ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’ নিয়ে মুজাহিদ

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’ নিয়ে মুজাহিদ

ডি-প্রজন্ম : কেমন আছেন? মুজাহিদুল : ভাল আছি। সুস্থ আছি। ডি-প্রজন্ম : কবে থেকে আপনি আবৃত্তি চর্চার সঙ্গে যুক্ত? কবিতার প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। তবে আবৃত্তি চর্চার শুরু কলেজ জীবনে। সে সময়েই আবৃত্তির প্রতি ভালবাসা আর স্বপ্নের বীজ বুনে দেন আমার কলেজের শিক্ষিকা, আবৃত্তিশিল্পী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংবাদপাঠিকা রেখা নাজনীন। প্রতি বৃহস্পতিবার কলেজের শেষ ক্লাসটি ছিল এক্সট্রা কারিকুলাম ক্লাস। কোনদিন গান, কবিতা, কোনদিন বিতর্ক। রেখা ম্যাডাম আমাকে আর আমার আরেক বন্ধু তানিম তুনাজ্জিনাকে কবিতার নির্মান তুলে দিতেন। বলা যায় কলেজের প্রথম বছরেই কবিতা আর আবৃত্তি আত্মায় গেঁথে যায়। ওই সময়েই চট্টগ্রামের সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চায় আমার সক্রিয় পথচলা শুরু হয়। ডি-প্রজন্ম : আপনার সংগঠন ‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’-এর শুরুর গল্প... মুজাহিদুল : আমি যখন ফাস্ট ইয়ারে, রেখা ম্যাডামের বুনে দেয়া কবিতা আর আবৃত্তির স্বপ্নে একরকম বুঁদ হয়ে আছি, তখনই সংগঠনের বিষয়টা মাথায় আসে। চট্টগ্রামে আবৃত্তি নিয়ে তখন অনেক সংগঠনই সক্রিয়। কিন্তু মাথায় নিজের মতো করে কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল। বন্ধু অনুপ (অনুপ বড়–য়া) ভাল ছবি আঁকে ও তবলা বাজায়, শাওনের (মোস্তাফিজুর রহমান শাওন) উপস্থাপনার প্রতি ঝোঁক, মিঠু (মিঠু তলাপাত্র) ছোটবেলা থেকেই গান করত আর কিবরিয়া (গোলাম কিবরিয়া) এই পাঁচজন মিলে শুরু করলাম। নাম দিলাম ‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’। পাঁচজনই তখন সদ্য তরুণ আর সংগঠন করা নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত ছিলাম বলেই ঠিক করা হলো এই নাম। তারপর বড়দি (শাওন সরকার, সঙ্গীতশিল্পী ও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের সাবেক সভাপতি), শ্রাবণী, জিনিয়া আপু (জিনিয়া শারমিন, তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের প্রথম সভাপতি), তন্ময়, আশিকসহ অনেকে যোগ দেয়। বিন্দু বিন্দু করে নানা বাঁধা পেড়িয়ে শুরু হয় পথচলা। তারপর যোগ হয় স্বপ্নের পর স্বপ্ন। এরপর গত আট বছরে দেশের অনেক গুণীজনের পদচারণা ও ভালবাসা পেয়েছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। এ তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। ডি-প্রজন্ম : একজন সংগঠক নাকি আবৃত্তিশিল্পী কোন জায়গায় নিজেকে দেখতে বেশি পছন্দ করেন? মুজাহিদুল : দুটো জায়গাতেই এখনো পাড়ি দিতে হবে বহু পথ। দুটোই আমার পছন্দের জায়গা। সংগঠন নিয়ে যেমন বহু পরিকল্পনা ও ভাললাগা, তেমনি আবৃত্তি আর কবিতা নিয়েও অনেক স্বপ্ন। ডি-প্রজন্ম : চট্টগ্রামের আবৃত্তি শিল্প নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী? মুজাহিদুল : আমি একটা কথা বিশ্বাস করি যেখানে কাজ বেশি, সেখানে আলোচনা সমালোচনাও বেশি, আবার সেখান থেকেই ভাল ও মানসম্মত কিছু তৈরি হয়। বর্তমানে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা বা শহরের তুলনায় আবৃত্তি নিয়ে অনেক বেশি কাজ, অনুষ্ঠান ও চর্চা হচ্ছে। আমাদের দেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জন্য এটি খুব ইতিবাচক একটি দিক। আর আশার কথা হচ্ছে অসংখ্য তরুণ এখন আবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে উচ্চারণ ও আবৃত্তি শিখছে। এ চর্চাটা যত বেশি হবে, ততই বাড়বে মুক্তচিন্তার মানুষের সংখ্যা। ছড়িয়ে যাবে শ্রেণীহীন শোষণমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন। প্রত্যাশা অনেক। যেমনটা নিজের সংগঠন নিয়ে তেমনটাই চট্টগ্রামের আবৃত্তি অঙ্গন নিয়ে। কাজ ও চর্চার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের আবৃত্তি চর্চা একসময় বাংলাদেশের আবৃত্তি চর্চার মানদ- হিসেবে বিবেচিত হবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা। তবে আবৃত্তিকে পেশাগত জায়গায় দাঁড় করানোর কথা বললে, পাড়ি দিতে হবে এখনও অনেক পথ। আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা ও কাজের ক্ষেত্র হতে হবে উন্মোচিত। ডি-প্রজন্ম : একজন ভাল সংগঠকের কী কী গুণ থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন? আমার মনে হয় একজন ভাল সংগঠককে প্রথমে বিশ্বস্ত বন্ধু হতে হবে। আর সেই সঙ্গে মানুষকে বিশ্বাস করতে জানতে হবে। থাকবে স্বপ্ন। স্বপ্ন পূরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হতে হবে কৌশলী কিন্তু সৎ ও সাহসী। ডি-প্রজন্ম : আবৃত্তি ও আপনার আবৃত্তি দল তারুণ্যের উচ্ছ্বাস নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? অনেক পরিকল্পনা, অনেক স্বপ্ন তারুণ্যের উচ্ছ্বাস নিয়ে। বিগত আট বছরে ‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’ যেমনি সমৃদ্ধ হয়েছে নানা আয়োজন আর উৎসবে তেমনি মুখর হয়েছে উপমহাদেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের পদচারণায়। ‘তারুণ্যের উচ্ছ্বাস’ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে মঞ্চ, এমনকি প্রয়োজনে রাজপথেও ছিল সোচ্চার। আগামীতেও কাজের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এর পাশাপাশি আগামীতে সংগঠনের বড় ও ছোট বিভাগের শিল্পীদের নিয়ে দুটি আবৃত্তি এ্যালবাম প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে নতুন দুটি পূর্ণাঙ্গ আবৃত্তি প্রযোজনার মহড়া। চেষ্টা রয়েছে খুব শীঘ্রই এ প্রযোজনাগুলো মঞ্চে আনার। পরিকল্পনা রয়েছে নিয়মিত কর্মশালার পাশাপাশি সংগঠনের সদস্যদের জন্য তিনদিনের একটি উচ্চতর আবৃত্তি কর্মশালা আয়োজনের। এ ছাড়া নিয়মিত অনুষ্ঠান, উৎসব এবং প্রযোজনার মঞ্চায়ন তো থাকছেই। ডি-প্রজন্ম : সুন্দর সমাজ গঠনে কবিতা ও আবৃত্তি চর্চার প্রভাব... মুজাহিদুল : কবিতা সবসময় সত্য ও সুন্দরের কথা বলে। এর শক্তি অসাধারণ। কবিতার লাইনগুলো আবৃত্তিকাররা যখন সাধারণের কাছে তাদের কণ্ঠ দিয়ে তুলে ধরেন তখন তিনি শুধু কবিতাই নয়, সত্য ও সুন্দরকেও তুলে ধরেন। অধিক সুন্দর ও সত্যের চর্চা সমাজ ও জীবন শুদ্ধ করতে বেশি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। ডি-প্রজন্ম : আবৃত্তি ক্ষেত্রে আপনার অর্জন... মুজাহিদুল : আবৃত্তিতে গত দেড় দশকের নিরবচ্ছিন্ন পথচলায় একটি বিষয় নিয়ে আমার খুব তৃপ্তি রয়েছে। তা হলো শুরু থেকেই এ পথে আমি একা হাঁটিনি। আমার সঙ্গে আরও কয়েক শ’ তরুণকে নিয়ে আবৃত্তি ও কবিতার এ সমৃদ্ধ সুন্দর পথে একসঙ্গে হেঁটেছি। আর শিল্পী হিসেবে ব্যক্তি চর্চার কোন শেষ নেই। এখানে প্রতিনিয়ত শিখছি। শিল্পচর্চায় তৃপ্তির সুযোগ নেই। বিশ্বাস করি, যদি বেঁচে থাকি পাড়ি দিতে হবে আরও বহু পথ। ডি-প্রজন্ম : আপনার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন? মুজাহিদুল : ব্যক্তিগত জীবন বলতে মা, বাবা, আর আমরা দুই ভাই ও এক বোন। বাবা পেশায় চিকিৎসক। মা গৃহিণী। আর আমি আইনে ¯œাতকোত্তর শেষ করে চট্টগ্রাম জেলা আদালতে আইন পেশায় যুক্ত আছি। ডি-প্রজন্ম : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান? মুজাহিদুল : একটি শান্ত ও স্থির বাংলাদেশ দেখতে চাই। সমস্ত অস্থিরতাকে, কলুষতাকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ যা কিছু সুন্দর ও কল্যাণের তাই নিয়ে এগিয়ে যাবে এমন বাংলাদেশের প্রত্যাশা করি। ‘দেশপ্রেম’ই হোক বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ। ডি-প্রজন্ম : ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন। মুজাহিদুল : আপনিও ভাল থাকবেন। শুভেচ্ছা নিরন্তর।
×