ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানিস্তান ॥ বুলেটের মধ্যে ভোটাভুটি

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

আফগানিস্তান ॥ বুলেটের মধ্যে ভোটাভুটি

তিন বছর বিলম্বিত থাকার পর আফগানিস্তানে প্রথম সংগঠিত সংসদীয় নির্বাচন গত ২০ ও ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনের আয়োজন আফগানরা নিজেরাই করেছে। নির্বাচন ঘটিত হাঙ্গামা ও সহিংসতায় ভোটের আগে-পিছে প্রায় ১৭০ ব্যক্তি হতাহত হয়েছে। এর মধ্যে কান্দাহারের পুলিশ প্রধান জেনারেল আব্দুল রাজ্জাক অসংখ্যবার আততায়ীর হাতে প্রাণ রক্ষা পাওয়ার পর এবার আর বাঁচতে পারেননি। ১৮ অক্টোবর তিনি নিহত হন। দু’দিনব্যাপী ভোটাভুটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। অনেক ভোটকেন্দ্র কারিগরি ত্রুটি ও স্টাফ স্বল্পতার কারণে কয়েক ঘণ্টা পরে খোলে কিংবা আদৌ খোলেইনি। সর্বশেষ সহিংসতায় এক আত্মঘাতী বোমাবাজ কাবুলের একটি ভোট কেন্দ্রের ভেতর বিস্ফোরণ ঘটায়। তাতে অন্তত ১৫ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়। বিস্ফোরণ কারা ঘটিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা না জানা গেলেও তালেবানরা এর আগে বলেছিল যে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে ভুয়া নির্বাচন বানচাল করার জন্য তারা ৩ শতাধিক হামলা চালিয়েছে। তিন বছরের মধ্যে দু’বার স্থগিত থাকার পর এই নির্বাচন হলো। নির্বাচনপূর্ব সহিংসতায় ১০ জন প্রার্থী নিহত হয়। অন্যান্য হতাহতের ঘটনা তো অনেক বেশিÑ যদিও সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকা মিডিয়া আউটলেটগুলো নির্বাচনী সহিংসতাকে খাটো করে দেখার প্রয়াস পেয়েছে। আর যাই হোক এই নির্বাচন থেকে জনমনে এমন আস্থা সঞ্চার হয়নি যে আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে। এর কারণ প্রথমত জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশেরও কম ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত এবং সেই নিবন্ধিত ভোটারদের অর্ধেকেরও কম ভোট দিতে পেরেছে। যারা পেরেছে তাদের ভোটদানের ব্যাপারটা সহজে হয়নি। বরং ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এক-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্র খোলেইনি। গজনী প্রদেশ ও কান্দাহারে আদৌ ভোটই হয়নি। গজনী অংশ বিদ্রোহীদের দখলে। আর কান্দাহারে তো হত্যা ও পাল্টা হত্যা লেগেই আছে। সহিংসতার একমাত্র উৎস যে তালেবানরা তা নয়। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাকতিয়া স্থানীয় মাস্তান ও শক্তিধররা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পিটিয়ে ব্যালট বাক্স নিয়ে গেছে। প্রায় ৬০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে বায়োমেট্রিক মেশিন বসানোর ফলে অনেক নির্বাচন কর্মী ও ভোটার মহা ঝামেলায় পড়ে যায়। আফগান সরকারের একটা গণতান্ত্রিক অনুমোদন লাভের প্রয়োজনীয়তা একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কারণ আমেরিকাসহ অনেক দেশ আফগানিস্তানকে অরাজকতাপূর্ণ, দুর্বল ও অকার্যকর রাষ্ট্র বলে মনে করে যে দেশটি জনগণকে নিরাপত্তা প্রদানে নিতান্তই অসমর্থ। সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা এবং প্রায় একই পরিমাণ এলাকা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চলছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী মার্কিন বাহিনী ২০০১ সালে তালেবান সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেয়ার পর যে কোন সময়ের তুলনায় তালেবানরা অধিকতর হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এ বছরের প্রথম ৯ মাসে প্রায় ২৭০০ সিভিলিয়ান নিহত হয়েছে। এত বেশি সিভিলিয়ান ২০১৪ সালের পর থেকে প্রাণ হারায়নি। সশস্ত্র বাহিনীর অবস্থাও তেমন ভাল নয়। আফগান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমেরিকা আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর পেছনে ৭ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি ঢেলেছে। তার পরও ৩০ থেকে ৪০ জন আফগান সৈন্য ও পুলিশ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। ২০১৬ সালে সৈনিক মারা গিয়েছিল ২২ জন। আর শুধু ২০১৭ সালে ১০ হাজার নিহত হয়। যুদ্ধ চলতে থাকায় শান্তি আলোচনার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। তবে আলোচনার ব্যাপারটা তো চাট্টিখানি কথা নয়। গত জুন মাসে সরকার ও তালেবানদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এ সময় সর্বস্তরের তালেবানদের শান্তিপূর্ণ ঢল নেমে গিয়েছিল নগরীগুলোতে। তারা স্বজাতি আফগানদের সঙ্গে আনন্দে মিলেমিশে রুটি ভাগ করে খেয়েছিল। একটা উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল যার পরিণতিতে উল্লেখযোগ্য আর কোন আলোচনা হয়নি। তালেবানরা আফগান কর্তৃপক্ষকে আমেরিকার তল্পিবাহক বলে মনে করে। তারা বরং আমেরিকানদের সঙ্গেই সরাসরি কথা বলা বাঞ্ছনীয় মনে করে। দু’পক্ষের মধ্যে অবশ্য ক’বছর ধরে নানা ছদ্মাবরণে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সে আলোচনায় কার্যত কোন অগ্রগতি হয়নি। চলমান ডেস্ক সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×