ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চতুর্থ উইকেটে জুটির রেকর্ড, এক ইনিংসে নবমবারের মতো দুই সেঞ্চুরি

মিরপুরে মুমিনুল-মুশফিকের ধ্রুপদী সেঞ্চুরি

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১২ নভেম্বর ২০১৮

মিরপুরে মুমিনুল-মুশফিকের ধ্রুপদী সেঞ্চুরি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ অনেক চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে নামতে হয়েছিল মিরপুর টেস্টে। চাপের মুখে বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরাই ছিলেন। কারণ গত ৪ টেস্টে বাংলাদেশ দলের সময়টা ভয়ানক বাজে কেটেছে। টেস্ট ক্রিকেটের স্পেশালিস্ট হিসেবে স্বীকৃত মুমিনুল হক ও মিডল অর্ডারের স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত মুশফিকুর রহীম রান খরায় থাকার বিষয়টি ছিল আলোচিত। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ১৫১ রানে হারের পর ধারাবাহিক ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙ্গার কঠিন পরীক্ষা ছিল। সেখানে সবচেয়ে জরুরী বিষয় ছিল এ দুই অপরিহার্য ব্যাটসম্যানের জ্বলে ওঠা। ৮ ইনিংস পর অবশেষে দু’জনই নিজেদের ফিরে পেয়েছেন। চোয়ালবদ্ধ দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ব্যাট চালিয়ে উভয়ে রবিবার মিরপুর টেস্টের প্রথমদিন তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। দলের প্রাথমিক বিপর্যয়ের মুখে ২৬৬ রানের যে জুটি গড়েছেন দু’জন মিলে তা ছিল টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ উইকেটের রেকর্ড। আর এটি নিয়ে কোন টেস্ট ম্যাচের এক ইনিংসে নবমবারের মতো দুই বাংলাদেশের পক্ষে দুই সেঞ্চুরি দেখা গেছে। মুমিনুল ১৬১ রানে সাজঘরে ফিরলেও মুশফিক দিনশেষে অপরাজিত ১১১ রানে। গত ৪ টেস্টের ৮ ইনিংসে বাংলাদেশের ইনিংসগুলো ছিল- ১১০ ও ১২৩, ৪৩ ও ১৪৪, ১৪৯ ও ১৬৮ এবং ১৪৩ ও ১৬৯! অর্থাৎ ২০০ রানও আসেনি। হুট করে দলের এমন নাজুক পরিস্থিতির কারণ হিসেবে দেখা গেছে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। বিশেষ করে দেশের হয়ে সর্বাধিক ৬৩ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মুশফিকের ব্যাটে রানের খরাটা দলকে দুর্দশাগ্রস্ত করেছে। ধারাবাহিকভাবে সফল ব্যাটসম্যান মুশফিকের হঠাৎ করে ব্যাটিং পারফর্মেন্সে নিম্নগতি। ৩১ বছর বয়সী এ ডানহাতি গত ৫ টেস্টের ৯ ইনিংসে কোন অর্ধশতকও হাঁকাতে পারেননি। তিনি ৯ ইনিংসে করেছেন ১৫ গড়ে ১৩৫ রান, সর্বোচ্চ ইনিংসটি ৩১ রানের। অপরদিকে শুধু টেস্ট ক্রিকেটেই নিয়মিত মুমিনুল। টেস্টে দেশের পক্ষে সর্বাধিক ৪২.১১ ব্যাটিং গড়ের ২৭ বছর বয়সী এ ওয়ানডাউন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান গত ৮ ইনিংসে মাত্র ৮.৬২ গড়ে করেছেন ৬৯ রান, সর্বোচ্চ ৩৩। দু’জনেরই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রবিবার দ্বিতীয় টেস্টের প্রথমদিন। লড়াইটা তাদের খুব দ্রুতই শুরু হয়েছিল। দলীয় ২৬ রানের মধ্যেই ৩ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে গেছেন। তখন দিনের প্রথম ঘণ্টাই পেরোয়নি। তাই আরেকবার কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয়েছে মুমিনুল-মুশফিককে। তবে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতি পর্যন্ত আর তারা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জিম্বাবুইয়ের পেসারদের সুযোগ দেননি। দীর্ঘদিন পর স্থৈর্য ও ধৈর্য দেখিয়ে দেখেশুনে ব্যাট করেছেন তারা প্রথম থেকেই। বিপদের মুখে প্রতিরোধের জন্য যা কাম্য ছিল সেটাই করে দিনের প্রথম সেশনটায় আর দলের বিপদ হতে দেননি। তখন সবেমাত্র উইকেটে থিতু হতে শুরু করেছেন তারা। মুমিনুল সুযোগ দিয়েছিলেন ব্যক্তিগত ৯ রানে তেন্ডাই চাতারার বলে ক্যাচ দিলেও সেটা তালুবন্দী করতে পারেননি ব্রায়ান চারি। এরপর আর কোন সমস্যা হয়নি তার। কারণ উইকেটে থেকে তাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন মুশফিক এবং কৌশলগত পরামর্শও দিয়েছেন। দিনশেষে এমনটাই জানিয়েছেন মুমিনুল। মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির পর অনেকটাই সাবলীল হয়ে খেলেছেন মুমিনুল-মুশফিক। এক ঘণ্টা না পেরোতেই অর্ধশতক হাঁকান মুমিনুল। আর মুশফিকও দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেকটি অর্ধশতকের দ্বারপ্রান্তে। পুরো সেশনটাই তারা নির্বিঘেœ কাটিয়ে দেন প্রতিপক্ষ বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে। অনেকটাই দ্রুতগতিতে তারা এই সেশনে ১৫১ রান তুলে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি পান মুমিনুল। ৮ ইনিংস পর প্রথম অর্ধশতক পেয়েই সেটিকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করলেন এ ২৭ বছর বয়সী বাঁহাতি। ৯ ইনিংস পর ততক্ষণে অর্ধশতকের দেখা পেয়ে গেছেন মুশফিকও। এটি ছিল টেস্টের এক ইনিংসে দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি হাঁকানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নবম ঘটনা। এক ইনিংস দুই সেঞ্চুরি প্রথমবার ২০০৪ সালের মে মাসে সেন্ট লুসিয়ায় হাবিবুল বাশার ১১৩ ও মোহাম্মদ রফিক ১১১ হাঁকিয়েছিলেন। এরপর ২০১৩ সালের মার্চে গল টেস্টের এক ইনিংসে সেঞ্চুরি মুশফিক (২০০), মোহাম্মদ আশরাফুল (১৯০) ও নাসির হোসেন (১০০), একই বছর অক্টোবরে চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুমিনুল ১৮১ ও সোহাগ গাজী ১০১*, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ইমরুল কায়েস ১১৫ ও মুমিনুল ১০০* এবং নবেম্বরে খুলনায় জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তামিম ১০৯ ও সাকিব ১৩৭ ও পরের টেস্টে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ইমরুল ১৩০, তামিম ১০৯ ও ২০১৫ সালের এপ্রিলে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে তামিম ২০৬, ইমরুল ১৫০ ও গত বছর জানুয়ারিতে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব ২১৭ ও মুশফিক ১৫৯ করেছিলেন। চা বিরতির পর প্রথম বলেই মুমিনুল আরেকটি সুযোগ দিয়েছিলেন উইকেটরক্ষক ব্রেন্ডন টেইলরকে। কিন্তু জারভিসের বলে সেটিতে তালুবন্দী করতে পারেননি তিনি। সে সময় মুমিনুলের রান ছিল ১১৫। তারপর নির্বিঘেœই খেলতে থাকেন। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিকও। ২২ ইনিংস ও ১৮ মাস পর তিনি আবার সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। দারুণ এই জুটিটি প্রথমদিনটা শেষ করে ফেলছিলেন। কিন্তু ২৬ বল বাকি থাকতে আরেকটি ভুল করেন মুমিনুল। চাতারার বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন পয়েন্টে দাঁড়ানো চারিকে। ক্যারিয়ারের তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৬১ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ২৪৭ বলে ১৯ চারে এ রান করেছিলেন মুমিনুল। জুটিতে ২৬৬ রান উঠেছে। এটি বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে যে কোন উইকেটে চতুর্থ এবং জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি। যে কোন উইকেটে ৩৫৯ রানের জুটির রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। পঞ্চম উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে গত বছর জানুয়ারিতে মুশফিক-সাকিব জুটিটি গড়েছিলেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে যে কোন উইকেটে সর্বাধিক ২২৪ রান তোলার রেকর্ড ছিল আগে। চট্টগ্রামে ২০১৪ সালের নবেম্বরে সেই জুটি গড়েছিলেন উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। আর চতুর্থ উইকেট জুটির নতুন রেকর্ড ছিল এটি। এর আগে চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি ছিল ১৮০ রানের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি বছর জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে সেই জুটি উপহার দিয়েছিলেন লিটন দাস ও মুমিনুল। প্রায় পুরো দিনে উইকেটের সঙ্গী মুমিনুলকে হারালেও মুশফিক দিন শেষ করে অপরাজিত থেকে। মাঝে তাইজুল ইসলামের উইকেটটিও যেতে দেখেছেন তিনি। নিয়ন্ত্রিত ও নিñিদ্র ১১১ রানের ইনিংস তিনি ২৩১ বলে ৯ চারে সাজিয়েছেন।
×