ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাল্টে গেছে বগুড়ার হিসাব-নিকাশ, চাপে দুই জোটই

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

পাল্টে গেছে বগুড়ার হিসাব-নিকাশ, চাপে দুই জোটই

সমুদ্র হক ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্যাকেজ অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের পর বগুড়ার নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আশা নিরাশার দোলাচালের গতির সঙ্গে মানসিক চাপ আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের যতটা ফুরফুরে ও খোশ মেজাজে থাকার কথা তাও থাকতে পারছেন না। এর একটি কারণ প্রতিটি পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের হার। যা গড়ে প্রায় ১ : ১৩। একই অবস্থা বিএনপিরও। তাদেরও আসন প্রতি মনোনয়ন প্রত্যাশীর হার একেবারে কম নয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই আরও একটি মনস্তাত্বিক চাপ-জোটের শরিক নিয়ে। মূল দলের প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন! জোটের কোন দলের প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন! এ দুই প্রশ্ন এখন আলোচনায়। এর হিসাব-নিকাশটিও বেশ জটিল। প্রার্থীর নাম ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাশীরা আছেন টেনশন ও আতঙ্কের যোগফলে। এতদিন প্রার্থীর নাম নিয়ে ছিল নানামুখী আলোচনা। এখন যোগ হয়েছে প্রতীক কী হবে! বগুড়ার প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষ দুই প্রতীককেই (সহজ কথায় মার্কা) গুরুত্ব দেয়। একটি নৌকা আরেকটি ধানের শীষ। জাতীয় পার্টি (জাপা) ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) আওয়ামী লীগের ১৪ দলের জোটে থাকায় তাদের প্রতীক (লাঙ্গল ও মশাল) হিসাবের মধ্যে রাখে না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন না করলে তাদের ভোট পাওয়া বেশ কঠিন। বড় প্রমাণ দশম সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। বগুড়ার সাতটি আসনে দশম নির্বাচনের হিসাব ছিল এ রকম : বগুড়া-২, ৩, ৬, ৭ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাপার প্রার্থীরা। বগুড়া-৪ আসনে নির্বাচিত হন জাসদের প্রার্থী। বগুড়া-১ ও ৫ আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান ও হাবিবুর রহমান। তারা নবম সাধারণ নির্বাচনেও বিজয়ী ছিলেন। আওয়ামী লীগের জোটের শরিক দলের প্রার্থীগণ এবারও আশায় আছেন যদি নৌকার মাঝি হয়ে হাল ধরে তীরে ওঠা যায়। এবার সেই গুড়েবালি পড়তে পারে, এমন ভাবনাও পেয়ে বসেছে তাদের মধ্যে। জাপা ও জাসদ পড়েছে মহা ফাঁপরে। বিএনপি নির্বাচনে আসায় তাদের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে। সকল দলের অংশগ্রহণের এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগও সঠিক পথেই চলবে। দশম নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েও জোটের কারণে ছাড় দিতে হয়েছে তারা কি ফের ছাড় দেবেন! এর উত্তর ‘না’। বগুড়ার প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা বেশি। তারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ইতিহাসের পাতায় নির্বাচনমুখী দল। তাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আশা করে আছেন এবার জোটকে আর ছাড় দিতে হবে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই মাঠে থাকলে বগুড়ার প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপির। এদিকে বিএনপি আছে অন্য ভাবনায়। তাদের বড় সম্বল প্রতীক ধানের শীষ ও খালেদা জিয়া। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়ার বাড়ি বগুড়ার গাবতলীর গ্রামে হওয়ায় সাধারণের ধারণা বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি। নবম সাধারণ নির্বাচনে বগুড়া-১ ও ৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীগণ বিজয়ী হয়ে কথিত ঘাঁটি ভেঙ্গে দিয়েছেন। দশম সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার রাজনৈতিক বড় ভুলের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। আসন্ন একাদশ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে তাদের ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্যাকেজে। জোটের এই প্যাকেজের কোন প্রার্থী বগুড়ার কোন আসন চাইতেই পারে। এখনই গুঞ্জন উঠেছে প্যাকেজের নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে ধানের শীষের প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এই গুঞ্জনের সঙ্গে যোগ হয়েছে, বিএনপির একান্ত কাছের শরিক জামায়াতের কি হবে! জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক (দাঁড়িপাল্লা) বাতিল হওয়ার পর তারা তাকিয়ে আছে বিএনপির দিকে। আশায় আছে বগুড়ার দুই একটি আসনের। তারা এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিএনপির সমর্থন চাইতে পারে। তবে দশম নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় পাঁচ বছর ধরে রাজনৈতিক খরার ফেরে থাকা বিএনপি বগুড়ার একটি আসন (বগুড়া-২ শিবগঞ্জ) ছাড়া অন্য কোন আসনে ছাড় দেবে বলে মনে হয় না, এমনটি মনে করেন বিএনপির একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বগুড়া-২ আসন ছাড় দেয়ার বড় কারণ হলো- সেখানে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী নিয়ে জটিল দ্বন্দ্বের সমীকরণ আছে। বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে পঞ্চম (১৯৯১) থেকে নবম (২০০৮) সাধারণ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া বিজয়ী হয়েছেন। পঞ্চম সাধারণ নির্বাচন থেকে অষ্টম সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত বগুড়ার প্রতিটি আসন পায় বিএনপি। ব্যত্যয় ঘটে নবম সাধারণ নির্বাচন। সেখানে বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে পাঁচটি পায় বিএনপি। দশম সাধারণ নির্বাচনের অঙ্কের সঙ্গে আসন্ন একাদশ সাধারণ নির্বাচনের অঙ্কের হিসাব-নিকাশ এক হবে না। একাদশ সাধারণ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। বগুড়ার প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সব দলের অংশগ্রহণের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপি প্রার্থীর।
×