ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় নতুন রুটে নারী পাচার- সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

মালয়েশিয়ায় নতুন রুটে নারী পাচার- সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব

আজাদ সুলায়মান ॥ মালয়েশিয়ায় নারী পাচারের নতুন রুটের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। ঢাকা থেকে কলকাতা, উড়িষ্যা, ইন্দোনেশিয়া হয়ে সেখান থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। এ রুটে ইতোমধ্যে দুই সহ¯্রাধিক মানবপাচার করা হয়েছে। মতিঝিল, ফকিরাপুল ও পল্টনের কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি অত্যন্ত সূক্ষ্ম কৌশলে নতুন এই রুটে মানবপাচার করে কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়েছে নিরীহ বেকার তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে। একটি প্রভাবশালী চক্র তিন বছর ধরে এই রুটে মানবপাচার করেছে। যাদের বেশিরভাগই গরিব ও নিম্নবিত্ত পরিবারের বেকার তরুণ-তরুণী। র‌্যাবে দীর্ঘদিন নজরদারির পর এই চক্রের ৫ জন ধরা পড়ে বৃহস্পতিবার রাতে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ফলে বেরিয়ে আসে নারী পাচারের চাঞ্চল্যকর কাহিনী। তারা জানিয়েছেÑ কীভাবে কাদের যোগসাজশে বাংলাদেশ ভারত ও মালয়েশিয়ায় নারীসহ অন্যদের পাচার করা হয়েছে। র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারওয়ার আলমের কাছে তারা দোষ স্বীকার করায় তাৎক্ষণিক প্রত্যেককে ৬ মাস করে কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। তারা হলেনÑ মোঃ কুদ্দুস ব্যাপারী (৫৫), মোঃ রবিউল ইসলাম (৩১) মোঃ জাকির হোসেন (৪১), মোঃ মিন্টু (৩৯), মোঃ আরিফুল ইসলাম (২৮)। রাতেই তাদের পাঠানো হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তাদের আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়Ñ ভুয়া কাবিননামা, কাজী অফিসের সিলমোহর, কাগজপত্র, পাসপোর্ট, বিদেশী মোবাইল সিম ও বিপুল পরিমাণ জাল কাগজপত্র, ৪৮টি পাসপোর্ট, ৪৫০ ইউএস ডলার, ৪১ হাজার টাকা পৌনে ৮ লাখ ইন্দোনেশিয়ান রুপী, ৯৫ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ইন্ডিয়ান রুপী, মালয়েশিয়ার সিম কার্ড ও বিএমইটি কার্ড। র‌্যাব জানিয়েছে, তিন বছর আগে কক্সবাজার হয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারকালে বিপুলসংখ্যক মানবপাচারকারীকে আটকের পর দেশ-বিদেশে তোলপাড় হয়। মানবপাচারের এ সিন্ডিকেটের মালয়েশিয়া সরকারের একজন প্রভাবশালী লোক জড়িত থাকার অভিযোগও মিডিয়ায় ফাঁস হয়। ঢাকা থেকেও এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় একাধিক বার্তা পাঠিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়। মূলত তারপর থেকেই বঙ্গোপসাগরে ব্যাপক টহল ও নজরদারি চলে। এখনও সেটা বহাল থাকায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে সাগরপথের মানবপাচার। কিন্তু দেশী-বিদেশী গডফাদাররা মানবপাচারের বিকল্প রুটের সন্ধান চালায়। ২০১৬ সালের শেষের দিকে এ চক্রটি প্রথম ৫৪ নারী-পুরুষকে ঢাকা থেকে কলকাতা, উড়িষ্যা, ইন্দোনেশিয়া হয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠায়। ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানিয়েছেন, প্রথমে ঢাকা থেকে সড়কপথে পাঠানো হয় কলকাতা। তারপর রেলপথে উড়িষ্যায়। ওখান থেকে আকাশপথে ইন্দোনেশিয়ায়। সেখান থেকে সাগর পথে মালয়েশিয়ায়। এভাবেই মাত্র চারদিনে ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার করা হচ্ছে বেশ নিরাপদ ও নির্বিঘেœ। ত্রিদেশীয় এ রুটে নিয়োজিত রয়েছে একাধিক এজেন্ট। মতিঝিলে একটি ভবনের ৫ম তলায় অবস্থিত একটি এয়ার ট্রাভেলসে বসেই পরিকল্পিতভাবে এ পাচারের ঘটনা মনিটর করতেন মালিক। এ চক্রটির মূল হোতার টার্গেট ছিল গ্রামের গরিবও নি¤œ-মধ্যবিত্তের বেকার তরুণ-তরুণী। নারীদের স্বল্প মূল্যে ও পুরুষদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েই তাদের নতুন রুটে মালয়েশিয়ায় পাঠাতেন। উড়িষ্যা বিজু পাটনায়েক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে বিমানযোগে ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ইন্দোনেশিয়ায় ৫/৭ দিন অবস্থান করার পর সাগর পথে মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে প্রবেশ করানো হয়। চক্রটি গত আগস্টে ২৫ জনকে (৭ নারী ও ১৮ পুরুষ) মালয়েশিয়ায় পাচার করে। পাচারকৃত নারী পুরুষরা বর্তমানে চরমভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়ে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। এজন্য ভারতে সমন্বয়ের কাজ করছে তার ভাই সিদ্ধার্থ। মালয়েশিয়াতে পৌঁছানোর পর তাদের রিসিভ করে আলতাব নামে এক ব্যক্তি। র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার বলেন, বিভিন্ন কৌশলে আলোচ্য ব্যাপারী নারীদের পাচার করতে। প্রথম কৌশল অবিবাহিত তরুণীদের তিনি নকল বিয়ের কাবিন নামা দেখিয়ে নকল স্বামীর সঙ্গে ঢাকা থেকে কলকাতা পাঠানোর পর উড়িষ্যা হয়ে ইন্দোনেশিয়া। সেখান থেকে সাগরপথে গন্তব্যে। এ সব তরুণীকে কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে রেখে অসামাজিক কার্যকলাপ করানো হচ্ছে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কারাগারে কয়েকশ বাংলাদেশী নারী আটক রাখা হয়েছে।
×