ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

জমজমাট নিতাইগঞ্জ বাজার

প্রকাশিত: ০৭:২১, ১১ নভেম্বর ২০১৮

জমজমাট নিতাইগঞ্জ বাজার

প্রিয় পাঠক ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জ যাই’ এই জনপ্রিয় লোকগান সবারই জানা আছে। তবে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ যাওয়ার পথ খুব সোজা। শহরের চাষাঢ়া মোড় থেকে বঙ্গবন্ধু সড়ক ধরে নাক বরাবর দক্ষিণে গেলেই শেষ মাথায় নিতাইগঞ্জ বাজার। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই পাইকারি বাজারের প্রতিদিন সূর্যাস্তের পর থেকে গভীর রাত অবধি চলে হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা। আটা-ময়দা, ডাল, তেল, চিনি, লবণ, মসলাসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের বেচাবিক্রিতে ব্যস্ত থাকে নারায়ণগঞ্জের পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জ। আগের ব্যবসার সেই জৌলুস এখন আর নেই। হরেক রকম ব্যবসা থাকলেও এখনও ময়দা ও ভুসিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নিতাইগঞ্জ। দেশের বড় পাইকারি বাজার ঢাকার মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মতোই জমজমাট থাকে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ। এখান থেকেই নদীপথে মুন্সগঞ্জ, নরসিংদী, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ ও সিলেটের ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য নিয়ে যান। আর কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ কয়েক জেলার ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনে নিয়ে যান সড়কপথে। নিতাইগঞ্জে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকার বেচাবিক্রি হচ্ছে। ময়দা ও গমের ভুসির জন্য নিতাইগঞ্জ এখনও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এখনও প্রতি রাতে ৩৫০ থেকে ৪০০ ট্রাক পণ্য আসা-যাওয়া করে এ পাইকারি বাজারে। ময়দা মিলের চাহিদা মেটাতে কার্গোতে করে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে হাজার হাজার বস্তা গম আসছে। মিলে ময়দা উৎপাদনের পর তা পাইকারদের হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। নিতাইগঞ্জের মূল সড়ক থেকে অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে ব্যবসা। নিতাইগঞ্জে ১০০-র বেশি চালের আড়ত, ৫০টির মতো গমের আড়ত, ডালের ১০০টি, লবণের ৫০টি, তেল-চিনির প্রায় ৪০০টি, ময়দা ৬৮টি, ভুসি মালের হাজারখানেক ছোট-বড় আড়ত আছে। ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের কারখানা আছে কয়েক শ। এখানকার আড়ত ও কারখানায় কাজ করেন প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। অনেকেই কাজের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন। ডালের জন্য বেশ বিখ্যাত নিতাইগঞ্জ। আড়তের পাশাপাশি বেশ কিছু ডালের মিল আছে এখানে। ডালের আস্ত দানা নিয়ে এসে এখানে ভাঙানো হয়। নিতাইগঞ্জে লবণ পরিশোধনের কারখানা ও গরিবে নেওয়াজ সল্ট নামে আড়ত আছে । ১৯৭৫ সাল থেকে এই পাইকারি বাজারে ব্যবসা শুরু করেন এর মালিক জামাল দেওয়ান। এখানে কারখানায় পরিশোধিত লবণের ব্র্যান্ড-ফুলকপির পাশাপাশি এসিআই, মোল্লাসহ বিভিন্ন কোম্পানির লবণ পাইকারি বিক্রি করা হয়। খাওয়ার লবণ ছাড়া ডাইং কারখানা ও ট্যানারির জন্য লবণ বিক্রি হয় এখানে। দিনে গড়ে ৩০০ কার্টন লবণ বিক্রি হয়। প্রতি কার্টনে ২৫ কেজি লবণ থাকে। মূলত লবণ কিনতে নিতাইগঞ্জে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ীরাই বেশি আসেন। লেনদেনের সুবিধার জন্য বেশ কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা আছে এ বাজারে।
×