ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খাশোগি হত্যা ॥ তেল ও অস্ত্রে সৌদি যুবরাজের রক্ষা

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

খাশোগি হত্যা ॥ তেল ও অস্ত্রে সৌদি যুবরাজের রক্ষা

সৌদি সাংবাদিক এবং বিরুদ্ধবাদী জামাল খাশোগির নৃশংস ও রোমহর্ষক হত্যাকা-ের বিস্তারিত বিবরণ যতই প্রকাশ পাচ্ছে ততই বিশ্ববাসী শিহরিত হচ্ছে। তবে এই সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সত্যটা বহুলাংশেই জনসমক্ষে অস্পষ্ট হয়ে থাকছে রাজনীতির কারণে। প্রথম দিকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সৌদি আরবের ওপর যথেষ্ট ক্ষেপেছিলেন। এমনকি স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন সবাই অনেকটা চুপ মেরে গেছেন। এর কারণ সৌদি আরবের তেল কেনা এবং সে দেশকে অস্ত্র বেচা এক বিরাট বিষয় হিসেবে কাজ করেছে। তাই বিশ্ব নেতাদের সুর নরম হয়ে এসেছে। সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বেশ বহল তবিয়তেই আছেন। এখন খোদ ট্রাম্পকেই বলতে শোনা যাচ্ছে খাশোগি হত্যা সম্পর্কে সৌদি ব্যাখ্যা বিশ্বাসযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্র তেলের জন্য সৌদি আরবের ওপর নির্ভর করে। আবার সৌদি আরব হলো মার্কিন অস্ত্রের বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। প্রথম দিকে সৌদি কনস্যুলেটে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তুর্কী কর্তৃপক্ষের পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ট্রাম্প এটাকে ইতিহাসের জঘন্যতম ধামাচাপার ঘটনা বলে উল্লেখ করেছিলেন। পরে তার সুর অন্য রকম হয়। প্রথমে তো সৌদি আরব এই হত্যার কথা স্বীকারই করতে চায়নি। আঙ্কারা এই হত্যায় জড়িত ১৮ জন সৌদির সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যন্ত বিশ্বকে শাস্তি দেয়ার দাবি জানায়। ওয়াশিংটনও হুঁশিয়ার করে দেয় যে, এই সঙ্কটের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা আছে। প্রেসিডেন্ট এদের বিচার করার জন্য তুরস্কে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছিলেন। সৌদি যুবরাজ তাতে রাজি হননি। বলেছিলেন এই ঘৃণ্য অপরাধের বিচার সৌদির মাটিতেই হবে। এই হত্যা পূর্ব পরিকল্পিত বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে তার প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেন। খাশোগি হত্যা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টায় যুবরাজ মোহাম্মদ সালাম ইতোমধ্যে গোয়েন্দা বিভাগের চার সিনিয়র কর্মকর্তা ও একজন উপদেষ্টাকে বরখাস্ত করেন। ট্রাম্পও শেষ পর্যন্ত মন্তব্য করেন যে, খাশোগি হত্যা সম্পর্কে সৌদি যুবরাজের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। অন্যান্য দেশ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়া নিয়ে প্রথমে খুব হম্বিতম্বি করলেও পরে তারা গোঁফ নামিয়ে ফেলে। অনেক পর্যবেক্ষকের বিশ্বাস এর কারণ হলো সৌদি সোনা ও তেলের ওপর নির্ভরশীলতা। যুক্তরাষ্ট্র সৌদি তেলের ওপর নির্ভরশীল। নিজ দেশে পেট্রোলের দাম কমিয়ে রাখার জন্য দেশটির এই সৌদি সম্পদ প্রয়োজন। ট্রাম্প ইরানের ওপর যে অবরোধ দিয়েছেন, তার ফলে বিশ্ব তেলের বাজারে সরবরাহে টান ধরেছে। ইরানের রফতানি দিনে ব্যারেলপ্রতি ১০ লাখ ব্যারেল হ্রাস পেয়েছে এবং সৌদি উৎপাদন জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে দৈনিক ৩ লাখ ব্যারেল বেড়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম ইতোমধ্যে এক শ’ ডলারের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। এই মূল্যবদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মার্কিন রফতানি বাড়ানোর জন্য ট্রাম্পের সৌদি আরবকে প্রয়োজন। এত ঘটনার পরও সৌদি সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। সৌদি তেলমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন যে, বৈশ্বিক তেলের চাহিদা যাতে মেটানো যায় সৌদি আরব তা নিশ্চিত করবে। ট্রাম্পের নমনীয় ভূমিকা এবং সৌদি তেল উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতির মধ্যে সুস্পষ্ট কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা পরিষ্কার বোঝা না গেলেও, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, খাশোগি হত্যাকে কেন্দ্র করে শাস্তি এড়ানোর জন্য তেলই হচ্ছে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় দরকষাকষির অস্ত্র। খাশোগি হত্যায় সৌদি সরকারের ভূমিকা সম্পর্কিত প্রকৃত সত্য প্রকাশ হবার পর বন্ধুভাবাপন্ন রিপাবলিকান সদস্যদেরও অনেকে রিয়াদের ওপর অবরোধ আরোপ ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার দাবি তুলেছিল। ইরানের প্রেসিন্টে হাসান রুহানি ট্রাম্পের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, মার্কিন সাহায্য সহায়তা ছাড়া এই ঘৃণ্য হত্যার কথা চিন্তাই করা যায় না। এদিকে সন্দেহের তীর যার ওপর সেই সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কিন্তু দিব্যি আছেন। আছেন কারণ তার হাতে একদিকে আছে তেল, অন্যদিকে অস্ত্র কেনার মতো পয়সা। যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক রাজনীতিক সৌদি আরবের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং নির্যাতনের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে এমন অনেক গোয়েন্দা নজরদারি সরঞ্জাম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানালেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ব্যাপারে সত্যিকারের কোন উদ্যোগ নেয়নি। না নেয়ার কারণও আছে। তেল সৌদি আরবের প্রধান রফতানি পণ্য এবং তেলের প্রবাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে তারা সৌদি তেল উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে। ইরানী তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে যে ঘাটতি হয়েছে তা মেটানোর জন্যও সৌদি তেল দরকার। যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল শেল অয়েল উৎপাদিত হলেও সৌদি আরব কানাডার পর যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল আমদানির উৎস। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র দিনে পৌনে নয় লাখ ব্যারেল সৌদি তেল আমদানি করেছে। পাশ্চাত্যের ক্রেতা দেশগুলোর কাছে তেল বিক্রি করে সৌদি আরবের যে আয় হয়, তা দিয়ে সে মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব বজায় রাখা ও বাড়ানোর জন্য অস্ত্র কিনে থাকে। দেখা গেছে যে আগের বছরের তুলনায় ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ৫৫৬ কোটি ডলারের অস্ত্র ছিল গোপন চুক্তির অধীনে। ৫৫৬ কোটি ডলারের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছিল সৌদি আরবের ৮৪টি এফ-১৫ বিমান কেনার জন্য। অবশ্য ২০১৭ সালে সৌদি আরব যে পরিমাণ মার্কিন অস্ত্র কিনেছিল, তার তুলনায় এটা নস্যি। কাজেই খাশোগির মৃত্যুকে লোমহর্ষক ও জঘন্য ধরনের ধামাচাপা আখ্যায়িত করলেও ট্রাম্প সৌদি তেল কেনা, সৌদির কাছে নিজের অস্ত্র বেচা এবং হাজার হাজার লোকের চাকরি রক্ষার জন্য এই মৃত্যুর ব্যাপারে সৌদি আরবের প্রতি খুব সাবধানে আচরণ করছে। একই কথা প্রয্যেজ্য অন্যান্য প্রধান অস্ত্র রফতানিকারী দেশ ব্রিটেন ও ফ্রান্সের ক্ষেত্রেও। জার্মানি যদিও বলেছে যে, খাশোগি হত্যার কারণে দেশটি সৌদি আরবে অস্ত্র রফতানি বন্ধ করছে এবং ইউরোপের অন্য দেশকেও একই পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। তথাপি অস্ত্র বিক্রির লাভের অঙ্কটা এমন যে, প্রতিবেশীরা সে অনুরোধে কান দেবে কিনা সন্দেহ। খাশোগিকে কেন প্রাণ দিতে হলো ৫৯ বছর বয়স্ক সাংবাদিক, ভাষ্যকার ও সৌদি রাজনৈতিক বিরুদ্ধবাদীকে তাঁর ভূমিকার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিল। অথচ মানুষটি সৌদি সরকারের প্রতি অত বিপজ্জনক ছিলেন না, যদিও তিনি ছিলেন সৌদি রাজতন্ত্র ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচক। বলাবাহুল্য তার হত্যাকা-ে ¯্রফে এক ঘাতক স্কোয়াডের হাতে ঘটে গেছে, তা নয়। সৌদি আরবে এ ধরনের হত্যা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ ছাড়া হয় না। বহু বছরের অভিজ্ঞতা থেকেই খাশোগি বুঝেছিলেন কখন নিশ্চুপ থাকতে হয়। যেমন ধরুন, তিনি ভালমতোই জানতেন যে, জেদ্দায় নতুন পয়োনিষ্কাশনের যে মহাপরিকল্পনা সৌদি সরকার নিয়েছে, তাতে ফুটপাথের ওপর স্্েরফ ম্যানহোল কভার স্থাপন করা হবে। ভেতরে কোন পাইপ থাকবে না। এজাতীয় দুর্নীতি তার দেশে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু দেশের অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র আল-ওয়াতান এর সম্পাদক হিসেবে তিনি তাঁর পত্রিকায় এ সংক্রান্ত কোন খবর ছাপেননি। সে সময় তাঁর বন্ধুদেরও গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি তা নিয়েও কিছু বলেননি। তিনি তার চাকরি বা তাঁর স্বাধীনতা হারাতে চাননি। তবে নিজের পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কখনও কখনও পত্রিকায় কৌতুক লিখতেন। যেমন, সরকার নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় নিজ পত্রিকায় বেশ কিছু কলাম লেখেন। তাতে কল্পনায় দেখান কোন মেয়ে যদি উটের পিঠে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় তবে কেমন হবে? কোন মহিলার উটের পিঠে চলাচল করা তো আইনবিরুদ্ধ নয়। পরের সপ্তাহে একইভাবে দেখান একটা মেয়ে সাইকেলে চড়ে যাচ্ছে। এর পরের বার দেখান গাধার পিঠে চড়ে যাচ্ছে। এইভাবে একই আইনগত ফাঁকফোকরগুলো একই রকমের বেয়ারা প্রশ্নের আকারে তুলে ধরা হয়। খাশোগি সহজাতভাবে রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন। তথাপি তিনি প্রশ্নগুলো তুলেছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ বিন সৌদের চিকিৎসক। খাশোগি আশির দশকে আফগানিস্তান থেকে রিপোর্টিং করেছিলেন, সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করেছিলেন, সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে কিছু যোগসূত্র রচনার ও তাদের প্রভাব সুনিশ্চিত করার জন্য ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে পৌঁছেছিলেন। এই জটিল ও বিপজ্জনক কাজ করার জন্য কয়েক বছর তিনি সৌদি শাহজাদাদের সুনজরে ছিলেন। আমেরিকায় ব্যবসায়ের ওপর পড়াশোনা করার সুবাদে এবং ভাল ইংরেজী বলতে পারায় তিনি লন্ডন ও ওয়াশিংটনে সৌদি রাষ্ট্রদূতের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তুরস্ক ও ফ্রান্সের নেতৃবৃন্দ ও সর্বত্র বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। জেদ্দায় সংবাদপত্রে কাজ করার সময় বিদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর মেলামেশা হতো। তবে তাঁর মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহাত্মক কিছু ছিল বলে শোনা যায়নি। দু’একবার মদ্যপানের সময়ও তিনি সৌদি আরবের অবস্থা সম্পর্কে বেফাঁস কিছু বলেননি। তিনি ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান মানতেন। তবে অষ্টাদেশ শতকের সালাফি ওয়াহাবী মতবাদের প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র দুর্বলতা বা আকর্ষণ ছিল না। যৌবনে গোঁড়ামি ভাবধারীর বিপরীতে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড করতেন এবং অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেন যে, সকল রাজনৈতিক ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু সৌদি আরব এই ব্রাদারহুডের ওপর খড়গহস্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর কাছে ব্রাদারহুড ছিল গণতান্ত্রিক, এমনকি মুক্তি আন্দোলন। একইভাবে তিনি সৌদি আরবের জানি দুশমন কাতারের সঙ্গে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করতেন। আল জাজিরা নেটওয়ার্কের ভূয়সী প্রশংসা করতেন তিনি এবং স্বদেশে এর অনুকরণ করবেন বলে ভাবছিলেন। কাতারকে আঘাত হানা আরব বসন্তের সমস্ত অভিপ্রকাশকে ধ্বংস করে দেয়ার নামান্তর বলে তার ধারণা। আরব বসন্ত জাগ্রত হওয়ার পর এর অপমৃত্যুতে অনেকের মতো তিনিও ব্যথিত হয়েছিলেন। স্বদেশে তিনি বাকস্বাধীনতার সুযোগ পাননি। তাই ওপথ মাড়ানোর চেষ্টা করেননি। তার চেয়ে বরং অধিক পীড়াদায়ক অর্থনৈতিক সমস্যাবলীকে তুলে ধরার প্রতিই তিনি অধিকতর মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বিশেষ করে তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন যে, দেশের বিপুল পেট্রোডলার মুষ্টিমেয় কিছু মানুষকে সমৃদ্ধ করার জন্য লুটে নেয়া হচ্ছেÑ শিক্ষালয় বা মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে নয়। তাঁর সর্বশেষ বইয়ে তিনি ইসলামী বিপ্লব নিয়ে নয়, বরং এসব নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছিলেন। তবে যতই দিন গেছে ততই তিনি তাঁর সাংবাদিকতা পেশায় দুঃসাহসী হয়ে উঠেছিলেন। বিরোধী দলের অবস্থান থেকে বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এর জন্য ২০০৩ সালে ও ২০১০ সালেÑ দুবার আল-ওয়াতান থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। ২০০৫ সালে সৌদি অর্থায়নে তিনি বাহরাইনে একটি নিউজ চ্যানেল স্থাপন করেন। কিন্তু উদ্বোধনের দিনটিতেই একজন স্থানীয় অধিকারকর্মীর সাক্ষাতকার প্রচারের জন্য চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকার পরে তার টুইটারও নিষিদ্ধ করে, যেখানে তাঁর প্রায় ২০ লাখ অনুসারী ছিল। তাঁর লেখালেখিও নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৭ সালে তিনি তরুণ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নয়া সরকারের শাণিত সমালোচনা করেন। তাঁকে বলা হয় যুবরাজের সংস্কারের জন্য তাঁর কৃতজ্ঞ থাকা এবং সেই কারণে নীরব থাকা উচিত। কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। ক্রমবর্ধমান ব্যক্তিপূজা ও কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা তিনি সইতে পারেননি। সেসবের মৃদু সমালোচনাও যখন সহ্য করা হলো না, তখন তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমান। ওয়াশিংটন থেকে তিনি লক্ষ্য করেন যে, দেশে তাঁর সহকর্মী সাংবাদিকদের বাড়িতে ঢুকে নিরাপত্তা বাহিনী সব তছনছ করছে। বইপত্র, নথিপত্র, কম্পিউটার সব নিয়ে যাচ্ছে। ইনস্টাগ্রামে তিনি এসব তুলে ধরেন। ওয়াশিংটন পোস্টের কলামে তিনি অভিযোগ করেন যে, অধৈর্য যুবরাজ সালমান বিচারের নামে প্রহসন করছেন। ভøাদিমির পুতিনের মতো আচরণ করছেন। স্বভাবতই তাঁর এই ভূমিকা সৌদি কর্তৃপক্ষের মনোপূত হওয়ার কথা নয়। তিনি যে তাদের রোষানলে পড়েছিলেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই ইস্তানবুুলে সৌদি কনস্যুলেটে ডিভোর্সের কাগজপত্র নিতে যাওয়ার আগেই সৌদি আরব থেকে ঘাতক দল এসে ওত পেতে ছিল। তাঁর হত্যার নির্দেশটা যে সর্বোচ্চ মহল থেকে এসেছিলে, তা বলাই বাহুল্য। সূত্র : ইকোনমিস্ট ও টাইম
×