ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অবসানের এক শ’ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ম্যাক্রোঁ ॥ প্যারিসে বিশ্বনেতাদের সমাবেশ

বিশ্বে শান্তি চায় জার্মানি ও ফ্রান্স

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১২ নভেম্বর ২০১৮

বিশ্বে শান্তি চায় জার্মানি ও ফ্রান্স

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অবসানের ১শ’ বছর পূর্তি উপলক্ষে রবিবার বিশ্বনেতারা প্যারিসে সমবেত হন। এর আগে শনিবার ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হওয়ার জায়গা পরিদর্শন করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও সেখানে যাওয়ার কথা ছিল তবে তিনি তাদের সঙ্গে যোগ দেননি। বিবিসি। প্যারিসের উত্তরাঞ্চলীয় কম্পিয়েন এলাকায় রেলগাড়ির একটি কামরা সংরক্ষিত আছে। ১৯১৮ সালের ১১ নবেম্বর সেখানেই পশ্চিমা জোটের জার্মানির একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির ফলে পরিসমাপ্তি ঘটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের। এ যুদ্ধ ৯০ লাখ সৈন্য ও ৫০ লাখ বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৪০ সালের পর এই প্রথম জার্মান ও ফরাসী নেতৃবৃন্দ স্থানটি পরিদর্শন করলেন। দুটি বিশ্বযুদ্ধ চলাকালেই জার্মানি ও ফ্রান্স পরস্পর শত্রুপক্ষে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দেশ দুটি পরস্পরের মিত্র হয়। জার্মানি ও ফ্রান্সের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইউরোপীয় সংহতির অন্যতম ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়। যে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয় রবিবার ম্যাক্রোঁ ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান। ১শ’ বছর পরে ম্যাক্রোঁ প্যারিসের আক দ্য ত্রিয়ুফের নিচে দাঁড়িয়ে ওই সৈন্য ও তাদের পরিবারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভাষণ দেন। ১৮০৬ সালে নেপোলিয়নের তৈরি ওই স্মৃতিস্তম্ভে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত অজ্ঞাত এক সৈন্যের সমাধি রয়েছে। মেরকেলকে সঙ্গে নিয়ে দেয়া ভাষণে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘ইউরোপ ৭৩ বছর ধরে শান্তিতে রয়েছে। আমরা শান্তিতে আছি, কারণ আমরা শান্তি চাই। জার্মানি ও ফ্রান্স শান্তি চায়।’ ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটার পরের অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি একথা বলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জার্মানির চ্যান্সেলর মেরকেল, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনসহ অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই এলিসি প্রাসাদে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন। রবিবার বিকেলে ম্যাক্রোঁ প্যারিস পিস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ব নেতাদের স্বাগত জানান। এই ফোরাম শাসন প্রক্রিয়া ও বহুপাক্ষিক নিরাপত্তা উদ্যোগের উন্নয়ন এবং যেসব ভুলের কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল তা এড়ানোর কৌশল উদ্ভাবনে কাজ করবে। তবে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ তত্ত্বের প্রবক্তা ফোরামের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। এদিকে ব্রিটেনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরিসমাপ্তির শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত একটি কনসার্টে যোগ দিয়েছেন রানী এলিজাবেথ। লন্ডনের রয়্যাল আলবার্ট হলে অনুষ্ঠিত ওই কনসার্টে রাজপরিবারের অন্য সদস্যরাও অংশ নেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করা হয়। যুদ্ধে নিহতদেরও স্মরণ করা হয় ওই অনুষ্ঠানে। দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে ডিউক ও ডাচেস অব ক্যামব্রিজ, ডিউক ও ডাচেস অব সাসেক্স অনুষ্ঠানে যোগ দেন। স্যার টম জোনস এবং শেরিড্যান স্মিথ কনসার্টে গান পরিবেশন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল ইতিহাসের অন্যতম রক্তাক্ত লড়াই। এই যুদ্ধে ইউরোপের রাজনীতি ও মানচিত্র বদলে যায়। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হলেও তা মাত্র দুই দশক টেকে, এরপর নাৎসি জার্মানির উত্থান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে।
×