ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত বেড়েছে ২৮ শতাংশ

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ও আমানত দুই-ই বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১২ নভেম্বর ২০১৮

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ও আমানত দুই-ই বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মূল ব্যাংকে গ্রাহক ও আমানত কমে গেলেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে দুটোই বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এক বছর আগে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ছিল ১০ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন। বর্তমানে সারাদেশে গ্রাহক সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। আর গত তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত বেড়েছে ২৮ শতাংশ। যদিও সরকারী ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় বিপুল পরিমাণ আমানত কমেছে। গত দুই মাসে শুধু জনতা ব্যাংক থেকেই আমানত কমেছে ২ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার আমানত হারিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। একইভাবে তিন মাসের ব্যবধানে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আমানত কমেছে রূপালী ব্যাংকে। অগ্রণী ব্যাংকে আমানত কমেছে দেড় হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকই শুধু নয়, এ বছরে জুনের তুলনায় জুলাইয়ে পুরো ব্যাংকিং খাতেই আমানত কমেছে। জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল (আন্তঃব্যাংক আমানত ছাড়া) ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। জুলাই শেষে তা ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকায় নেমে আসে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে .০৬ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘অনিয়ম দুর্নীতির কারণে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমলেও এজেন্ট ব্যাংকিং দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক খবর। তবে এর মাধ্যমে কেউ হুন্ডি ব্যবসা করছে কিনা তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১৭ ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক ছিলেন ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ জন। সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ২৮ হাজার ৮৬৮ জন। ২০১৮ সালের মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক ছিল ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭৯৭ জন। এই হিসাবে গত ছয় মাসে নতুন গ্রাহক বেড়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার ৭১ জন। তিন মাসে গ্রাহক ছাড়াও নতুন এজেন্ট যুক্ত হয়েছেন ৩১৪ জন। আর আউটলেট বেড়েছে ৪৪০টি। এই বছরের জুন পর্যন্ত ৫৩৫১টি আউটলেটে ৩৫৮৮ জন এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে ৩৯০২ জন এজেন্ট ৫৭৯১টি আউটলেটের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দিয়েছে। অবশ্য এই সময়ে একটি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট জমার পরিমাণ (আমানত) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। যা ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ৯২২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, শহরের চেয়ে গ্রামে এজেন্ট ব্যাংকিং বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে খোলা এ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৬.৬ গুণ। তবে, নারী এ্যাকাউন্টধারীদের চেয়ে পুরুষ এ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জন্য ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৮৯৯ জন পুরুষ ব্যাংক হিসাব খুলেছেন। আর নারীর সংখ্যা ৬ লাখ ১৭ হাজার ৮২৪ জন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারির পর ২০১৪ সালে প্রথম এ সেবা চালু করে বেসরকারী খাতের ব্যাংক এশিয়া। জানা গেছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহক তার চলতি হিসাবে সর্বোচ্চ চারবার ২৪ লাখ টাকা নগদ জমা এবং সর্বোচ্চ দু’টি লেনদেনে ১০ লাখ টাকা তুলতে পারেন। সঞ্চয়ী হিসাবে সর্বোচ্চ দু’বার ৮ লাখ টাকা নগদ জমা এবং সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা করে দু’টি লেনদেনে ৬ লাখ টাকা তুলতে পারেন। তবে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে টাকা তোলার সীমা প্রযোজ্য হয় না। দিনে দু’বার জমা ও উত্তোলন করা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণও হচ্ছে। বেসরকারী খাতের ছয়টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট ১৫০ কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামের উন্নতি মানেই দেশের উন্নতি। এ কারণেই গ্রাম এলাকায় ব্যাংকের শাখা স্থাপন, এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ব্যয় সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় প্রতিনিয়ত এর প্রসার ঘটছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত ২০টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি ব্যাংক মাঠপর্যায়ে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্যাংকগুলো হলো, এনআরবি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও এবি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
×