ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে আয়কর মেলা আজ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

সারাদেশে আয়কর মেলা আজ শুরু

এম শাহজাহান ॥ ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ আয়করের অর্জন’ শীর্ষক স্লোগান ধারণ করে আজ মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী দুই বছরে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সংখ্যা ৩৫ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বর্তমান এই সংখ্যা ২০ লাখ। এছাড়া ই-টিআইএন ধারীর সংখ্যা ৩৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এই মেলার মূল উদ্দেশ্য, করদাতা বাড়িয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারের আয় বৃদ্ধি করা। গত কয়েক বছরে সরকারের আয় যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনি অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতায় এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আয় বাড়ায় নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়নসহ পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ রয়েছে বর্তমান সরকারের। জানা গেছে, ঢাকা, সিলেট, রংপুর এবং খুলনা বিভাগীয় শহরে আজ থেকে (১৩-১৯) নবেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। তবে জেলা শহরে ওই সময়ের মধ্যে স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত চারদিন এবং নির্বাচিত ১০০ টি উপজেলা শহরে স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত ২ বা একদিন আয়কর মেলা ২০১৮ অনুষ্ঠিত হবে। করদাতাগণ আয়কর মেলায় তাদের ২০১৮-১৯ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। ঢাকার আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে, বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবের সবুজ চত্বরে। এই মেলায় ঢাকার প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য পৃথক বুথ করা হয়েছে। করদাতাগণকে রিটার্ন পূরণে সহায়তা করার জন্য মেলায় হেল্প ডেস্ক খোলা হবে। এছাড়া করদাতাগণ মেলায় স্থাপিত সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক লিমিটেডে তাদের আয়কর জমা দিতে পারবেন। একই সঙ্গে মেলায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ই-পেমেন্ট ওয়েবসাইট ব্যবহার করে করদাতাগণ অনলাইনে তাদের প্রদেয় আয়কর পরিশোধ করতে পারবে। মেলায় ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন বুথে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান সাপেক্ষে নতুন করদাতাগণ ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও বর্তমান করদাতাগণ রি-রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। এছাড়া মেলায় মহিলা, প্রতিবন্ধী, প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের জন্য পৃথক বুথ খোলা হয়েছে। আয়কর মেলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, এর আগে আয়কর বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয়ভীতি ছিল। মানুষ সহজে কর দিতে চাইতেন না। তাদের বিশ্বাস ছিল, কর দিতে এলেই এনবিআর কর্মকর্তারা ধরবেন, হয়রানি করবেন। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে বেশকিছু উদ্যোগের কারণে করদাতাদের সেই মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে। ভয়ভীতি দূর হয়েছে মানুষের। এখন অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। করদাতাদের সামাজিক মর্যাদা বাড়ানো হয়েছে। তাদেরকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এ কারণে অনেকে কর প্রদানে সক্ষম এ রকম ব্যক্তি এখন এগিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, এনবিআরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। করের বিষয়টি সঠিকভাবে করদাতাদের সামনে তুলে ধরতে বলা হয়েছে। ফলে এখন হয়রানির প্রবণতা কমেছে। বিশেষ করে মেলায় আসা ব্যক্তিরা কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই কর দিতে পারছেন। সরকারের উদ্যোগে দেশে একটি করদাতাবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ মেলার মাধ্যমে কর বিভাগ সম্পর্কে জনগণের ধারণা আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে অনেকেই এখন স্বেচ্ছায় আয়কর দিতে আসছেন। এখানে এসে আয়কর বিষয়ক আইন ও বিধি সম্পর্কে করদাতারা আরও ভালভাবে জানার সুযোগ পাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, পুরো পদ্ধতিটি সহজ করে আনায় করদাতারা আয়কর রিটার্ন ফরম নিজেই পূরণ করতে পারছেন। জানা গেছে, গত আট বছরে আয়কর মেলায় দেশের ৪৪ লাখ ৯৮ হাজার ১২৫ নাগরিক সেবা নিয়েছেন। ওই সময় তাদের ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণে সহায়তা, রিটার্ন গ্রহণ, কর পরিশোধ এবং কর বিষয়ে প্রশিক্ষণমূলক সেবা দেয়া হয়েছে। আর এ সেবার মাধ্যমে এনবিআরের ১০ হাজার ৫৩২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত আয়কর মেলায় ১১ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৪ জন আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। এছাড়া মেলায় নতুন করে ২ লাখ ২৬ হাজার ৭১১ জন ই-টিআইএন খুলেছেন। আয় কর মেলার মাধ্যমে কর সংস্কৃতির বিকাশ ও কর সচেতনতা বাড়ছে। করদাতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন হয়েছে। এদিকে, গত দুই বছর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা আবার ফিরে আসছে বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে। মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় যানজট এড়াতেই অফিসার্স ক্লাবে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় নতুন করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে অডিও ভিজুয়াল পদ্ধতিতে ওয়ার্কশপ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে আয়কর মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এছাড়া অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, সরকারের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরের বছর ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো সারাদেশে আয়কর মেলার আয়োজন করে। প্রথম বছরই সাধারণ মানুষের মধ্যে আয়কর মেলার বিষয়টি ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরপর থেকে প্রতিবছর নবেম্বর মাসে এই মেলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে এনবিআর। শুধু তাই নয়, দেশের দ্রুত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং পরিবর্তনশীল বিশ্ব প্রেক্ষিত ও জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষাকে বিবেচনায় রেখে ২০০৯ হতে ২০১৮ সময়কালে সরকার এনবিআরের অনুশাসনাধীন আইন ও বিধিসমূহ ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করে। যে প্রক্রিয়া এখনও চলমান রয়েছে।
×