ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার কাল

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার কাল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ শেষ হলো আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা গ্রহণের জমজমাট উৎসব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশ’ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সাত। গত চারদিন ধরেই ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার মনোনয়নপ্রত্যাশী ও লাখ লাখ নেতাকর্মীর পদচারণায় মুখর ছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধু মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেই তহবিলে ১২ কোটির বেশি টাকা জমিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তিনশ’ আসনের বিপরীতে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২৩। জমা পড়েছে প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি। অর্থাৎ এবার আওয়ামী লীগে একেকটি আসনে গড়ে ১৩ জন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী। আগামীকাল বুধবার ধানম-ি কার্যালয়েই হবে মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং আগামী নির্বাচনে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমের অঙ্গীকারনামায় স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে তাৎক্ষণিক দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এমন অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেই মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ফরম জমা দিয়েছেন। সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে এ কথাটিই পুনর্বার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় শেষে রাতে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এবার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। সেটি চার হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সঠিক সংখ্যা কতটি জানতে চাইলে তিনি জানান, সম্ভবত ৪ হাজার ২৩টি হবে। জমাও পড়েছে ৪ হাজারের কাছাকাছি। অনেকে এখনও জমা দিতে পারেননি, সে কারণে কালও (মঙ্গলবার) মনোনয়ন ফরম জমা নেয়া হবে। সোমবার মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমাদান কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর বুথের দায়িত্বে থাকা একাধিক নেতা জানান, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট সাত একক প্রার্থী হয়েছেন। একক প্রার্থী থাকা আসনগুলো হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (গোপালগঞ্জ-৩), শেখ ফজলুল করিম সেলিম (গোপালগঞ্জ-২), সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫), শেখ হাসনাত আব্দুল্লাহ (বরিশাল-১), শেখ হেলাল উদ্দিন (বাগেরহাট-১), শেখ জুয়েল (খুলনা-২) ও হুইপ মোঃ শাহাবুদ্দিন (মৌলভীবাজার-১)। রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ বিভাগে কোন আসনে একক প্রার্থীর নামের তালিকা পাওয়া যায়নি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বনামধন্য জরিপ প্রতিষ্ঠান এবং দলের অভিজ্ঞ একাধিক টিমের মাধ্যমে কয়েক দফা মাঠ জরিপ চালিয়ে তিনশ’ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তার বাস্তব চিত্র এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ল্যাপটপে। নেতা-এমপি-মন্ত্রীরা যত বড় বড়ই শোডাউন করুন না কেন, প্রধানমন্ত্রীর হাতেই রয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্বাচনী এলাকায় সর্বশেষ অবস্থা। গত টানা ১০ বছরে কোন মন্ত্রী-এমপি বা সম্ভাব্য প্রার্থী এলাকায় কী করেছেন, জনপ্রিয়তা বেড়েছে নাকি কমেছে, অনিয়ম-দুর্নীতি কিংবা দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে কি না, এসব আমলনামা রয়েছে দলীয় প্রধানের হাতে। তাই সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক থেকে সর্বশেষ জরিপসহ সবকিছু বিবেচনা করেই এবার আওয়ামী লীগ একক প্রার্থিতা ঘোষণা করবে। তবে জোট-মহাজোটের নির্বাচনী হিসাবের অঙ্কে এবার অনেক জনপ্রিয় দলের এমপি-নেতার কপাল পোড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দলের বৃহত্তর স্বার্থে এসব নেতার জোট-মহাজোটের প্রার্থীদের নিশ্চিত আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে। শেষ দিনে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে ব্যাপক ভিড়ে জমা নেয়ার সময় চার ঘণ্টা বাড়ানো হয়। এর আগে সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেয়ার শেষ সময় বেঁধে দিয়েছিল দলটি। কিন্তু জমা প্রদানের দীর্ঘ লাইন দেখে সময় চার ঘণ্টা বাড়িয়ে রাত দশটা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। অন্যান্য দিনের তুলনায় সোমবার শেষ দিনে সংগ্রহ বুথে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড় কম দেখা গেছে। তবে ভিড় বেশি জমা বুথে। শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, র আ ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আসমা জেরিন ঝুমু, কেন্দ্রীয় নেতা মারুফ চিনু (ঝালকাঠি-২), ইঞ্জিনিয়ার ওয়ালিউল্লাহ শিকদার (গাজীপুর-৪) প্রমুখ। গত চারদিনে আওয়ামী লীগের ধানম-ি নির্বাচন পরিচালনা অফিসে সারাদেশ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ও কর্মী-সমর্থকদের মাঝে ছিল উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কর্মী-সমর্থকরা ধানম-ির ৩ নম্বর সড়ক ও আশপাশ এলাকা সরগরম করে রাখেন। অনেক প্রার্থী ঢাকঢোল, ব্যান্ড পার্টি ও সাউন্ড সিস্টেমে গানবাজনায় মেতে ওঠে বিশাল বিশাল বহর নিয়ে ফরম সংগ্রহ করতে আসেন। এছাড়াও ছিল নৌকা প্রতীক, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন এবং পছন্দের প্রার্থীর ছবিসংবলিত টি-শার্টও পরে এসেছিলেন অনেকে। শুধু মনোনয়ন ফরম বিক্রি নয়, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে আগ্রহীদের মধ্যেও ছিল বৈচিত্র্য। কেবলমাত্র আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাই নয়, বিভিন্ন পেশার মানুষও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীদের তালিকায় সবচেয়ে বড় চমকের নাম হলো বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার ফরম সংগ্রহ। চারদিনের মধ্যে প্রথম দিনে ১ হাজার ৩২৮, দ্বিতীয় দিনে ১ হাজার ১৩২, তৃতীয় দিনে ৮৩৫ এবং শেষ দিনে ৩৩২ মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়। সবমিলিয়ে এই চারদিনে ৩ হাজার ৬২৮ মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগ। মা লাঙ্গলে, ছেলে নৌকায় ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে রবিবার জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন ফরম নেন ওই আসনের বর্তমান এমপি এ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। তিনি দলের লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে লড়বেন। অন্যদিকে ঢাকা-১১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আবেদন জমা দিয়েছেন তাঁর ছেলে শামীম ইসলাম, যিনি যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এবং এদিনই জমা দেন। মনোনয়ন পেলে তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। ওয়ান ইলেভেনে প্রার্থীদের ভূমিকা ॥ এক যুগ আগে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনৈতিক অবস্থান ও ভূমিকা কী ছিল তা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে জানতে চেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমে প্রার্থীর বিবরণীর একটি ঘরে ‘২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি পরবর্তী সময়ের ভূমিকা’ লিখতে বলা হয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, জরুরী অবস্থার মধ্যে দলের দুঃসময়েও যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মূল্যায়নের জন্যই ফরমে ওই ঘর রাখা হয়েছে এবার। সর্বশেষ ’১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমে এ ধরনের কোন ঘর ছিল না। এবারের ফরমে বিষয়টি নতুন যোগ করা হয়েছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, প্রত্যেক দলেরই কিছু কিছু বিশেষ সময় থাকে, দুর্দিন থাকে। তেমনি আওয়ামী লীগের দুর্দিন বা বিশেষ মুহূর্ত ছিল ওয়ান-ইলেভেন। সে সময় যারা দল থেকে দূরে ছিল তাদের মনোনয়ন পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ওয়ান-ইলেভেনে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যার জন্য ওই অংশটুকু যুক্ত করা হয়েছে।
×