ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

সবজি উৎপাদন এবং রফতানিতে সাফল্য

প্রকাশিত: ০৭:২০, ১১ নভেম্বর ২০১৮

সবজি উৎপাদন এবং রফতানিতে সাফল্য

গত এক দশকে জমির পরিমাণ কমেছে। উন্নয়নের নামে ধানা জমিতে হয়েছে সুউচ্চ দালাককোঠা, কল কারখানা। অনুৎপাদন ক্ষেত্রে জমির ব্যবহার হচ্ছে বেশি। পরিবেশ বিধি মানা হয় না অনেক জায়গাই। এ অবস্থার মধ্যেও কৃষিতে বাংলাদেশ অর্জন করেছে ব্যাপক সাফল্য। পাল্টে গেছে কৃষি অর্থনীতির চিত্রপট। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ধানের উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ, গম ২ গুণ, সবজি ৫ গুণ এবং ভুট্টার ১০ গুণ। এক ফসলী জমিতে দু বা তিন ফসল হচ্ছে। আম জাম লিচু বাগানের মধ্যে সফলভাবে সবজির চাষ হচ্ছে। জমির ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে ফসল ফলানোর এই প্রচেষ্টা প্রশংসাযোগ্য। সাধুবাদ কৃষকদেরই দিতে হয়। ধানের পাশাপাশি তারা ডাল, তেল, নানা রকম মসলার আবাদ করেছেন। ফলে অর্থনৈতিকভাবে তারা যেমন লাভবান হয়েছেন। দেশ হয়েছে উপকৃত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী দেশে মোট কৃষি পরিবার ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার। মোট আবাদযোগ্য জমি ৮৫ লাখ ৫ হাজার ২৭৮ হেক্টর। এক ফসলি জমির পরিমাণ ২৪, ৪০, ৬৫৯ হেক্টর, দু’ফসলি জমির পরিমাণ ৩৮, ২০, ৬৩৭ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ৪৯, ৮৮, ৭৭১ হেক্টর। ২০১৩-১৪ বছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ বছরে সব ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। ২০১৫-১৬ দে দানাদার খাদ্য শস্য চাল এবং গমের উৎপাদন হয়েছে ৩৯১.০৩ লাখ টন, আলু ৯৪.৬৪ লাখ টন, পেঁয়াজ ২১.৩০ লাখ টন। ধান উৎপাদনে রীতিমতো বিপ্লব হয়েছে। চাল রফতানি করা হয়েছে। খাদ্যে এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। শাক সবজির উৎপাদন হচ্ছে বছরে প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টন। ২০০ থেকে বেশি প্রজাতির সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি বছর যেখানে আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে। সেখানে শাক সবজি আবাদি জমির পরিমাণ ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ হেক্টর জমিতে বছরে প্রায় ২২ লাখ টনের অধিক সবজি উৎপাদন হচ্ছে। সবচেয়ে ভাল সবজি উৎপাদিত হচ্ছে রংপুর জেলায়। স্থানীয় কৃষি সম্প্্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের ৮ জেলায় মৌসুমে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ১২ হাজার মেট্রিকটন সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। শাক সবজি রফতানি করে বছরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা পেরিয়ে গেছে। বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে বাংলাদেশের সবজি যাচ্ছে। ৫০ রকমের সবজি রফতানি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, জাপান, সৌদি আরব, মালয়শিয়া, সিঙ্গাপুর, ওমান প্রভৃতি দেশে সবজি রফতানি হচ্ছে। এসব দেশে বাংলাদেশের শাক সবজি বেশ জনপ্রিয়। যে সবজিগুলো রফতানি হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো করলা, টমেটো, বেগুন, ঢেড়স, বরবটি, কাঁঠাল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচামরিচ, পটোল। প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করা হয় ডাটা, কচুরলতি, শিমের বিচি, কাঁচকলা, কচুশাক, কলার ফুল, কাঁঠাল বিচি ইত্যাদি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশী সবজির বড় বাজার রয়েছে। সেখানের প্রবাসীরা সবজির বড় ক্রেতা হতে পারেন। কিন্তু এ জন্য কার্গো বিমান চালু, ফ্লাইট বাড়ানো, ভর্তুকি অব্যাহত রাখা দরকার। জানা যায় শুধু দুবাইয়ের বাজারে ১০০ টনের মতো বাংলাদেশী শাক সবজির চাহিদা রয়েছে। কেবল সবজি উৎপাদন নয়। সবজির নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তারা টমেটো, পেঁয়াজ, করলা ইত্যাদি বেশ কয়েকটি সবজির নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। শাক সবজি রফতানি বেড়েছে সত্য। তবে কিছু অসাধু লোকের কারণে রফতানি বাজারে ইমেজ হারাচ্ছে বাংলাদেশ। অনেক রফতানিকারক ব্যাকটেরিয়াযুক্ত সবজি রফতানি করেছে। বাংলাদেশ থেকে রফতানিকৃত সবজিতে ব্যাকটেরিয়া খুঁজে পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাকরোল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের ডিজি হেলথ এ্যান্ড ফুড সেফটির তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে নবেম্বর পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে সবজি ও ফল রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ৪১টি দেশে ক্রটি ধরা পড়েছে। এর মধ্যে মানের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা দেশের তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। যে সব অসাধু রফতানিকারকরা ব্যাকটেরিয়া যুক্ত সবজি রফতানি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সরকার ইতোমধ্যে ইউরোপের ২৭টি দেশে শতভাগ স্যালমোনিলামুক্ত পান ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত শাক সবজি রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে। যদি এই উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখে তাহলে বছরে সবজি রফতানির আয় ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
×