ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বীজ প্রত্যয়ন কার্যক্রম গতিশীল করার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

বীজ প্রত্যয়ন কার্যক্রম গতিশীল করার উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভাল ফসল পেতে হলে ভাল বীজ প্রয়োজন। আর ভাল বীজের জন্য প্রয়োজন মানসম্পন্ন প্রত্যয়ন। তাই বীজ প্রত্যয়ন কার্যক্রম গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকার মনে করে, বীজের মান যাচাই শতকরা ২৫ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ ভাগে উন্নীত করে ফসলের উৎপাদন ও বীজের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এজন্য ৭৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বীজ প্রত্যয়ন কার্যক্রম জোরদারকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয়ের পুরোটাই সকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি (এসসিএ) বাস্তবায়ন করবে। ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে দেশের ৮ বিভাগের আওতায় থাকা ৬৪টি জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশে বীজের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৭৪ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৪ সালে কাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয়, ৬৪টি জেলা কার্যালয় এবং ৭টি আঞ্চলিক বীজ পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির জনবল কাঠামো ২২৩ থেকে বাড়িয়ে ৩৪৬ এবং পরবর্তীতে আরও বাড়িয়ে ৫৬৯ নির্ধারণ করা হয়। ‘বীজ প্রত্যয়ন কার্যক্রম জোরদারকরণ’ প্রকল্পের আওতায় এসব নতুন কার্যালয় ও বীজ পরীক্ষাগারের অবকাঠামো ও কারিগরি উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া সংস্থাটির জনবল নিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে বীজ প্রযুক্তি, প্রত্যয়ন পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়টিও প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল মনে করে দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর জন্য প্রয়োজন মানসম্পন্ন প্রত্যয়িত বীজ। প্রত্যয়িত বীজের মাধ্যমেই কম জমিতে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের কৃষিক্ষেত্রে উন্নতমানের বীজের ব্যবহার মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ। কৃষকরা ব্যক্তিগত ও বেসরকারী উৎস থেকে সংগৃহীত নিম্নমানের বীজ দিয়ে কৃষি কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বীজ প্রত্যয়ন কার্যক্রম শক্তিশালী হবে। এতে বীজের মান বাড়বে। তাই ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়বে। দেশে টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন এবং কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে এই প্রকল্প ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও সুনির্দিষ্টভাবে অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর উপযোগী অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির সক্ষমতা বাড়বে। প্রকল্প পরিকল্পনা সম্পর্কে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোর উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে সদর দফতরে একটি অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে। একটি ফার্ম অফিস ভবন ও একটি কন্ট্রোল খামারের উন্নয়ন করা হবে। ১২টি অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, বগুড়া, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং ময়মনসিংহ জেলায়। ২৬টি মিনিবীজ পরীক্ষাগারকে সরবরাহ করা হবে প্রয়োজনীয় কারিগরি যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র। বীজ উৎপাদক ও ব্যবহারকারী কৃষক, বীজ ডিলার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ২৫৪৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়া ২৬ কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং ২২টি ওয়ার্কসপ, সেমিনার বা কনফারেন্সের আয়োজন করা হবে। সদর দফতর, ৭টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও ১২টি জেলা কার্যালয়ে ২০টি প্রশিক্ষণ কক্ষ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় আঞ্চলিক ও জেলা কার্যালয়গুলো সুসজ্জিত করা হবে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তাফা কামাল জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ভাল বীজের মাধ্যমে ভাল শস্য প্রাপ্তির মাধ্যমে ভাল খাদ্য নিশ্চিত হবে। ফলে দেশে টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন এবং কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
×