ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঐক্যফ্রন্টের ভোটে থাকা না থাকা নির্ভর করছে ইসি আর সরকারের ওপর

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

ঐক্যফ্রন্টের ভোটে থাকা না থাকা নির্ভর করছে ইসি আর সরকারের ওপর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে থাকা না থাকা নির্ভর করছে ইসি ও নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণের ওপর। সংবিধান অনুযায়ী কমিশনের ওপর যে দায়িত্ব রয়েছে, আন্তরিকভাবে সে দায়িত্ব পালনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন ৩ সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তাদের দাবি আলোচনা করে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে বলে তাদের জানান। ঐক্যফ্রন্ট আহ্বায়ক ড. কামালও বলেন, ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচন পেছানোর দাবি ইসি বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া ড. কামাল হোসেন বলেন, কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় আমরা সন্তুষ্ট। বুধবার সন্ধ্যায় সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে তারা এই মন্তব্য করেন। ড. কামাল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাদের নির্বাচনে সাহায্য সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা বলেছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তারা ধৈর্য ধরে আমাদের কথা শুনেছেন। আশা করি তারা সহযোগিতা দেবেন। এ সময় তিনি বুধবার মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঘটনার বিষয়ে ইসির সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল। বলেন, এটি সরকারী বাহিনীর অত্যন্ত উৎসাহী কাজ। ইসি এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে। সংবিধান অনুযায়ী অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনেও সচেষ্ট থাকবে বলে জানিয়েছেন সিইসি। দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে ড. কামাল সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে ইসি। ভোটের বাকি সময়ে একই রকম সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি। ভোটের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি ইসির কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানান তিনি। এদিকে এক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা শেষে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিস্তারিত বলেন, ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ সময় উল্লেখ করেন সিইসির সঙ্গে আলোচনাকালে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি এসেছে। তারা কমিশনকে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে নির্বাচন ফলপ্রসূ হবে না। নির্বাচন কমিশন আমাদের জানিয়েছে, বিষয়টি তারা দেখবেন। এ সময় তিনি দুপুরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সংঘাতের দিকটি দেখিয়ে এর জন্য সরকার ও পুলিশকে দায়ী করেন। বলেন, নির্বাচনী পরিবেশের জন্য এটা একেবারেই শুভ লক্ষণ নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন ৩ সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, সিইসির সঙ্গে সার্বিক নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে কিছু দাবি দাওয়া কমিশনের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। কমিশন তা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ইসির সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচনে ইভিএমের প্রসঙ্গ এসেছে। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনে সময় ইভিএম ব্যবহার না করার দাবি জানানো হয়েছে। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে সিইসি বলেন, এটি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সীমিত পরিসরে ব্যবহার করা হবে। ইভিএম ব্যবহার পুরোপুরি নিরাপদ নয় বোঝাতে পারলে এটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে ইসি বলেছে, নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন থাকবে। তবে প্রতি কেন্দ্রেই সেনা মোতায়েন করা যায় কিনা তা ইসি বিবেচনা করবে। গণভবনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। এটা সরকারী ভবন। এটা প্রধানমন্ত্রী পারেন কি না, সে বিষয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। ইসি বলেছে, তারা এটি খতিয়ে দেখবে। এ সময় তিনি জনপ্রশাসনে রদবদলের বিষয়ে বলেন, বৈঠকে জনপ্রশাসনে রদবদল, বদলি ও গায়েবি মামলা প্রভৃতি বিষয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গায়েবি মামলায় যাতে কোন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে হয়রানি করা না হয়, ইসির কাছে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানানো হয়েছে। ইসি গায়েবি মামলার তালিকা দেয়ার কথা বলেছে। গায়েবি মামলায় আর যাতে কাউকে গ্রেফতার করা না হয়, সে বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। নির্বাচনে এজেন্টদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানানো হয়েছে। নির্বাচনে এজেন্টরা ভয়ভীতির মধ্যে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এজন্য তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে। সিইসি আমাদের বলেছেন এজেন্টদের পুরোপুরি নিরাপত্তা দেয়া হবে। এছাড়াও সরকারের দেয়া তালিকা অনুযায়ী প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। এরা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে পক্ষপাতিত্ব করতে পারেন। এ বিষয়ে ইসি বলেছে, প্রিজাইডিং অফিসার যাদের নিয়োগ করা হয়েছে তাদের তাদের দায়িত্ব দেয়ার আগে তালিকা যাচাই বাছাই করা হবে। নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছে নীতিমালা অনুযায়ী সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। তারা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে ভোটের খবর প্রচারের জন্য। কিন্তু কেন্দ্রের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে না। ইসির সঙ্গে বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান তালুকদার, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, শহীদ উদ্দিন স্বপন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এস এম আকরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোঃ মনসুর আহমদ এবং গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু ও মোকাব্বির খান। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
×