ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু কান্নার জন্য...

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

শুধু কান্নার জন্য...

বিবাহ বিচ্ছেদের একাকিত্ব বা অন্য কোন যন্ত্রণার কারণেই হোক চোখ দিয়ে জল বেরনোর আগেই কম্পিউটার বা ফোনের সামনে বসছে জাপানী মেয়েরা। অনলাইনে চলছে হ্যান্ডসাম ছেলের খোঁজ! কারণ কান্নার সময় এবার সুদর্শন পুরুষের সামনে কাঁদার রেওয়াজই চালু হয়েছে জাপানে। তার জন্য খরচও করতে হচ্ছে কিছুটা। সব মিলিয়ে এক বার কাঁদার খরচ বাংলাদেশী টাকায় প্রায় চার বা পাঁচ হাজারের মতো। এ নিয়ে রীতিমতো ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন জাপানী এক উদ্যোক্তা। এমনিতে আবেগ মজুত রয়েছে পিটুইটারির ঘরে। দুঃখ বা কান্নার মুহূর্ত এলে পিটুইটারি সঙ্কেত পাঠাবে টিয়ার গ্ল্যান্ডে। তাতে চাপ পড়ে জল বেরিয়ে আসবে চোখের কোণ বেয়ে। জীববিদ্যার নিয়ম এ কথা বলে। কিন্তু যে কথা বলে না, তা হল মেয়েদের কান্নার সময় এই সুন্দর মুখের পুরুষের তত্ত্ব। তবে সেই ভাবনাকেই মূলধন করে নতুন এই অভ্যাসে মেতেছেন জাপানী মেয়েরা। তাদের একাংশের বিশ্বাস, সুদর্শন পুরুষ চোখের জল মোছালে তবে নাকি সে কান্না কেঁদেও সুখ! সঙ্গগুণে ঝরে যাবে দুঃখ-কষ্টও। একা কান্নার চেয়ে সুদর্শন পুরুষের সামনে কান্নায় মনের ভার লাঘব হয় বলে মনে করেন জাপানীদের একাংশ। জাপানী উদ্যোক্তা হিরোকি তেরাই এই নতুন ব্যবসা খুলে বসেছেন। মেয়েরা কাঁদলে ঝকঝকে চেহারার সুপুরুষ পৌঁছে যাবে তাদের কাছে। সেই পুরুষদের কাজ হলো সান্ত¡না দেয়া, যতœ করে চোখের জল মোছানো। তাদের নামও দিয়েছেন তিনি, ‘হ্যান্ডসাম উইপিং বয়’। জাপানী পরিভাষায় এই পদ্ধতির নাম ‘রুই-কাৎসু’। কাঁদতে চাইলে অনলাইনে বুক করতে হবে নিজের নাম ও কাঁদার সময়। ব্যস! এটুকুই যথেষ্ট। এ বার সেই ঠিকানায় পৌঁছে যাবেন সুদর্শন যুবক। কান্নার সময় খুব প্রিয় মানুষ সামনে থাকলে আবেগের গতি ও প্রকাশ বিশুদ্ধ হয়, কান্না প্রকাশের ঠিকঠাক মাধ্যম পেলে তা অনেক স্বাস্থ্যকর হয়- দুনিয়াজুড়ে এমন দর্শনে বিশ্বাস করেন অনেকেই। আর এই বিশ্বাসকে মূলধন করেই এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। কিন্তু এমন ভাবনা কেন ভাবলেন তারাই? তার মতে, এই ভাবনার কথা প্রথম মাথায় আসে জাপানী দম্পতিদের বিবাহ বিচ্ছেদ সময়ের কথা ভেবে। সেখানে কিছু পুরুষ সপ্তাহভর নানা কাজ ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায় মেয়েরাই ডিভোর্সের আবেদন করে। তখন সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার কষ্ট তাদের উভয়কেই পীড়া দেয়। কিন্তু সে দুঃখ ভুলে থাকার কায়দা দু’জনের দু’রকম। স্বভাবজাত কারণে সাধারণত পুরুষরা সারাদিন নানা প্রমাদ, বিলাসিতা ও ঘুমিয়ে বা পরের সপ্তাহে কাজের পরিকল্পনা করে কাটিয়ে দেন। সে ক্ষেত্রে মেয়েরাই কান্নাকাটি করেন বেশি। তা দেখেই এই ব্যবসার কথা মাথায় আসে তাদের। তিনি ভেবে দেখেন, তাদের সামলাতে যদি সামনে কোনও বিপরীত লিঙ্গের মানুষ থাকেন, তা হলে তারা অনেকটা ভরসা পাবেন, কান্নায় সমব্যথী হওয়ার জন্য মনের মতো মানুষ পাবেন। এতে একজন দুখী মানুষ সঙ্গীও পাবেন, আবার মেয়েদের মনের চাপও কমবে। তাদের মতে, সামনের মানুষ বদলে গেলে একই ঘটনায় মানুষের আচরণও অনেকটা বদলে যায়। সামনে আকর্ষক কেউ থাকলে মানুষ কোথাও জীবনের প্রতি একটু বেশি আশাবাদী হয়। তাই সুন্দর মুখকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এদিকে অল্পদিনের মধ্যেই তার এই ভাবনার কথা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে ও বিপুল লাভবান হন তিনি। শুধু তা-ই নয়, তার এই ভাবনাকে মূলধন করে ছবিও বানিয়ে ফেলেছেন দ্যারিয়েল থমস। তার স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘ক্রাইং উইথ দ্য হ্যান্ডসাম ম্যান’-এ তিনি এই তত্ত্বের ব্যাখ্যা ও বিশ্বাসকে তুলে ধরেছেন। প্রথম জীবনে ফাটোগ্রাফি করে বেড়ানো থমসের হঠাৎই নজরে পড়ে একটি পত্রিকায় নারীদের কান্নার সঙ্গী হওয়ার বিষয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক লেখা। তখনই ছবিটির কথা মাথায় আসে তার। এই ধারণার জনক হিরোকি তেরাইয়ের সন্ধানও পান তিনি। থমসের এই ছবি জাপানজুড়ে এমন অভিনব ব্যবসাকে আরও প্রচারের আলোয় এনেছে। যদিও জাপানজুড়ে বিপুল জনপ্রিয় হওয়া এই অভ্যাসকে আদতে তাদের ‘সেরিমনিয়াল এ্যাটিটিউড’ বা ‘উদ্যাপনের অভ্যাস’ হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। জাপানে মেয়েদের এমন কান্নার বিষয়কে তারাও ‘উদ্যাপনের হুজুগ’ হিসেবেই দেখছেন। -আনন্দবাজার পত্রিকা
×