ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু

ক্যালিফোর্নিয়া ধনী-গরিবের মিশেল

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

ক্যালিফোর্নিয়া ধনী-গরিবের মিশেল

আমেরিকার সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী অঙ্গরাজ্যের অন্যতম হলো ক্যালিফোর্নিয়া। অবাক হওয়ার ব্যাপার হলো এখানে দারিদ্র্যের হার আমেকিরার মধ্যে সব থেকে বেশি। রাজ্যের বুভুক্ষু মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ। লস এ্যাঞ্জেলেস আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক মাসে ৩ লাখ লোককে আহার সরবরাহ করে। ব্যাংকটি দেখতে সুপার মার্কেট চেইনের পণ্যাগারের মতো। সেখানে এ্যাপার্টমেন্ট সাইজের রিফ্রেজারিটর ও ফর্ক লিফট ট্রাক লাখ লাখ পাউন্ড গ্রসারি প্রসেস করছে। প্রতি ঘণ্টায় ডজনখানেকের মতো স্যুপ কিচেন গৃহহীনদের জন্য স্যান্ডউইচ বা তাদের পরিবারদের জন্য গ্রসারি সংগ্রহ করতে আসে। এমন স্যুপ কিচেনের সংখ্যা প্রায় ৬৫০টি। ইন্টার ফেইথ ফুড সেন্টার নামে একটি খাদ্য ব্যাংক আছে সান্তা ফি স্প্রিংসে। সেখানে কয়েক ডজন লোক লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকে। এদের একাংশ গৃহহীন/নগরকেন্দ্রের পেছনে একটি শুকিয়ে যাওয়া নদীর বুকে থাকে। বেশিরভাগই ন্যূনতম কিংবা বাধাধরা মজুরিতে চলে। আমেরিকার সবচেয়ে দরিদ্র অঙ্গরাজ্য কোনটি জিজ্ঞেস করা হলে বেশিরভাগ আমেরিকান আলাবামা কিংবা মিসিসিপির কথা বলবে। কারণ রাজ্য দুটির গড় আয় কম এবং আফ্রিকান-আমেরিকান দরিদ্র লোকেরা সেখানে কেন্দ্রীভূত। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হলো যে রাজ্যে গরিবের সংখ্যা সব থেকে বেশি সেটি ক্যালিফোর্নিয়া। সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যে গরিবের সংখ্যাও সর্বাধিকÑ ৭৪ লাখ। দারিদ্র্যের অনেক মাপকাঠি আছে। বেশিরভাগ সমাজবিজ্ঞানী যে মাপকাঠি মানেন সে অনুযায়ী ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ১৯ শতাংশ মানুষ-গরিব ছিল। দেশে দারিদ্র্যের এটাই সর্বোচ্চ হার। ক্যালিফোর্নিয়া পভার্টি মেজার (সিপিএম) নামে অন্য এক মানদ- অনুযায়ী ২০১৬ সালে ১৯.৪ শতাংশ ক্যালিফোর্নিয়াবাসীর মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর মতো পর্যাপ্ত সম্পদ ছিল না। ২০১১ সালে ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। ক্যালিফোর্নিয়ার দারিদ্র্যের মানচিত্র বদলে গেছে। দারিদ্র্য আগে অভ্যন্তরভাগে, কৃষি অঞ্চলগুলোতে কেন্দ্রীভূত ছিল যেখানে সস্তায় মৌসুমী শ্রমিক প্রচুর পাওয়া যেত। এখন দরিদ্রতম কাউন্টিগুলো রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে যার মধ্যে লস এ্যাঞ্জেলেস ও অরেঞ্জ কাউন্টিও রয়েছে। বেশিরভাগ গরিবের চাকরি আছে। ক্যালিফোর্নিয়া পভার্টি মেজার বা সিপিএমের দারিদ্র্য রেখার নিচে বাস করে এমন ৮০ শতাংশ গৃহস্থালির কাজ করে। ল্যাটিনোরা গড় দারিদ্র্যের তুলনায় কিছু বেশি গরিব। দারিদ্র্যের আরেক ভাল নির্দেশক হলো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার অভাব। শুধুমাত্র হাই স্কুল ডিপ্লোমা আছে এমন নারী-পুরুষের ৩৫ শতাংশ গরিব। দুঃখজনক ব্যাপার হলো ৪৫ শতাংশ ছেলেমেয়ে এমন পরিবারে বাস করে যারা দরিদ্র বা প্রায় দরিদ্র (অর্থাৎ দারিদ্র্যে রেখার ১৫০ শতাংশের নিচে বাস করে)। ১৮ বছর বয়সে পৌঁছলে ক্যালিফোর্নিয়ার এসব ছেলেমেয়ের অর্ধেক ফুটস্ট্যাম্প বা ফুট ব্যাংকে কাজে লাগাবে। তবে ক্যালিফোর্নিয়া আমেরিকার দরিদ্রতম রাজ্যই শুধু নয়, এটি দেশের সবচেয়ে ধনী রাজ্যগুলোরও অন্যতম। সেখানে মধ্যবিত্ত পরিবারের আয় ২০১৬ সালে ছিল ১১৫০০ ডলার যা জাতীয় গড়ের ঊর্ধ্বে। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে সেখানে এত দারিদ্র্য কেন? এই দারিদ্র্য যে অর্থনীতির নিম্নগামিতা বা কাজের অভাবের জন্য হয়েছে তা নয়। রাজ্যের জিডিপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুই দশকে প্রকৃত হিসাবে ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে গিয়ে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। কর্মে নিয়োজিত লোকের সংখ্যা ২০১১ সাল থেকে প্রায় অবিচ্ছিন্নভাবে বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৪.১ শতাংশ। কিন্তু প্রবৃদ্ধি থেকে অর্জিত সুফল অসমভাবে বণ্টিত হয়েছে। দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর প্রকৃত হিসেবে আয় ১৯৬৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে হ্রাস পেয়েছে। পরিবারগুলোর আয় অনেক বেড়েছে। অথচ গরিব পরিবারগুলোর আয় সে হিসেবে তো বাড়েনি বরং প্রকৃত অর্থে তা হ্রাস পেয়েছে। দুটো কারণে ক্যালিয়ার্নিয়ায় আয়ের অসমতা বেড়েছে। বড় একটা হলো ১৯৮০ এর দশক থেকে ২০১০ এর দশক পর্যন্ত সময়ের মধ্যে লাখ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসীর আগমন ঘটেছে এই রাজ্যে। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই অভিবাসীদের কারণে অর্থনীতির ভাল হয়েছে, কর্মসংস্থানের জন্য ভাল হয়েছে তবে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য খারাপ হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার উচ্চ প্রবৃদ্ধি, পূর্ণ কর্মসংস্থান অথচ গরিবের সংখ্যাধিক্য এই চিত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×