ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১২ নভেম্বর ২০১৮

 অবশেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ টেস্টে ব্যাটিংয়ে যে দুর্দশা যাচ্ছিল, অবশেষে তা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ দলের কোন ইনিংসে দুই শ’ রান করাই কঠিন হয়ে পড়েছিল, সেই দলই মিরপুর টেস্টের প্রথমদিনে ৩০৩ রান করে ফেলেছে। দুই সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল-মুশফিকের চতুর্থ উইকেটে ২৬৬ রানের রেকর্ড জুটিতে তা সম্ভব হয়েছে। সিরিজ বাঁচানোর টেস্টে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। টেস্টে টস জেতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেই টস জিতলও বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুটা হলো আবারও বাজে। ২৬ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসল। প্রথম টেস্টের বেহাল দশাই কী তাহলে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফিরে আসল? এমন প্রশ্ন সঙ্গে সঙ্গে ওঠে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪৩ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হতেই যখন দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাস আবার ব্যর্থ হন, সঙ্গে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা মোহাম্মদ মিঠুনও দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন; তখন শঙ্কা জেগেই যায়। বাংলাদেশও চাপে পড়ে যায়। তবে আশাও থাকে মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহীম যে ইদানীং টেস্টে ভাল করছেন না, তাদের কাছ থেকে বড় ইনিংস ও জুটি পাওনা আছে। দুইজন মিলে সেদিকে এগিয়েও যান। শুধু এগিয়েই যাননি। দুইজন মিলে চতুর্থ উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের জুটিও গড়েছেন। সকালের সেশন শুরু হতে ১২ ওভারের মধ্যে তিন উইকেট পড়ার পর মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতি পর্যন্ত আর কোন উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। মুমিনুল ও মুশফিক মিলে প্রথম সেশন শেষ করেন। ৩ উইকেট হারিয়ে দল ৫৬ রানও করে। দ্বিতীয় সেশনও এই দুইজনই অতিক্রম করে দেন। ২০৭ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়ে যায়। এরই মধ্যে মুমিনুল ৯২ বলে ৫০ করার পর ১৫০ বলে ১০০ রানও করে ফেলেন। ক্যারিয়ারের সপ্তম টেস্ট শতকও করে ফেলেন মুমিনুল। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালে করা শতকের (১৩১*) পর দ্বিতীয় টেস্ট শতক করেন। মুশফিক ১০০ বলে করেন ৫০ রান। দুইজনের জুটির রেকর্ডও হয়ে যায়। ১৮১ রানের জুটি হতেই দেশের হয়ে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়া হয়। এর আগে বছরের শুরুতে মুমিনুল ও লিটন মিলে চতুর্থ উইকেটে নিজেদের সর্বোচ্চ ১৮০ রানের জুটি গড়েছিলেন। এবারও সেরা জুটিতে থাকলেন মুমিনুল। শুরুতে ২৬ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর প্রথম সেশনে ৫৬ ও দ্বিতীয় সেশনে ১৫১ রান যোগ করেন দুইজন। তাতেই বাংলাদেশের রান ২০০ অতিক্রম করে ফেলে। বাংলাদেশ দল সর্বশেষ আট ইনিংসে ২০০ রানই কোন ইনিংসে করতে পারেনি। এবার তা ছাড়িয়ে বহুদূর এগিয়ে যায়। দুইজন মিলে তৃতীয় সেশনের শুরুতে ২০০ রানের জুটিও করে ফেলেন। দেখতে দেখতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন মুশফিক ও মুমিনুল। জুটিতে ২২৫ রান হতেই ২০১৪ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তামিম ও ইমরুলের করা ২২৪ রানের জুটির রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন জুটি গড়েন দুইজন। মুমিনুল শতক করেছেন। মুশফিক কী আর বসে থাকবেন? তিনিও ১৮৭ বলে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ শতক তুলে নেন। ২২ ইনিংস এবং আঠারো মাস পর মুশফিক টেস্টে শতকের চেহারা দেখেন। সর্বশেষ গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি (১২৭ রান) করেছিলেন মুশফিক। মুমিনুল আগ্রাসী হয়ে খেলতে থাকেন। তাতে করে ২৩৯ বলে ১৫০ রানও করে ফেলেন মুমিনুল। দিনের শেষ মুহূর্তে গিয়ে ৪ ওভার বাকি থাকতে মুমিনুল ২৪৭ বলে ১৯ চারে ১৬১ রান করে আউট হয়ে যান। ততক্ষণে অবশ্য বড় রানই স্কোরবোর্ডে জমা হয়ে যায়। ২৯২ রান হয়। মুমিনুল-মুশফিক জুটিতেও ২৬৬ রান হয়। কোন উইকেট যেন আর না পড়ে এ জন্য ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে তাইজুল ইসলামকে নামানো হয়। কিন্তু ১ ওভার বাকি থাকতে তাইজুলও আউট হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ২৩১ বলে ৯ চারে ১১১ রান করে মুশফিক ও মাঠে নেমে কোন বল না খেলা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ব্যাট হাতে আছেন। আজ এ দুইজন বাংলাদেশ দলের স্কোরবোর্ডকে আরও মজবুত করতে নামবেন। মিরপুর টেস্টের প্রথমদিনে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০৩ রান করেছে বাংলাদেশ। টানা আট ইনিংস পর বাংলাদেশ দুই শ’ই নয়, তিন শ’ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে ফেলেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০৭ রান করেছিল। এরপর চলমান মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসের আগে টানা আট ইনিংসে দুই শ’ রানের কোন স্কোরই নেই। গত টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে যে ১৬৯ রান করে বাংলাদেশ সেটিই সর্বশেষ আট ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। কি করুণ দশায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্টে ব্যাটিংয়ে যে বেহাল দশা যাচ্ছিল তা থেকে অবশেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।
×