ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিরপুরে রানের পাহাড়ে চাপা জিম্বাবুইয়ে

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

মিরপুরে রানের পাহাড়ে চাপা জিম্বাবুইয়ে

মিথুন আশরাফ ॥ মিরপুর টেস্টে রানের পাহাড় গড়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের সেই রানের পাহাড়ে চাপাও পড়েছে জিম্বাবুইয়ে। দেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান করা মুশফিকুর রহীমের ২১৯ রানের জলজ্ব্যান্ত ইনিংসে ৫২২ রান করে বাংলাদেশ। ৭ উইকেট হারিয়ে এই রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করে দেয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। মুশফিক-মিরাজের করা ১৪৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির রেকর্ডে এ বিশাল স্কোর দাঁড় হয়। দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার আগে জিম্বাবুইয়ে ১ উইকেট হারিয়ে ২৫ রান করে। এখনও বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে ৪৯৭ রানে। পেসার খালেদ আহমেদ অভিষেক টেস্ট খেলতে নামেন। তিনি গতির জন্যই দলে সুযোগ পেয়েছেন। মিরপুর টেস্টে খেলারও সুযোগ পান। কী দুর্দান্ত গতি তার বলে! তার বলগুলো যেন জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের সামনে আগুনের গোলার মতো করে ধেয়ে যায়। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা তো দলের ও ব্যক্তিগত ৭ রানেই আউট হয়ে যেতেন। খালেদের গতির কাছে হার মানেন। কিন্তু মাসাকাদজার ব্যাটের ছোঁয়া লেগে প্রথম স্লিপে যাওয়া বলটি আরিফুল হক ধরতে ব্যর্থ হন। সেই মাসাকাদজা দলের ২০ রানের সময় ১৪ রান করে তাইজুল ইসলামের স্পিন জাদুর সামনে পড়ে স্লিপে মিরাজের তালুবন্দী হয়ে মাঠ ছাড়েন। এরপর জিম্বাবুইয়ে আরও ৫ রান যোগ করতে পারে। আজ তৃতীয়দিনে চারি (১০*) ও ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নামা পেসার তিরিপানো (০*) ব্যাট হাতে নামবেন। জিম্বাবুইয়ের ফলোঅন এড়াতেই এখনও লাগবে ২৯৮ রান। ম্যাচে বাংলাদেশই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রেখেছে। এর আগে দ্বিতীয় দিন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ ব্যাট হাতে নামেন। দুইজন মিলে এতটাই সুন্দরভাবে ব্যাটিং করতে থাকেন, জিম্বাবুইয়ে বোলাররা শুধু বোলিংই করে যান। প্রথম সেশনটি দুইজন মিলে অনায়াসে কাটান। প্রথমদিন মুমিনুল হকের ১৬১ ও মুশফিকের অপরাজিত ১১১ রানে ৫ উইকেটে ৩০৩ রান জমা ছিল। দ্বিতীয়দিন প্রথম সেশনের সঙ্গে আরও ৬২ রান যোগ করেন দুইজন। প্রথম সেশন শেষে স্কোরবোর্ডে ৩৬৫ রান জমা থাকে। দ্বিতীয়দিন প্রথম সেশনে আরও ২৪ রান যোগ করেন মুশফিক। মাহমুদুল্লাহ দ্বিতীয়দিন রানের খাতা খুলে প্রথম সেশনে ৩৫ রান করেন। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই একটি ভুল করে বসেন মাহমুদুল্লাহ। জার্ভিসের উঠে আসা বলটি ব্যাট দিয়ে ছোঁয়া লাগিয়ে দেন। উইকেটরক্ষক চাকাভা বলটি লুফে নেন। ৩৬ রানে আউট হয়ে যান মাহমুদুল্লাহ। তাতে মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর জুটি নিয়ে যে বড় কিছুর আশা ছিল। দুইজন যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, মনে হচ্ছিল দলের স্কোরবোর্ডে এ দুইজন থাকতেই ৪০০ রান জমা হবে। তা আর পূরণ হয়নি। দুইজন মিলে ৭৩ রানের জুটি গড়তে পারেন। দলের ৩৭২ রানের সময় মাহমুদুল্লাহ আউট হওয়ার পর ৬ রান যোগ হতে আরিফুল হককেও সাজঘরে ফিরিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো এক ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেন জার্ভিস। আরিফুল আউট হতেই মুশফিক ব্যক্তিগত স্কোরবোর্ডে ১৫০ রান পূরণ করেন। মুশফিকের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে দলকে ৪০০ রানে নিয়ে যান। দেখতে দেখতে ৪৫০ রানেও চলে যায় বাংলাদেশ। মুশফিকও ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান। ১৯৫ রান করে ফেলেন মুশফিক। এমন মুহূর্তে দ্বিতীয় সেশনও শেষ হয়ে যায়। এই সেশনে আরও ১০৫ রান যোগ হয়। দলের রান হয় ৪৭০। তবে দুটি উইকেটও হারায় বাংলাদেশ। মুশফিকের সঙ্গে মিরাজ দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। ৪০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে ফেলেন। দুইজনের জুটি থেকে ৯২ রানও আসে। তৃতীয় সেশন শুরু হতেই সিকান্দার রাজার বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ৭৮ বলে মিরাজ হাফসেঞ্চুরি করেন। দ্বিতীয় টেস্ট হাফসেঞ্চুরি করেন। মুশফিকও ৪০৭ বলে ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলেন। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে ম্যাচ খেলতে নেমে দুটি ভিন্ন ম্যাচে যে কোন এক ইনিংসে দুইবার ডাবল সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন মুশফিক। বিশ্ব ক্রিকেটে তিনিই এ রেকর্ডে প্রথম। এর আগে মুশফিকসহ আটজন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান একবার করে ডাবল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব গড়েন। তবে মুশফিক করেন দুইবার। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে ২০০ রান করার পর এবার মিরপুর টেস্টে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেও ডাবল সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। দেশের হয়ে দ্বিতীয়বার মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরি করলেন। এখানেও তিনিই প্রথম। মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরি করার পর তামিম ইকবাল (২০৬) ও সাকিব আল হাসান (২১৭) করেছিলেন। মুশফিক দ্বিতীয়বারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি করলেন। মিরাজকে নিয়ে এগিয়েই যেতে থাকলেন। মুশফিক-মিরাজ জুটিরও ১০০ রান হয়ে যায়। দলের রানও ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। দেখতে দেখতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৫০৪ রান করতেই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ডও গড়ে ফেলে বাংলাদেশ। মুশফিক ২১৯ রানও করে ফেললেন। ৫৮৯ মিনিট খেলে ৪২১ বলে ১৮ চার ও ১ ছক্কায় এত বড় স্কোর করে অপরাজিতও থাকলেন। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সময় ও বল খেলে এমন ইনিংস করলেন। মুশফিক বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর করতেই দলের রানও ৫২২ হয়। তখন ইনিংস ঘোষণা করে দেয় বাংলাদেশ। অষ্টমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে ৫০০ বা তার বেশি রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে বাংলাদেশ। মিরাজও ৬৮ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। দুইজনের ১৪৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি হয়। যা নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের রেকর্ড জুটি। ২০১০ সালে মুশফিক-নাঈম ইসলামের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা ১১৩ রানের জুটিকে পেছনে ফেলে নতুন জুটির রেকর্ড গড়েন মুশফিক-মিরাজ। দুইজনের এ রেকর্ড জুটিতে ৭ উইকেটে ৫২২ করে বাংলাদেশ। ইনিংস ঘোষণা করার পর জিম্বাবুইয়ে ব্যাট হাতে নেমে ১ উইকেট হারিয়েও বসে। বাংলাদেশের গড়া রানের পাহাড় চাপা পড়েছে জিম্বাবুইয়ে।
×