ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তোফায়েল আহমেদ

’৭০-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ও ঐতিহাসিক নির্বাচনের কথা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১২ নভেম্বর ২০১৮

’৭০-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ও ঐতিহাসিক নির্বাচনের কথা

১৯৭০-এর ১২ নবেম্বর আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে ১০ লক্ষাধিক লোক মৃত্যুবরণ করেছিল। অনেক পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। বহু পরিবার তাদের আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মা, ভাই-বোন হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল। প্রতিবছর যখন ১২ নবেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে ফিরে আসে, তখন বেদনাবিধুর সেই দিনটির কথা স্মৃতির পাতায় গভীরভাবে ভেসে ওঠে। সেদিন আমি ছিলাম জন্মস্থান ভোলায়। বঙ্গবন্ধু আমাকে আসন্ন নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে ব্যস্ত ছিলাম আমার নির্বাচনী এলাকায়। কয়েকদিন ধরেই গুমোট আবহাওয়া ছিল। বৃষ্টি এবং সেইসঙ্গে ছিল ঝড়ো বাতাস। এরকম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শামসুদ্দীন আহমেদ মিয়া, মাওলানা মমতাজুল করিম, মোস্তাফিজুর রহমান মিয়া ও রিয়াজউদ্দীন মোক্তারসহ অন্য নেতাদের নিয়ে আমার নির্বাচনী এলাকাসহ ভোলায় ব্যাপক গণসংযোগ করি। আমার নির্বাচনী এলাকা ছিল ভোলা থানা, দৌলতখাঁ থানা তজুমদ্দিন থানা। তখন মনপুরা ইউনিয়ন হয়নি। কিন্তু মনপুরার তিনটি ইউনিয়নও আমার নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর একটি এলাকা ছিল বোরহানউদ্দিন, লালমোহন এবং চরফ্যাশন। আমার নির্বাচনী এলাকাটি বড় ছিল। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু যখন আমাকে প্রস্তুতির নির্দেশ দেন তখন আমার বয়স মাত্র ২৬। ’৬৯-এর উত্তাল গণআন্দোলনে যে গণবিস্ফোরণ ঘটে তাতে ২৫ মার্চ আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতাসীন হন। এ সময় মার্শাল ল’র মধ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে সামরিক কর্তৃপক্ষ জুন মাস থেকে ঘরোয়া রাজনীতি দেয়। ’৭০-এর ৭ জুন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগে যোগদান করি। ’৭০-এ জানুয়ারির ১ তারিখ রাজনৈতিক তৎপরতার উপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহৃত হয়। তখন আমি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ডাকসুর ভিপি। ছাত্রলীগের উদ্যোগে আমার নেতৃত্বে সেদিন প্রথম জনসভা করি পল্টনে। তখনই বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ‘তুই ভোলা যাবি। সকল এরিয়া সফর করবি। আমি তোকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিব।’ এই কথাটা ভীষণভাবে আমার হৃদয়কে আলোড়িত করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতো ভোলা সফরে যাই এবং ভোলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তখন রাস্তা-ঘাট, পুল-কালভার্ট কিছুই ছিল না। ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাই। বঙ্গবন্ধু ১৭০০ টাকা দিয়ে একটা মোটরবাইক আমাকে কিনে দিয়েছিলেন। এই মোটরবাইক ছিল আমার বাহন। ভোলার মনপুরার সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন মহান ব্যক্তি বসরতউল্লাহ চৌধুরী, আমরা যাকে শাহজাদা ভাই বলে শ্রদ্ধা জানাতাম, তার একটি জিপ ছিল। এই জিপটি তিনি ’৭০-এর নির্বাচনে আমার নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের জন্য দিয়েছিলেন। তখন ভোলায় আমার কোন বাসাবাড়ি ছিল না। আমি শ্বশুরবাড়িতে থেকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনা করেছি। শাহজাদা ভাইয়ের বাসায় আমার নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করি। শাহজাদা ভাইয়ের কথা আমার ভীষণভাবে মনে পড়ে। তিনি ছিলেন উদার হৃদয়ের এক চমৎকার মানুষ। তাঁর সুযোগ্য সন্তান জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব নাজিমউদ্দীন চৌধুরী। আমি যখন নাজিমউদ্দীন চৌধুরীকে দেখি তখন আমার শাহজাদা ভাইয়ের কথা ভীষণভাবে মনে পড়ে। এপ্রিল মাসে ভোলার ৭টি উপজেলায় নির্বাচনী সভা করি। কখনও পায়ে হেঁটে, কখনওবা মোটরবাইক চালিয়ে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়েছে। কারণ, রাস্তা নেই, জিপ চলে না। যেখানে জিপ চলে সেখানে জিপের মধ্যে শামসুদ্দীন চাচা, মাওলানা মমতাজুল করিম, মোস্তাফিজ মাস্টার, রিয়াজুদ্দীন মোক্তার চারজন প্রবীণ নেতাকে নিয়ে যেতাম। কারণ, আমি ছিলাম ছোট। বয়স খুবই কম। বয়স্ক নেতাদের নিয়ে গেলে মানুষ সন্তুষ্ট হতো। যেখানে যেতাম মানুষ আমাকে দেখতে চাইত। কারণ, আমার এই সময়টা ছিল ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে। যে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমি মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিলাম। পত্র-পত্রিকায় বিভিন্নভাবে আমার সেই সংগ্রামী দিনগুলোর কথা প্রচারিত হয়েছিল। ভোলার যেখানেই গিয়েছি সেখানে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছে। তাদের সামনে বক্তৃতা করেছি। এভাবে যখন ১৭ এপ্রিল ৭টি জনসভা শেষে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবাকে জানালাম, বঙ্গবন্ধু আমাকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এমএনএ পদে মনোনয়ন দিতে চেয়েছেন তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘তুই এত অল্প বয়সে এমএনএ হবি। তোর বয়স মাত্র ২৬। আর আমার পরিবারের কেউ কোনদিন রাজনীতি করে নাই। এমনকি ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেম্বারও কেউ হয় নাই। তুই একসঙ্গে এমএনএ হয়ে যাবি।’ আমি বাবার দোয়া নিয়ে ঢাকায় ফিরে এলাম। তারপর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জনসভায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৫ এপ্রিল আমার জনসভা ছিল চট্টগ্রামের মিরেরশ্বরাই। যেখান থেকে এখন আমাদের গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তখন ’৭০-এ এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য) পদপ্রার্থী এবং আমাদের ফজলুল হক বিএসসি এমএনএ (জাতীয় পরিষদ সদস্য) পদপ্রার্থী। মিরেরশ্বরাইয়ের জনসভায় আমাদের প্রিয় নেতা চট্টগ্রামের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি এমএ আজিজসহ যখন সভা করছি তখন বঙ্গবন্ধু খবর পাঠিয়েছেন অনতিবিলম্বে আমি যেন ভোলা চলে যাই। বিশাল সেই জনসভায় লাখ লাখ লোক জমায়েত হয়েছিল। বক্তৃতা শেষ করে প্রয়াত নেতা আক্তারুজ্জামান বাবু ভাইয়ের (যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন) লাল রঙের গাড়িতে করে চাঁদপুর পর্যন্ত পৌঁছাই এবং ২৬ তারিখ সকালবেলা গ্রামের বাড়ি পৌঁছি। ততক্ষণে বাবার দাফন হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু আমাকে যেতে বলেছিলেন; কিন্তু বাবা মৃত্যুবরণ করেছেন এটা জানাননি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, বাবা আর নেই। বাবার সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় ১৭ এপ্রিল। প্রতি মাসে ভোলায় যাই। রাজনৈতিক গণসংযোগ ও নির্বাচনী জনসভা করি। ডিসেম্বরের ৭ তারিখ নির্বাচন যখন ঠিক তার ২৫ দিন আগে ১২ নবেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে ল-ভ- হলো দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। আমি তখন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায়। ১২ নবেম্বরের তিন-চারদিন আগ থেকেই বিভিন্ন জায়গায় বিরাট বিরাট জনসভা করেছি। ১০ তারিখ আমার জনসভা ছিল তজুমদ্দিনে। তখন তজুমদ্দিন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন টুনু চৌধুরী। জনসভা শেষ করে টুনু চৌধুরীর বাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা, পরে তজুমদ্দিন উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, মোশারফ হোসেন দুলালের বাড়িতে রাত কাটাই এবং ১১ তারিখ লালমোহনে মঙ্গল শিকদারে জনসভা করতে যাই। সেখানে বিশাল জনসভায় যখন বক্তৃতা করছি তখন শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি এবং প্রচ- ঝড়। এর মধ্যেই জনসভা শেষে প্রবীণ নেতৃবৃন্দসহ জিপে করে ভোলায় ফিরে আসি। ১২ তারিখ আমার জনসভা ছিল তজুমদ্দিনের দাসেরহাটে। আমি যখন শাহজাদা ভাইয়ের জিপে করে দৌলত খাঁ হয়ে তজুমদ্দিনে যাওয়া যেত। যখন রওনা করেছি তখন দৌলতখাঁ যাওয়ার পথে প্রচ- ঝড় শুরু হয়। সকলেই আমাকে নিষেধ করল আপনি এই জনসভায় যাবেন না। কিন্তু আমি তো রিক্সা করে মাইক পাঠিয়েছি। আমার লোক চলে গেছে দাসেরহাটে। আমার মা সংবাদ পেয়ে নিষেধ করলেন আমি যেন জনসভা বাতিল করি। বাধ্য হয়ে ফিরে এলাম। ফিরে রাতে শ্বশুরালয়ে অবস্থান করছি। মধ্য রাতে শুরু হয় তুমুল ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস। আমি ছিলাম ভোলা-১ আসনে এমএনএ পদপ্রার্থী। আরেক আসনে এমএনএ প্রার্থী ছিলেন আজহারউদ্দীন আহমেদ, যিনি অবসরপ্রাপ্ত মেজর বিএনপি নেতা হাফিজউদ্দীন আহমেদের পিতা। আর আমার নির্বাচনী এলাকায় এমপিএ প্রার্থী ছিলেন ভোলার মোশারফ হোসেন শাহজাহান, যিনি ’৭৫-এর পরে বিএনপিতে যোগদান করে এমপি এবং প্রতিমন্ত্রী হন। আর দৌলতখাঁ, তজুমদ্দিন, মনপুরায় এমপিএ পদপ্রার্থী ছিলেন নজরুল ইসলাম মাস্টার। তিনিও আমার প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। সকাল বেলা আমি এবং মোশারফ হোসেন শাহজাহান নদীর পাড়ে গিয়ে অবাক ও বিস্মিত হলাম। শুধু কাতারে কাতারে মানুষের মৃতদেহ। অসংখ্য লোকের মৃতদেহ আমাদের আতঙ্কিত করে তোলে। আমরা দিশেহারা হয়ে গেলাম। এখনও স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে শিবপুর ইউনিয়নে রতনপুর বাজারের পুকুর পাড়ে শত শত লোককে দাফন করার দৃশ্য! এত মৃতদেহ যে, দাফন করে আর কুলাতে পারছি না। যতদূর যাই শুধু মানুষের হাহাকার আর ক্রন্দন। এই শিবপুর ইউনিয়নে একটা বাড়ি যেখানে ৯০ জন লোক ছিল। কিন্তু বেঁচে ছিল মাত্র ৩ জন। যখন তজুমদ্দিনের খবর পাই তখন শুনি যে, ৪০% লোকের মৃত্যু হয়েছে। যে দাসেরহাটে জনসভা করার কথা ছিল সেখানে কিছুই নেই। আমার মাইক যে বহন করেছিলেন তিনিও মৃত্যুবরণ করেছেন। দাসেরহাটে বড় বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তারা সকলেই সর্বস্বান্ত। চিত্তবাবু নামে এক বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তার গুদাম ঘরে চাল, ধান, সুপারি ছিল। তিনি একেবারে রিক্ত। আমি দাসেরহাট, তজুমদ্দিন গিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ দেখে অবাক হলাম। ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তখন নির্বাচনী গণসংযোগে সাতক্ষীরায় অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে লোক মারফত ৫ হাজার টাকাসহ বার্তা পাঠালেন, আমি যেন সর্বত্র দুর্গত মানুষকে আশ্রয় দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করি এবং শুকনো খাবার বিশেষ করে চিড়া, মুড়ি ইত্যাদি মানুষের কাছে পৌঁছে দেই। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ত্রাণ কাজ করেছিলাম ’৭০-এর এই দিনগুলোতে। আমার শ্বশুরের গদিঘরে টেলিফোন ছিল। বঙ্গবন্ধু নম্বর সংগ্রহ করে আমাকে টেলিফোনে নির্দেশ দিলেন, “তুই দুর্গত এলাকার প্রত্যেকটা জায়গায় ক্যাম্প কর এবং লিখে রাখ ‘আর্তের সেবায় আওয়ামী লীগ’। অনেক মানুষ রিলিফ নিয়ে যাবে; কিন্তু এই দুর্গত অবস্থায় তারা মানুষের কাছে রিলিফ পৌঁছাতে পারবে না। কিছুটা বিলি করে বাকিটা তোর কাছে দিয়ে আসবে। তুই সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিবি।” আসলে হয়েছেও তাই। আমি ১২ তারিখের পর মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পানি, শুকনো খাবার, কেরোসিন তেল পৌঁছে দিয়েছি। হাবিবুর রহমান তালুকদার নামে একজন পরম শ্রদ্ধাভাজন মানুষ ছিলেন, যাকে আমি ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করতাম। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন এবং আমাকে তার ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তার একটি লঞ্চ ছিল। সেই লঞ্চে করে আমি নদীর পাড়ে পাড়ে মানুষের সেবা করেছি। আমি যখন রাস্তা দিয়ে যেতাম হাট-বাজার ভেঙ্গে মানুষ ছুটে আসত। সন্ধ্যাবেলায় এমন হতো যে, মানুষ আমার মুখের ওপর হারিকেন ধরত আমাকে এক নজর দেখার জন্য। মানুষ বলত, ‘ছেলেটাকে এক নজর দেখি’। ভোলার আঞ্চলিক ভাষায় বলত, ‘ছ্যামরাকে দেখি। ছ্যামরাকে দেখলে ছওয়াব হবে। আমাদের জন্য ও এত কাজ করে।’ মানুষ এভাবে মাথায় তুলে আমাকে তাদের হৃদয়ে ঠাঁই দিয়েছিল। ১৪ তারিখ বঙ্গবন্ধু ভোলায় ছুটে এলেন। ভোলায় বঙ্গবন্ধু আমার শ্বশুরালয়ে উঠলেন। সেখান থেকে হাবিবুর রহমান তালুকদারের লঞ্চে করে বঙ্গবন্ধুকে আমরা দুর্গত এলাকায় নিয়ে গেলাম। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, লাখো মানুষের মৃতদেহ আর সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া দুঃখী মানুষের পাশে তিনি দাঁড়ালেন। তাদের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দিয়ে তাদের সমব্যথী হলেন। যখন মনপুরায় গেলাম দেখি বহু লোকের ভিড়ে একজন সম্ভ্রান্ত মানুষ খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন। পরনে তার স্রেফ একটা লুঙ্গি। আমি লঞ্চ থেকে নেমেই তাকে জড়িয়ে ধরলাম। তিনি আমার প্রিয় শ্রদ্ধাভাজন শাহজাদা ভাই। ১০ তারিখে উনি মনপুরা গিয়েছিলেন আমার নির্বাচনী প্রচারে। যখন মনপুরা থেকে ফিরে এলাম উনি তখন থেকে গেলেন। আমি উনাকে অনুরোধ করেছিলাম আমাদের সঙ্গে ফিরবার জন্য। কিন্তু উনি বললেন, ‘আমি ইলেকশন পর্যন্ত থাকব।’ গিয়ে দেখি উনার কিচ্ছু নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলাম। বঙ্গবন্ধু তাকে বুকে টেনে আদর করলেন। লঞ্চের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর যে পাজামা-পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট ছিল সেগুলো তিনি শাহজাদা ভাইকে দিলেন। তারপর সেখান থেকে ফেরার সময় বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আর আমার পক্ষে এগুলো দেখা সম্ভবপর নয়! আমাকে তাড়াতাড়ি ঢাকা পাঠিয়ে দাও।’ যে বিশেষ লঞ্চে বঙ্গবন্ধু ভোলা গিয়েছিলেন সেই লঞ্চে করে ঢাকায় ফিরে এলেন। উপকূলীয় দুর্গত এলাকা ভোলা, রামগতি, হাতিয়া, সন্দ্বীপ সফর শেষে হোটেল শাহবাগে দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দুর্গত এলাকা আমি সফর করে এসেছি। প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে লাখ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে। এভাবে আমরা মানুষকে মরতে দিতে পারি না। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এখনও দুর্গত এলাকায় আসেন নাই। আমরা যে কত অসহায় এই একটা সাইক্লোন তা প্রমাণ করেছে। আরও একবার প্রমাণিত হলো যে, বাংলার মানুষ কত অসহায়! একবার পাক-ভারত যুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে। আরেকবার এই ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্রমাণিত হলো। সুতরাং, আমরা এভাবে আর জীবন দিতে চাই না। আমরা স্বাধিকারের জন্য, আমাদের মুক্তির জন্য আত্মত্যাগ করতে চাই।’ আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করব। এই নির্বাচন হবে আমার জন্য একটা গণভোট। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে কে বাংলাদেশের নেতা এবং কিভাবে এই অঞ্চল পরিচালিত হবে।’ ভোলাসহ উপকূলীয় দুর্গত এলাকা সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করে বাংলার মানুষকে তিনি এক কাতারে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি তখন আর্তের সেবায় উৎসর্গিত। উদয়াস্ত কাজ করছি। ভোলাসহ দুর্গত এলাকার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ-খবর নিতেন। দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে সাহেবজাদা ইয়াকুব খান এলেন ভোলায়। আমি তার সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে গাড়িতে তুলে নিলেন। ১৪ দিন পর অর্থাৎ ২৬ নবেম্বর সী প্লেনে চেপে ভোলায় এলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। নামলেন চকিঘাটে। আমি চকিঘাটে গেলাম। চকিঘাট থেকে তিনি দৌলতখাঁ গেলেন। চারদিকে হাজার হাজার লোক। প্রেসিডেন্টের গাড়িতে ছিলেন সাহেবজাদা ইয়াকুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক, আর ছিলেন গবর্নর আহসান। আমাকে প্রথমে ঘটনাস্থলে যেতে দিতে চাইছিল না। মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তাদের দাবির মুখে আমাকে যেতে দেয়া হয়। পরে সাহেবজাদা ইয়াকুব আমাকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘হি ইজ মিস্টার তোফায়েল আহমেদ।’ জেনারেল ইয়াহিয়া বলেছিলেন, ‘হু ইজ তোফায়েল? স্টুডেন্ট লিডার তোফায়েল!’ তিনি বললেন, ‘ইয়েস, স্টুডেন্ট লিডার তোফায়েল।’ ইয়াহিয়া খান আমাকে ইংরেজীতে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের জন্য কী করতে পারি?’ আমি ইংরেজীতেই উত্তর দিয়ে বলেছিলাম, তবুও তো আপনি এসেছেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দুর্গত এলাকায় এসেছেন ঘটনার ১৪ দিন পর। আপনি এখনও নদীতে ভাসমান ও রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষের মৃতদেহ দেখতে পাবেন। এই হলো আমাদের বাঙালীদের অবস্থা। তখন এদিক-ওদিক তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘আমার পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন।’ বললাম, আমি কেন ঘোষণা দেব? আপনার কর্মকর্তারা রয়েছেন। আপনি যা দান করবেন তা তাদের বলেন ঘোষণা করতে। তখন প্রবেশনারী অফিসার সাদাত হুসাইন, যিনি পরে ক্যাবিনেট সেক্রেটারি হয়েছিলেনÑ তিনি একটি জিপের ওপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন, ‘পাকিস্তানের মহামান্য প্রেসিডেন্ট আপনাদের জন্য ২৫ হাজার টাকা সাহায্য হিসেবে বরাদ্দ করেছেন।’ সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত জনসাধারণ চিৎকার দিয়ে উঠল ‘না’ ‘না’ ‘না’। আমি দু’হাত তুলতেই সকলে শান্ত হয়ে গেল। ইয়াহিয়া খান চলে গেলেন। সেনাবাহিনী রিলিফ তৎপরতা শুরু করল। তারপর ভোলায় এলেন ভোলারই কৃতী সন্তান মোকাম্মেল হক। এরপর আনিসুজ্জামান সিএসপি (পূর্ব পাকিস্তানের রিলিফ কমিশনার), সুলতানুজ্জামান খান (খুলনার কমিশনার)। বরিশাল তখন খুলনার অধীনে। আইয়ুবুর রহমান ছিলেন বরিশালের ডিসি, তিনি এলেন। সকলকে সঙ্গে নিয়ে দুর্গত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আর্তের সেবা করেছি। মনে পড়ে রাস্তা দিয়ে যখন হেঁটে যেতাম মানুষ আমাকে ঘিরে ধরত। একবার একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল। চকিঘাটায় আমি যখন গেলাম তখন বেলুচ রেজিমেন্ট সেখানে ডিউটি করে। দায়িত্বে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার দুররানী। তার অধীনে ওখানে একটি ক্যাম্প স্থাপিত হয়। আমি যখন তাদের স্পিডবোটে উঠি আমাকে নামিয়ে দেয়া হয়। মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওই স্পিডবোটের চালককে বেদম প্রহার করে। তখন বেলুচ রেজিমেন্টের সৈনিকেরা আমাকে গুলি করতে উদ্যত হলে হাজার হাজার মানুষ দেশী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সৈনিকদের রুখে দাঁড়ায়। পরে আমি বঙ্গবন্ধুকে ঘটনাটি জানিয়ে বলি যে, এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে। ভোলায় সেনাবাহিনী রাখার কোন দরকার নেই। পরে উর্ধতন সামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বঙ্গবন্ধু ভোলা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা করেন। এরপর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও ব্রিগেডিয়ার দুররানী ভোলা যান এবং আমার সঙ্গে মিটিং করে এক বিদায়ী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ভোলা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঘূর্ণিঝড় দুর্গত অসহায় মানুষের জন্য এলাকায় এলাকায় ক্যাম্প করে যে ব্যাপক ত্রাণকার্য সেদিন আমি পরিচালনা করেছি তা আমার বাকি জীবনে চলার পথের পাথেয় হয়ে আছে। জাতীয় চার নেতার অন্যতম শ্রদ্ধেয় নেতা শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ এক বিরাট লঞ্চ ভর্তি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ভোলা এসেছিলেন ত্রাণকার্যে। তার থেকে কিছু তিনি বিলি করতে পেরেছেন, বাকিগুলো রেখে এসেছিলেন আমার কাছে। সেগুলো আমি বিলিবণ্টন করেছি। খাবার পানি, মুড়ি, চিড়া, ওষুধপথ্য বিলি করেছি দুর্গত এলাকায়। এছাড়াও এসেছিল দামী সব কম্বল এবং শাড়ি-কাপড়। এর সবই অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল একদম বিচ্ছিন্ন। আমার আসনসহ ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত উপকূলীয় এলাকার জাতীয় পরিষদের ১৭টি আসনে পূর্বঘোষিত ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। অবশ্য সুষ্ঠুভাবে ত্রাণকার্য পরিচালনার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ইতোমধ্যেই জনসাধারণের ব্যাপক সমর্থন পাই। মানুষ আমাকে বুকে টেনে মাথায় তুলে নিত। ভীষণভাবে আদর করত। এই স্মৃতি জীবনে ভুলবার নয়। মানুষের জন্য কেউ যদি কিছু করে মানুষ যে তার জন্য কী করতে পারে তা চিন্তা করা যায় না। পরবর্তীকালে আমার নির্বাচন হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি। তার আগে বঙ্গবন্ধু আমাকে ডেকে নিয়ে আসেন। সারা বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সফর করেন। আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলাম। একই ট্রেনে গিয়েছি। তাঁর পাশে থেকেছি। একই জনসভায় বঙ্গবন্ধুর আগে বক্তৃতা করেছি। আবার তিনি বক্তৃতা করার সময় চলে গিয়েছি আরেক জনসভায়। বঙ্গবন্ধু যখন এক জনসভা শেষ করে আরেকটিতে আসছেন তখন আমি চলে গিয়েছি আরেকটি জনসভায়। এভাবে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলাম। নির্বাচনের দিনও আমি বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলাম। বিদেশী সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আপনি কতটি আসনে জয়ী হওয়ার আশা করেন?’ বঙ্গবন্ধু উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি অবাক হব যদি আমি দুটি আসনে হারি।’ সত্যি দুটি আসনেই আমরা হেরেছিলাম। জাতীয় পরিষদে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম। আমার নির্বাচন হয় ১৭ জানুয়ারি ’৭১-এ। ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি যে শপথ অনুষ্ঠান হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেখানে আমিও শপথ গ্রহণ করি। যদিও তখনও নির্বাচিত হয়নি। নির্বাচিত হয়েছি ১৭ জানুয়ারি। নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর জানলাম ৭২ হাজার ভোট পেয়েছি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৬ হাজার ভোট। আমি তার থেকে ৬৬ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছি। স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রথম যান ভোলা। ’৭০-এ তিনি দেখে এসেছিলেন জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত ভোলা। ১৪ ফুট জলোচ্ছ্বাসে সবই ভেসে গিয়েছিল। যে জায়গায় বেড়িবাঁধ ছিল না, সেই স্থানকে জিরো পয়েন্ট বলতাম আমরা। সেখান দিয়েই প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করেছে এবং নিমেষের মধ্যে সব তলিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু ছোট্ট একটি হেলিকপ্টারে করে ভোলা এসেছিলেন। আমি বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী ছিলাম। ভোলা গিয়ে সেই জিরো পয়েন্ট থেকে বঙ্গবন্ধু মাটি কেটেছেন এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন। ভোলা থেকে তিনি রামগতি গিয়েছেন এবং সেখানেও তিনি বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্বোধন করেছেন। আজকে বেড়িবাঁধ দিয়ে আমরা জলোচ্ছ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকি, ঘূর্ণিঝড় হলে আমরা এখন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় গ্রহণ করি। আগে এই সাইক্লোন শেল্টারকে বলা হতো ‘মুজিব কেল্লা’। এটা বঙ্গবন্ধুই করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু চরকুকরী-মুকরী গেছেন। সেখানে সাইক্লোন শেল্টার করেছেন। সেখানে জনসাধারণকে ডিপটিউবওয়েল দিয়েছেন। বনায়ন করেছেন। বনায়ন করে জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর জন্য উপকূলীয় এলাকায় বঙ্গবন্ধু বনায়ন করেছিলেন, যেটা আজকে ফরেস্ট হয়েছে। এটা বঙ্গবন্ধুর অবদান। বঙ্গবন্ধু ভোলাকে খুব পছন্দ করতেন। মনপুরায় তিনি ‘চিন্তানিবাস’ নামে একটি আবাসস্থল করতে চেয়েছিলেন। তার কাজও শুরু হয়েছিল। বসরতউল্লাহ একটি দীঘি কেটে মাটি ভরাট করে এই কাজটি শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যখন যুগোশ্লাভিয়া সফরে গিয়েছিলাম তখন দেখেছি মার্শাল টিটো একটা দ্বীপে থাকতেন। দ্বীপটার নাম ছিল ‘বিরুনী’। ওখান থেকে বঙ্গবন্ধু মনে করলেন আমার ভোলায় অনেক দ্বীপ। একটা দ্বীপে আমি এরকম একটা আবাসস্থল করব, যেখানে বিদেশীরা গেলে তাদের সঙ্গে মিটিং করব। কিন্তু তিনি এটা করে যেতে পারেননি। মনপুরায় অবকাশ যাপন কেন্দ্র গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সবকিছু স্তব্ধ করে দেয়া হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি পোস্টার হয়েছিল সোনার বাংলা শ্মশান কেন? এই পোস্টারটিতে ’৭০-এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের কথাই ব্যক্ত হয়েছিল। দুটো ঘটনা বাংলার মানুষকে পথ দেখিয়েছে। এক. ’৬৫-এর পাক-ভারত যুদ্ধ, যখন আমরা ছিলাম ‘অরক্ষিত’। আর ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, যখন আমরা ছিলাম ‘অসহায়’। লেখক : আওয়ামী লীগ নেতা, বাণিজ্যমন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার [email protected]
×