ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কার ক্ষমতার কেন্দ্রে তৈরি হলো শূন্যতা

পার্লামেন্টে রাজাপাকসের বিরুদ্ধে অনাস্থা

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

পার্লামেন্টে রাজাপাকসের বিরুদ্ধে অনাস্থা

শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট বুধবার সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসেকে পদচ্যুত করেছে। প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা গত মাসের শেষদিকে রনিল বিক্রমাসিংহেকে সরিয়ে তার জায়গায় সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন। এর পর প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবলে তিনি পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। বুধবার দেশটির সুপ্রীমকোর্ট তার সে ঘোষণা অবৈধ বলে স্থগিতাদেশ দেয়। এএফপি ও বিবিসি। সুপ্রীমকোর্টের রায়ে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করার আদেশটি বাতিল হওয়ার পর বুধবার পার্লামেন্টে রাজাপাকসের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়। সিরিসেনা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর ওপর সমর্থন তুলে নিয়ে এককালের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাজাপাকসেকে ওই পদে বসান। পার্লামেন্টে প্রয়োজনীয় সমর্থন পাওয়া যাবে না অনুমান করে তিনি পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে ৫ জানুয়ারি নতুন নির্বাচনের তারিখ দেন। পার্লামেন্ট বিলুপ্তি ঘোষণার বিরুদ্ধে ১০টি বিরোধী রাজনৈতিক দল আদালতে গেলে মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্ট প্রেসিডেন্টের ডিক্রীতে স্থগিতাদেশ দেয়। এর পর বুধবার পার্লামেন্ট অধিবেশন বসলে সেখানে রাজাপাকসের বিতর্কিত নিয়োগ নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটি হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে রাজপাকসে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারালেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) প্রধান রনিল বিক্রমাসিংহে ওই পদে পুনর্বহাল হননি। ফলে ক্ষমতার কেন্দ্রে একটি শূন্যতা তৈরি হলো। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বেছে নেয়ার ক্ষমতা সিরিসেনার হাতেই থাকছে। রাজপাকসে ২০০৫ থেকে ’১৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এ সময় তার মন্ত্রিসভায় ছিলেন সিরিসেনা। পরে তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে সিরিসেনা রাজাপাকসের মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে এসে তার বিরুদ্ধেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রেসিডেন্ট হন। বিক্রমাসিংহে তখন তার সহযোগী ছিলেন। একই বছর অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ইউএনপি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দিল্লীর সঙ্গে ইউএনপির ঘনিষ্ঠতা এবং সিরিসেনাকে হত্যায় ‘ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ’ নিয়ে দুই দলের ঘনিষ্ঠতায় ছেদ পড়ে। তার পরই এক সময়ের মিত্র রাজাপাকসের দিকে ঝুঁকে পড়েন সিরিসেনা। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রেষারেষির এক পর্যায়ে ২৬ অক্টোবর সিরিসেনা বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করেন। তীব্রতর হয় রাজনৈতিক সঙ্কট। রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ানো হলেও ক্ষমতা ছাড়েননি বিক্রমাসিংহে। নিজেকে ‘বৈধ প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করে সিরিসেনার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। শেষ পর্যন্ত আইনী লড়াইয়ে তিনি জিতলেন। প্রায় তিন সপ্তাহ পর তিনি টেম্পল ট্রির বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পার্লামেন্ট সদস্যরা রাজাপাকসেকে ক্ষমতাচ্যুত করায় তিনি তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি আবারও দাবি করেন, সিরিসেনার তাকে উৎখাত করার কাজটি ছিল ‘অবৈধ’। এদিকে রাজাপাকসের মন্ত্রিসভার কয়েক সদস্য পার্লামেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে স্পীকারের সমালোচনা করে বলেছেন তিনি পার্লামেন্টারি নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম এ্যালায়েন্সের (ইউপিএফএ) পার্লামেন্টারি দলের প্রধান দিনেশ গুনবর্ধনে বলেন, স্পীকার কারু জয়সুরিয়ার অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট আহ্বান করার কোন অধিকার নেই। জয়সুরিয়া বলেছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের প্রতি অধিকাংশ পার্লামেন্ট সদস্য সমর্থন দিয়েছেন। সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে কলম্বোর রাস্তায় এদিন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক ছিলেন। রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য প্রশাসনের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ দেশটির বিশাল বৈদেশিক ঋণ রয়েছে। রাজনৈতিক সঙ্কট অব্যাহত থাকলে দাতাদের মধ্যে দেশটির ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হবে।
×