ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শাকিল আহমেদ

তিল বা আঁচিল সৌন্দর্য না বিপদ

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১২ নভেম্বর ২০১৮

তিল বা আঁচিল  সৌন্দর্য  না বিপদ

ভাবুন দেখি, একসময়ের বিশ্ব মাতানো সঙ্গীতশিল্পী ম্যাডোনা কিংবা সৌন্দর্যের দেবী বলে খ্যাত হলিউড মডেল ও অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর ঠোঁটের পাশের তিলটির কথা! ওই একটিমাত্র তিল তাদের সৌন্দর্যকে করেছে বহুগুণ, করেছে আকর্ষণীয় আর কাম্য। ঠোঁটের কোনে, গালে কিংবা ঘাড়ে ছোট্ট একটি তিল। শুধু হলিউড কেন, বাঙালী নারীরাও পিছিয়ে নেই। সুচিত্রা সেন, সুজাতা, শর্মিলী আহমেদ, পারভীন সুলতানা দিতি- যাদের চেহারায় থাকা তিল এক অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে তাদের ভাবমূর্তির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। শরীরের কোন বিশেষ অংশে একটি তিলের অবস্থান সেই অঙ্গের সৌন্দর্যকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে সাধারণত। ইংরেজীতে ‘ফ্রিকেলস’ নামে পরিচিত শরীরের কালো কালো এই দাগগুলো ক্ষেত্র বিশেষে আবার ‘বিউটি স্পট’ নামেও পরিচিত। সবার শরীরের নানা স্থানেই কম-বেশি তিল থাকে। ছোট-বড় সব ধরনের তিলই দেখা যায়। তবে শরীরে এদের আধিক্য দেখা দিলে বা তা দেখতে বিদ্ঘুুটে আকৃতির হলে, অনেক সময় প্রকৃতির এই উপহার কারও কারও জন্য উপদ্রব হয়ে উঠতে পারে। তখন এগুলো দেখতে তো অস্বাভাবিক লাগেই, এমনকি বাইরের কোন উদ্দীপনার প্রভাবে এগুলো পরিবর্তিত হয়ে ত্বকের ‘মেলানোমা’ নামক মারাত্মক ক্যান্সারেও রূপ নিতে পারে। আর তাই তিল, আঁচিল বা জড়ুলের মেলানোমায় রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিষয়গুলো জানাতে আজকের এই আয়োজন। তিল আসলে কী? ত্বকের সৌন্দর্যবর্ধক এসব তিল বা জড়ুল আসলে এক ধরনের ‘বিনাইন টিউমার’, অর্থাৎ এই টিউমার মারাত্মক নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাকে বলে ‘মেলানোসাইটিক নিভাস (Melanocytic nevus)। সাধারণত, ত্বকের রঞ্জক পদার্থ মেলানিন উৎপন্নকারী কোষ ‘মেলানোসাইট’ ত্বক জুড়ে সমানভাবে বিস্তৃত হয়ে ত্বকের রং তৈরি করে। তবে কোথাও কোথাও এরা গুচ্ছবদ্ধ হয়ে সংখ্যা বৃদ্ধি করার ফলে উৎপন্ন হয় মেলানোসাইটিক নিভাস। এগুলো চামড়ার সঙ্গে সমতল বা উঁচু হয়েও থাকতে পারে, হতে পারে গোলাকৃতির বা ডিম্বাকৃতির, কোন কোনটিতে আবার লোম গজাতেও দেখা যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে গড়ে দশ থেকে চল্লিশটি তিল থাকা স্বাভাবিক। তিল কিংবা আঁচিলকে সাধারণভাবে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দেই না। মানুষের শরীর পরিপূর্ণভাবে বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে ওঠে এগুলো। তবে সামান্য এই তিল কিংবা আঁচিলই অনেক সময় ত্বকে মেলানোমা নামক মারাত্মক ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এ ধরনের সমস্যা এড়াতে প্রয়োজন সাবধানতা ও সঠিক নির্দেশনা। তবে আর দেরি না করে আসুন জেনে নেই তিল কিংবা আঁচিল থেকে ত্বকে ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ সম্পর্কে। স্বাস্থ্যকর তিলগুলো সাধারণত একই রঙের হয়ে থাকে। কিন্তু এটি মেলানোমায় রূপান্তরিত হতে শুরু করলে এর রঙের গাঢ়ত্বের পরিবর্তন দেখা দেয়। তিল বা জড়ুল সাধারণত গোলাকৃতি বা ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে, অপরদিকে মেলানোমার এরকম নির্দিষ্ট কোন আকৃতি থাকে না। তিল প্রাথমিক অবস্থা থেকে বড় হওয়া বিপদের লক্ষণ। সাধারণভাবে বলা হয়, পেন্সিলের মাথায় লাগানো রাবারের চেয়ে (৬ মিমি) বড় হলে সেটির ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কিনারা উঁচু, আঁকাবাঁকা, এবড়োখেবড়ো মনে হতে পারে বা আশেপাশের চামড়ার সঙ্গে মিলিয়ে যেতে পারে। আগে যে তিল সমতল ছিল, হঠাৎ সেটি উঁচু হয়ে ওঠা বা একটি পিে র মত মনে হওয়া। আগের চেয়ে শক্ত বলেও মনে হতে পারে। নিভাসের মাঝখান বরাবর যদি একটি রেখা কল্পনা করা হয় এবং দেখা যায় এর এক অর্ধাংশের সঙ্গে অপর অর্ধাংশের মিল পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে এটি বিপদের লক্ষণ। এ ছাড়াও তিলে চুলকানি, রক্তপাত বা প্রদাহ দেখা দিলেও তা সতর্কবার্তা হিসেবে গণ্য। গবেষকদের মতে, শরীরে কোন তিল বা আঁচিল দেখে অস্বাভাবিক মনে হলে বা ব্যথা হলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি ত্বকের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ‘ব্রিটিশ জার্নাল অব ডার্মাটোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, তিল বা আঁচিলের যে কোন অস্বাভাবিকতাই ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। ঝুঁকিতে রয়েছেন যারা দেখতে শুনতে নিরীহ একটি তিল কেন ক্যান্সারে রুপ নেয় তার সুনির্দিষ্টভাবে কোন কারণ চিহ্নিত করা না গেলেও, যেসব কারণে মেলানোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে সেগুলো সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। যেমন- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেলানোমা বা ত্বকের ক্যান্সারের জন্য সবচাইতে বেশি দায়ী ‘আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি।’ সূর্যের আলো আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির প্রধান উৎস। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মাধ্যমেও মানুষ অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসতে পারে। এই রশ্মি চামড়ার কোষের ডিএনএএর ক্ষতি করে, ফলে মেলানোমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
×