ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচন ॥ আসল জয় কার

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১৪ নভেম্বর ২০১৮

মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচন ॥ আসল জয় কার

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য মেয়াদি নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদে জয় পেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি কিন্তু নির্বাচনে জিতলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প। এমন মন্তব্য করা হয়েছে ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায়। তাতে বলা হয় যে সিনেটে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উচ্চ পরিষদে দলটির নিয়ন্ত্রণ প্রসারিত ও পাকাপোক্ত হলো এবং সেই সঙ্গে দলের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণও কঠোরতর হলো। তবে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কিছু কিছু ইস্যুতে বেশ চাপে রাখতে পারবেন। এই মধ্য মেয়াদি নির্বাচন এবং এর ফলাফল দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে পরিবর্তন এনেছে এবং মুয়েলার তদন্ত, সীমান্ত প্রাচীর, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য সেবা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ইস্যুর ওপর প্রভাব ফেলবে। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ডেমোক্র্যাটরা সম্ভবত ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে গোয়েন্দা কমিটির তদন্ত নতুন করে শুরু করবে। এর আগে কমিটির বিদায়ী রিপাবলিকান চেয়ারম্যান ও ট্রাম্পের মিত্র ডেভিন নিউনস ডেমোক্র্যাটদের এই উদ্যোগে বাধা দিয়ে শেষ পর্যন্ত তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে তার জায়গায় ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে যার আসার সম্ভাবনা আছে সেই এডাম শিফ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি নতুন করে তদন্ত শুরু করবেন। শুধু তাই নয়, ‘রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যবসায় যোগাযোগ নিয়েও ঘাঁটাঘাঁটি করবেন। ওদিকে সিনেটে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রসারিত হওয়ায় ট্রাম্প এ্যাটর্নি জেনারেল পদে কঠোর ভূমিকার অনুসারী জেফ সেশনকে নিয়ে আসতে পারেন যাকে এর আগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। সেটা হলে ডেমোক্র্যাটরা প্রতিনিধি পরিষদের পক্ষ থেকে তদন্ত চালানোর জন্য মুয়েলারকে স্বাধীন কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে। হাউজে ডেমোক্র্যাট প্রাধান্য থাকায় ট্রাম্পের মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। কারণ এই অর্থের জন্য যে ছাড় লাগবে তার নিয়ন্ত্রণ থাকবে প্রতিনিধি পরিষদের হাতে। অনিবন্ধিত যেসব অভিবাসী শিশু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাটরা তাদের সুরক্ষা পুনর্প্রতিষ্ঠা চেষ্টা করবে এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার উদ্যোগ নেবে। ২০২০ সালে ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত না হলে এটা এখন নিশ্চিত যে তিনি ব্যাপক কর হ্রাসের যে ব্যবস্থা করেছিলেন সেটাই হবে তার এ সংক্রান্ত শেষ পদক্ষেপ। কর হ্রাসের ব্যবস্থায় অতি ধনীরা ও কর্পোরেশনগুলোই মূলত লাভবান হয়েছিল এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছিল যার প্রভাব পড়েছিল নির্বাচনে। ট্রাম্প যদিও মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে লক্ষ্য করে আরেক দফা কর হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটা বাস্তবায়িত করা অত সহজ হবে না। কারণ প্রতিনিধি পরিষদ এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় যে কোন আইন পাস করা কঠিন হবে। নির্বাচনের পর বাণিজ্য বিষয়ক চিত্রটাও অধিক জটিল হয়ে পড়েছে। কেননা প্রেসিডেন্টের এই সংক্রান্ত ক্ষমতা হয়েছে খর্ব। ট্রাম্প যে বাণিজ্য বিরোধের ইন্ধন যুগিয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদে দলের পরাজয় সেই বিরোধের ওপর এখন কতটা প্রভাব ফেলে চীন, কানাডা, মেক্সিকো ও অন্যান্য দেশের রাজনীতিকরা তা গভীরভাবে লক্ষ্য করবেন। তার পরও ট্রাম্প এ ব্যাপারে কিছু করার জন্য তার নির্বাহী আদেশকে কাজে লাগাতে পারেন। তবে এই সংক্রান্ত অর্থপূর্ণ আইন পাস করার সম্ভাবনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। প্রতিনিধি পরিষদ এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় জাতীয় পর্যায়ে সাধ্যায়ত্ত স্বাস্থ্য পরিচর্যা আইন (এসিএ) বাতিল করার রিপাবলিকান উদ্যোগ যে থেমে যাবে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। পরিষদের স্পীকার হিসেবে আগের ভূমিকায় ফিরে আসতে পারেন ন্যান্সি পেলোসি। সেক্ষেত্রে পরিষদ ওষুধের মূল্য হ্রাসকে অগ্রাধিকার দেবে। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের বিজয় নিঃসন্দেহে তাদের এক বড় সাফল্য যদিও প্রত্যাশিত কিছু কিছু আসনে তাদের জয় মেলেনি। তথাপি তারা ট্রাম্পের প্রতি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারবে এবং তার শাসনে ভারসাম্য রক্ষার শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তবে সিনেটে রিপাবলিকান জয়ের ফলে ট্রাম্পের পরোক্ষ জয় হয়েছে বলা চলে। কারণ সিনেট হলো যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বাদিক ক্ষমতার দুর্গ। ক্ষমতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হলো প্রেসিডেন্ট পদটি যা ধারণ করে আছেন ট্রাম্প। এখন সিনেটেও তার দলের প্রাধান্য থাকায় তার অনেক কিছু করার ক্ষমতা থাকবে। এমনকি ডেমোক্র্যাট প্রধান প্রতিনিধি পরিষদের বাধা সত্ত্বেও। যেমন তিনি রক্ষণশীল ফেডারেল বিচারপতিদের নিয়োগ অনুমোদন করিয়ে নিতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এ্যাটর্নি জেনারেল থেকে শুরু করে সম্ভবত প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যন্ত কেবিনেট পদের বিভিন্ন নিয়োগ অনুমোদন করাতে তার কোনই সমস্যা হবে না। সিনেটে প্রাধান্য থাকার জোরে ২০২০ সাল পর্যন্ত রিপাবলিকানদের এই উচ্চ পরিষদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার সম্ভাবনা যথেষ্ট বেড়ে গেছে। কারণ পরবর্তী সিনেট নির্বাচনে তাদের ৩৪টি আসনের মধ্যে ২২টি আসন রক্ষা করতে হবে। আর ডেমোক্র্যাটদের রক্ষা করতে হবে ৩৫টি আসনের মধ্যে ২৬টি আসন। সূত্র : গার্ডিয়ান ও অন্যান্য
×