ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুমিনুল-মুশফিক রেকর্ড জুটিতে মজবুত ভিত গড়ল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১২ নভেম্বর ২০১৮

 মুমিনুল-মুশফিক রেকর্ড জুটিতে মজবুত ভিত গড়ল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ নয়মাস আগে যেখানে ভরাডুবি শুরু হয়েছিল, সেখানেই উত্তরণের পথ খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুর ‘হোম অব ক্রিকেটে’ এসেই ব্যাটিংয়ের দুর্দশা কেটেছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে একদিনে ৩০৩ রান হয়েছে। স্কোর দেখতেও কত সুন্দর লাগে। অথচ এই স্কোর দূরে থাক, তার ধারে কাছেও গত নয়মাসে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। দুই সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল-মুশফিকের চতুর্থ উইকেটে গড়া ২৬৬ রানের রেকর্ড জুটিতেই তা সম্ভব হয়েছে। মজবুত ভিত গড়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম হচ্ছে ‘হোম অব ক্রিকেট’। এই স্টেডিয়ামেই এ বছর ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১১০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৩ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। টানা আট ইনিংসে যে বাংলাদেশ দল ২০০ রানও কোন ইনিংসে করতে পারেনি, সেটির শুরু তখনই হয়। এরপর এক এক করে টেস্ট খেলে বাংলাদেশ, একেকটি ইনিংসে ১৫০ রানের বেশি করাই কঠিন হয়ে পড়ে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে যে ১৬৯ রান করে বাংলাদেশ, সর্বশেষ আট ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা। তা থেকে এবার মিরপুরে এসেই উতরে গেছে বাংলাদেশ। বিপর্যয় উতরে গেছেন ব্যাটসম্যানরা। মুমিনুলের ১৬১ ও মুশফিকের অপরাজিত ১১১ রানের সঙ্গে দুইজনের রেকর্ড জুটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০৩ রান করে বাংলাদেশ। সিলেট টেস্টে হারের পর মিরপুর টেস্টে আশা জাগাচ্ছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। এখনই যে রান হয়েছে, এরসঙ্গে আরও ১০০ রান যোগ করা গেলে জিম্বাবুইয়ের ওপর ভালভাবেই চাপ তৈরি করা যাবে। তখন ৪০০ রান স্কোরবোর্ডে জমা হবে। যা খুবই সম্ভব। উইকেটে মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ আছেন। এ দুইজন আজ দ্বিতীয়দিনের খেলা শুরু করবেন। এরপর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আরিফুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ রয়েছেন। প্রথমদিনে যেমন উইকেট দেখা গেছে, বল কখনও নিচু হয়ে আসে, কখনও উঁচু হয়ে আসে। তাতে মুমিনুল, মুশফিক নিজেদের সামলে নিয়ে বড় স্কোর গড়ে দেখিয়েছেন। যেভাবে উইকেট আঁকড়ে থেকে ব্যাটিং করেছেন, দলকে অনেকদূর নিয়ে গেছেন। এই কাজটি আজও যদি করতে পারেন বাকিরা, তাহলে আরও ১০০ রান যোগ হওয়া খুবই সম্ভব। তা হলেই জিম্বাবুইয়েকে চেপে ধরা যাবে। দুর্দান্তভাবে প্রথমদিনটি শেষ করার পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণই বাংলাদেশের হাতে থাকবে। ১০০ রানের বেশি আরও স্কোরবোর্ডে যোগ করা গেলেতো ম্যাচের ফলও বাংলাদেশের দিকেই চলে আসতে পারে। তখন প্রথম টেস্ট হারে যে বাংলাদেশ দল সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে, বাংলাদেশ জিতলে সিরিজ ১-১ ড্র হয়ে যাবে। আশা আছে মিরপুর টেস্টে ভাল কিছু প্রাপ্তির। প্রথমদিনই সেই আশা তৈরি হয়েছে। এখন আজ ১০০-১৫০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হওয়ার পর পেসার-স্পিনাররা নিজেদের সামর্থ্য দেখাতে পারলেই হয়। যে সামর্থ্য শুরুতে দেখাতে পেরেছেন জিম্বাবুইয়ে পেসার কাইল জার্ভিস ও ডোনাল্ড তিরিপানো। টস জিতে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করতে নামতেই ধস নামান জিম্বাবুইয়ান দুই পেসার। ১৬ রানের মধ্যে ইমরুল কায়েস (০) ও লিটন কুমার দাসকে (৯) সাজঘরে পাঠান জার্ভিস। এরপর টেস্টে অভিষেক হওয়া মোহাম্মদ মিঠুনকে (০) দলের ২৬ রানের সময় আউট করে দেন তিরিপানো। বাংলাদেশ চাপে পড়ে যায়। সেই চাপ কঠিন উইকেটে যদি সহজভাবে সামাল না দিতেন মুমিনুল ও মুশফিক, তাহলে বিপদই ছিল। দুইজন মিলে ক্যারিয়ারে আরেকটি করে সেঞ্চুরি যোগ করেন। ৯ রানে ‘নতুন জীবন’ পাওয়া মুমিনুল সপ্তম ও মুশফিক ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। দুইজন মিলে নিজেদের চতুর্থ উইকেটে রেকর্ড জুটিও গড়েন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের জুটিও গড়েন। দেখতে দেখতে দল ২৯২ রানেও চলে যায়। যেখানে ২৬/৩ ছিল। সেখান থেকে ২৯২/৩-ই থাকে। এমন মুহূর্তে চাতারার বলে পয়েন্টে আউট হন মুমিনুল। ততক্ষণে ২৪৭ বলে ১৯ চারে ১৬১ রান করে ফেলেন মুমিনুল। মুমিনুল-মুশফিকের জুটি ২৬৬ রানেই শেষ হয়। দিনের খেলা তখন ৪ ওভার ২ বল বাকি ছিল। আরেকটু ধৈর্য ধরলেই হয়তো মুশফিকের সঙ্গে মুমিনুলই মাঠ ছাড়তে পারতেন। কিন্তু তা হয়নি। নতুন বল নিতেই মুমিনুল আউট হওয়ার পর ‘নাইট ওয়াচম্যান’ হিসেবে ব্যাট হাতে নামা তাইজুল ইসলামও (৪) দিনের এক ওভার বাকি থাকতে আউট হয়ে যান। শেষে ২৩১ বলে ৯ চারে ১১১ রান করা মুশফিকের সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। ২৬/৩ এর বিপর্যয় থেকে দিন শেষ হওয়ার আগে ৩০৩/৫ হয়েছে। অসাধারণ দিন গেছে। মুমিনুল-মুশফিকের রেকর্ড জুটিতে মজবুত ভিতও গড়া গেছে। এখন এই ভিতের সুফল বয়ে আনা গেলেই হলো।
×