ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগ;###;দুদকে হাজিরা দেয়া পরিচালকের পুনঃনিয়োগ ব্যাংকিং খাতে সঙ্কট আরও বাড়াবে ॥ বিশেষজ্ঞদের ভিমত

ঋণ কেলেঙ্কারির হোতারা আবারও ফিরতে চায়

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

ঋণ কেলেঙ্কারির হোতারা আবারও ফিরতে চায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত কয়েক বছরে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, এ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট ও মুন গ্রুপের মতো বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় আলোচনায় ছিল দেশের আর্থিক খাত। এর অধিকাংশই কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্ধন যুগিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া পরিচালকরা। যাদের বিরুদ্ধে ঋণ অনুমোদনের জন্য মোটা অঙ্কের কমিশন নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম থাকলেও নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে তা পাশ করিয়ে নেন। যাদের অনেকেই বিভিন্ন ঘটনায় নিয়মিত দুদকে হাজিরা দিয়েছেন। এখনও দিচ্ছেন। সেসব পরিচালকদের আবার নিয়োগ দিতে তদবির করছে একটি মহল। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০০৯ সালের ১২ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপনে জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়, অর্থনীতিবিদ, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ, আর্থিক বাজার, মুদ্রানীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তি, সাবেক ব্যাংকার, আইনজ্ঞ, ব্যবসায়ী এবং কমপক্ষে একজন নারী পেশাজীবীকে ব্যাংকের পর্ষদে সদস্য করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, সরকারী ব্যাংকগুলোর দুর্দশার জন্য রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালকরাই দায়ী। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সম্প্রতি সরকার দলীয় নেতাদের পরিবর্তে অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও সাবেক ব্যাংকারদের নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়। অর্থমন্ত্রী বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে সম্প্রতি বলেছেন, ব্যাংকগুলোর পর্ষদে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক নিয়োগ দিয়েছি। এবার নিয়োগ দিব সাবেক আমলা ও সাবেক ব্যাংকারদের। অর্থমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী যখন সরকারী ব্যাংকগুলো সাবেক আমলা ও ব্যাংকারদের দক্ষ পরিচালনায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ঠিক তখনই মন্ত্রণালয় ও একটি মহল আবারও রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালক নিয়োগ দেয়ার জন্য তদবির চালাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক বিতর্কিত পরিচালক শাহজাদা মহিউদ্দিনকে আবারও পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল। অগ্রণী ব্যাংকের ২৭০ কোটি টাকার আলোচিত মুন গ্রুপ ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সম্পৃক্তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৬ সালের জুন মাসে দুদকে হাজিরা দেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কমিশনের মাধ্যমে ঋণ প্রস্তাব পাশ করার অনেক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংক পাড়ায় তিনি বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট বলেও পরিচিত। তার বিরুদ্ধে এসএ গ্রুপ, নূরজাহান গ্রুপসহ, দাদা সয়াবিন তৈল ও স্টার সিরামিকসহ বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শাহজাদা মহিউদ্দিন ২০০৯-১১ সালে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। ওই সময়ে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরের খাতুনগঞ্জের ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা শামসুল ইসলামের মালিকানাধীন দাদা সয়াবিন তেল এর অনুকূলে প্রায় ২৬৪ কোটি, স্টার সিমেন্টকে প্রায় ২০০ কোটি এবং নূরজাহান গ্রুপকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ঋণ পাইয়ে দিতে অনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করেন। বর্তমানে নূরজাহান গ্রুপ খেলাটি হয়ে প্রায় দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি হোটেল আগ্রাবাদ, ইন্ট্রাকো গ্রুপসহ অনেক প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিকভাবে ঋণ পাইয়ে দিয়েছেন। মুন গ্রুপের মতো বড় কেলেঙ্কারিতে জড়িত থেকে দুদকে হাজিরা দেয়া পরিচালকদের পুনঃনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর ইব্রাহীম খালেদ বলেন, আমি বুঝি না সরকার কিভাবে মুন গ্রুপের মতো একটি আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারি থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের পরিচালককে ব্যাংকে পুনরায় নিয়োগ দেয়ার চিন্তা করেন। তিনি আরও বলেন, দুদকে হাজিরা দেয়া পরিচালকের পুনঃনিয়োগ ব্যাংকিং খাতে সঙ্কট আরও বাড়াবে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের দুই বিতর্কিত পরিচালক আবদুল হক ও মানিক চন্দ্র দে কে অপসারণ করা হয়।
×