে সন্ত্রাসীরা তৎপর। যে কারণে প্রশাসন ঠিক কাদের আজ থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আনা হচ্ছে তাদের নাম প্রকাশ করছে না। প্রত্যাবাসিত যারা হবেন তাদের নিরাপত্তার কারণেই এ গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুদেশের সরকারী পর্যায়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ ১৫ নবেম্বর থেকে প্রত্যাবাসন শুরু করার দিন ধার্য রয়েছে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধাপে ধাপে ৪৮৫ পরিবারের ২২৬০ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসিত করা হবে এ মাসের মধ্যেই। সবকিছু ঠিকঠাক মতো এগিয়ে গেলে দুপুর ১২টা নাগাদ প্রথম ব্যাচের ১৫০ জনকে ওপারের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হাতে হস্তান্তর করা হবে। ওপারে এবং এপারে দুদেশের যানবাহন প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তুমব্রু জিরো পয়েন্ট দিয়ে আগেই নির্মিত ছোট একটি ব্রিজ দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হবে। অপরদিকে, আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ নামে কয়েকটি সংগঠনের পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা হুঙ্কার ছেড়েছে কোন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা যাবে না। কেননা তাদের মতে, ওপারে এখনও অনেক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। যদিও মিয়ানমারের পক্ষে বার বার বলা হচ্ছে তারা প্রস্তুত এবং প্রত্যাবাসিতদের নিরাপত্তায় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার নিশ্চিত করে বলেছেন, আজ প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার পর অবশিষ্ট লিস্টেড রোহিঙ্গাও ফিরে যাবে। ফিরে যাওয়ার জন্য দুটি পয়েন্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। একটি হচ্ছে ঘুমধুম জিরো পয়েন্ট, অপরটি হচ্ছে টেকনাফের কেরুনতলী ঘাট। ইতোপূর্বে জানানো হয়েছিল, কেরুনতলী ঘাট দিয়েই প্রত্যাবাসন শুরু হবে। যে কারণে এ ঘাটটি নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে এবং নির্মিত হয়েছে ডরমিটরি। আজ ঘুমধুম জিরো পয়েন্ট দিয়ে শুরু করার পর পরবর্তীতে কেরুনতলী ঘাট দিয়ে নৌপথে প্রত্যাবাসন কাজ চলবে। প্রত্যাবাসন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে এমন খবরে কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছে। পালিয়ে যাওয়ার পথে বুধবার বান্দরবানের রোহাংছড়িতে চার রোহিঙ্গা আটক হয়েছে পুলিশের হাতে। এরা হচ্ছে- জুবায়ের, মোঃ আলম, রশিদউল্লাহ ও মোঃ ইউনুস। এরা সকলে উখিয়ার কুতুপালং ও হাকিমপাড়া ক্যাম্পের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা।
×