ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযানে দুই শতাধিক নিহত, এরপরও ইয়াবা আসছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

অভিযানে দুই শতাধিক নিহত, এরপরও ইয়াবা আসছে

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশে গত দেড় বছরে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার ২১৬ মাদক কারবারি ও মাদকসেবীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। আলোচ্য সময়ে মাদক কারবারি ও মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৯৩। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে আড়াই শতাধিক। মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাদকবিরোধী মামলার বিচারের জন্য মামলার তদন্ত পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়ে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে। তারপরও মাদক আসা থামছে না, মাদক আসছেই। মাদকের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যতই কঠোর হচ্ছে ততই দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে পাচারকারীরা কৌশল এবং রুট পাল্টানো শুরু করেছে। মাদকের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেই সীমান্ত দিয়ে মাদক ঢুকছে। সীমান্তের যেসব পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে সেসব পয়েন্টেও অভিযান চলছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট ও গোয়েন্দারা নজরদারি করছে। এছাড়া কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, জয়পুরহাটসহ সীমান্তের অন্যান্য পয়েন্টেও চলছে কড়া নজরদারি। তবু দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ঢুকছে ফেনসিডিল ও হেরোইন। এসব মাদক রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এত কড়াকড়ির পরও কীভাবে মাদক ঢুকছে এবং কীভাবে তা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, ’১৭ সালে এক বছরে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৩ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব মাদকব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এক লাখ ছয় হাজার ৫৪৬। ’১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে মামলা হয়েছে ৬২ হাজার ৪৪৭। এ সময়ে গ্রেফতার হয়েছে ৮৩ হাজার ৩২৩ আসামি। ’১৭ সাল থেকে ’১৮ সালের জুন পর্যন্ত গত দেড় বছরে সারাদেশে গ্রেফতার হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ২১৬ মাদক কারবারি। মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৯৩ । আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে আড়াই শতাধিক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এটা সত্য যে মাদকের সরবরাহ একেবারে বন্ধ করা যায়নি। তবে সরবরাহ অনেকটাই কমে এসেছে। একেবারে বন্ধ করাটা কঠিন। আমাদের অপারেশন চলছে। আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছি। আশা করছি, মানুষ এটা প্রতিরোধ করবে। একই সঙ্গে আমাদের এনফোর্সিং এজেন্সি নিয়মিত কাজ করে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৩ মে র‌্যাবের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কুর্মিটোলায় সংস্থার সদর দফতরে অনুষ্ঠানে বলেছেন, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে র‌্যাব যেভাবে অভিযান চালিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে, মাদকের বিরুদ্ধেও সেভাবে অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর র‌্যাব প্রথমে ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাদকসেবী ও খুচরা মাদকসেবীদের দ- দেয়া শুরু করে। পরে শীর্ষ মাদকব্যবসায়ীদের ধরতে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিট অভিযান জোরদার করে। ডিএমপির ডিসি মিডিয়া মাসুদুর রহমান বলেন, মাদকব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করা সময়ের ব্যাপার। একটা জিনিস তো হঠাৎ করে বন্ধ হয় না। সাপ্লাই চেন, ডিমান্ড অনেক ব্যাপার আছে। সাপ্লাই চেনের ওপর আমরা রেস্ট্রিকশন বা প্রেসার ক্রিয়েট করছি, যাতে সাপ্লাই কমতে কমতে শূন্যের কোটায় নেমে আসে। আমরা নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে আসছি। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে ছদ্মবেশে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, এত নিহত ও গ্রেফতারের পরও মাদক ব্যবসায়ীরা এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে দেশে মাদক আসতে না পারে। তারপরও আসছে, আমরা এটা বন্ধ করতে পারিনি। আমার মনে হয় এটা বন্ধ করতে আরও সময় লাগবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। যদি চাহিদা কমে যায় তাহলে সাপ্লাই অটোমেটিক কমে যাবে।
×