ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন ভণ্ডুলে ফের লাশ ফেলার চক্রান্ত বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচন ভণ্ডুলে ফের লাশ ফেলার চক্রান্ত বিএনপির

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের চেষ্টায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের গায়ে পড়ে পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে সরকারের ওপর বদনামের দায় চাপানোর আশঙ্কা করা গোয়েন্দা সংস্থার সেই মাস্টারপ্ল্যান রিপোর্টই সত্যে পরিণত হলো। পুলিশের ওপর হামলা করা হলে তাদের ওপর দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে শাস্তি দাবি করার মাধ্যমে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দেয়াই হচ্ছে হামলার উদ্দেশ্য। আগামী দিনগুলোতে নির্বাচন সামনে রেখে আরও রক্তক্ষয়ী সহিংস সংঘর্ষ, নাশকতা, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টায় ষড়যন্ত্র করে যাওয়া হবে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গত ৬ নবেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় ‘নির্বাচন বানচালের চেষ্টা’ শিরোনামে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনটিতে যে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে তা নির্বাচন সামনে রেখে সত্য বলে প্রমাণিত হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের পুলিশের ওপর লেলিয়ে দেয়ার মতো সহিংসতায় উস্কানি দেয়া, কর্মীদের মাঝে সংঘর্ষ বাধিয়ে শতাধিক কর্মীর প্রাণের বিনিময়ে সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়ে রক্তক্ষয়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য বিএনপির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা উগ্রপন্থী গোষ্ঠী। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল বিএনপির সমন্বয়হীনতায় ভরাডুবির চিন্তায় নিজ দলের কর্মীদের প্রাণের বিনিময়ে হলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছানোর মাধ্যমে বানচাল করার পরিকল্পনা করছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনটি দেয়ার মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বুধবার নয়া পল্টনের বিএনপির দলীয় অফিসের সামনে পুলিশের ওপর হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপের মাধ্যমে নাশকতা, নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ঘটনাটি ঘটল। ঘটনাটিকে এটা বিএনপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করে বলে রাজনৈতিক নেতারা দাবি করেছেন। পুলিশের ওপর হামলা করার ঘটনাটি যে পূর্ব পরিকল্পিত তার প্রমাণ দিচ্ছে বিএনপি দলীয় অফিসে আগে থেকে রাখা চিকিৎক দল। বুধবার নয়া পল্টনে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলার মাধ্যমে রাজনৈতিক সহিংসতা-সংঘর্ষের কারণে বিএনপি দলীয় যারা আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে তাদের চিকিৎসার জন্য আগে থেকেই বিএনপি অফিসে প্রস্তুত রাখা হয় চিকিৎসক দল। পল্টনের বিএনপির অফিসে আগে থেকেই চিকিৎসক দল প্রস্তুত রাখার মধ্য দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা যে পুলিশের ওপর হামলা করবে তা আগে থেকেই দলীয় অফিসে চিকিৎসক দল রাখার মধ্য দিয়ে তারাই প্রমাণ দিয়েছে, এটা পূর্বপরিকল্পিত, প্রাথমিক তদন্তে যার সত্যতা পেয়েছে বলে পুলিশের দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ডাক দিয়ে জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে ব্যাপক বিএনপি জনসমাগমের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগের সেই ৬ নবেম্বরেই পুলিশের ওপর হামলা করে সরকারের ওপর বদনাম চাপিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয় যা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে কর্তব্যরত পুলিশ দল অনেক দূরে অবস্থান করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার কারণে সেই সময়ে নির্বাচন বানচালের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে প্রতিযোগিতামূলক অংশ গ্রহণ, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রার্থীদের কাছে ফরম বিক্রি করে নির্বাচনের যে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তা নস্যাৎ করতেই পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। গত ৬ নবেম্বরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটিয়ে নিজেরাই নিজেদের লাশ ফেলার যে ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়েছে তা নির্বাচন সামনে রেখে ফের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি মিডিয়া মাসুদুর রহমান বলেন, বুধবার কোন ধরনের উস্কানি ছাড়াই পুলিশের ওপর হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গাড়ি ভাংচুর, গাড়িতে আগুন দেয়াসহ নৈরাজ্যকর ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। কর্তব্যরত পুলিশ ধৈর্যসহকারে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে পুলিশ দল তাদের আত্মরক্ষার্থে লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপ করেছে। সরকার যখন দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেয়ার চেষ্টা করছে এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্পন্ন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে তখন এই ধরনের সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাক্সিক্ষত। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে নির্বাচন সামনে রেখে লাশ ফেলার জন্য পলিটিক্যাল কিলিং ঘটানোর আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐক্যফ্রন্টে যোগদানকারী অন্যতম দল বিএনপিকে বাঁচাতে নির্বাচন বানচাল করতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার উদ্দেশে নানা ধরনের ছক কষতে শুরু করেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পর্দার অন্তরালে থাকা একটি অদৃশ্য মহল। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সরকারের ওপর দায়দায়িত্ব বর্তানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে দেশে-বিদেশে থাকা বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীর দোসর ও উগ্রপন্থী গোষ্ঠী। এর আগে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ফোনালাপে প্রয়োজনে ২/৩টি লাশ ফেলতে হবে, বিশেষ বাহিনীর উর্ধতনদের সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী সেই অডিও টেপটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেয়া এই ধরনের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচালের চেষ্টার মতোই সহিংস কর্মসূচীর ঘোষণা দিতে চায় বিএনপি। সহিংস কর্মসূচীর ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করার প্রস্তুতি নিতে গত ৪ নবেম্বর সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা গত ৬ নবেম্বরের সমাবেশে সহিংসতা উস্কে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য একাধিক কৌশল সমন্ধে আলোচনা করেন। আলোচনার এক পর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা জনসভায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে পুলিশের সঙ্গে হট্টগোল বাধানোর পরিকল্পনার পরামর্শ দেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতার বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির নেতারা বলেছিলেন, মিশন সফল হলে পুলিশের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে এবং পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে যাবে। এতে পুলিশের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারবে বিএনপি। কারণ বিএনপির বিগত সব আন্দোলন-সংগ্রাম প- করে দিয়েছে পুলিশ। সুতরাং পুলিশকে শায়েস্তা করতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার পক্ষে মতামত দেন বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওই নেতা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতার বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক নেতার ঘনিষ্ঠ মহল বলেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে দলীয় সমন্বয়হীনতায় ভরাডুবির শঙ্কায় সমাবেশের দিন প্রয়োজনে দলীয় কর্মীদের মাঝে কৌশলে বিবাদ বাধিয়ে লাশ ফেলে দেয়ার পক্ষে মতামত দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা। লাশের রাজনীতি করে দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে পারলে সরকার অন্তত নির্বাচন পিছিয়ে দিতে বাধ্য হবে। নির্বাচন পিছিয়ে গেলে বিএনপি সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। কারণ বিএনপির বর্তমান অবস্থা ভাল না। এ অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির ভরাডুবি হবে তা প্রায় নিশ্চিত। তাই খালেদা জিয়ার বিএনপিকে বাঁচাতে হলে দলীয় কর্মীদের কুরবানি দেয়ার বিকল্প নেই। সহিংসতা ও লাশের রাজনীতিই বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনবে। পলিটিক্যাল কিলিংয়ের মিশন সফল হলে বিএনপি বাঁচবে বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এই ধরনের মতামত দেন বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
×