ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বি’বাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ সুসংহত, বিএনপির ভাঙ্গাহাট

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১১ নভেম্বর ২০১৮

বি’বাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ সুসংহত, বিএনপির ভাঙ্গাহাট

রিয়াজউদ্দিন জামি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছয়টি সংসদীয় আসন। ৯টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা এবং ১শ’টি ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সংসদীয় আসনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে এলাকায় ব্যাপক তৎপরতাসহ কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে জোর লবিং চালাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেশি সক্রিয়। সভা-সমাবেশ ও জনসংযোগ করছে। ব্যস্ত সময় পার করছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সম্ভাব্য সকল প্রার্থীই ভোটারদের কাছে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের বেশকিছু নতুন মুখ এবার মাঠে দেখা যাচ্ছে। নতুনরাও প্রতিদিন সভা সমাবেশ করছেন কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় আওয়ামী লীগের অবস্থা সুসংহত। বিএনপিতে অন্যরকম অবস্থা। সম্ভাব্য প্রার্র্থী ও দলীয় নেতাদের বাড়ি-ঘর ফাঁকা। নেতাদের বাসা বাড়িতে কোন নেতাকর্মীর যাতায়াত নেই। শুনশান নীরবতা, তাদের বাসা বাড়িতে। মাঠেও নেই বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জেলার ৬টি আসনের কোথাও তাদের তৎপরতাই নেই। মাঝে মাঝে কোন কোন প্রার্থী শুধু সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে তারা মাঠে নেই। তাদের নেতাকর্মী ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা চলাফেরা করছে সীমিতভাবে। মামলা আর গ্রেফতার আতঙ্কে লাপাত্তা। এ মুহূর্তে বিএনপির অবস্থা ভাঙ্গা হাটের মতো। দলগতভাবে বিএনপি নির্বাচনী মাঠেও নেই আন্দোলনেও নেই। সব মিলিয়ে তাদের অবস্থা খুবই সঙ্গিন। বিএনপি নির্বাচনে এলে সব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ও নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। ৩টি আসনে তাদের নিজেদের দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে বেশ কাজ করছে। জাসদের পক্ষ থেকে একটি আসন নিতে মরিয়া দলের নেতাকর্মীরা। জেলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের অস্তিত্বই নেই। এবার নতুন ভোটার বেড়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৪ জন। নতুন পুরুষ ভোটার বেড়েছে ৯৯ হাজার ৩৫ জন। নতুন নারী ভোটার বেড়েছে ৭৯ হাজার ৪৯৯ জন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১, (নাসিরনগর) ॥ নাসিরনগরে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের শরিক দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীরা প্রচার ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেও বিএনপি নীরব। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন সংগ্রামসহ আওয়ামী লীগের ১ ডজনেরও অধিক প্রার্থী রয়েছে। বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সৈয়দ এ, কে, একরামুজ্জামান। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কয়েক মাস পূর্ব থেকেই নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট বিতরণসহ সভা-সমাবেশ করছে। আওয়ামী লীগের সব প্রার্থীই বলতে গেলে নতুন। যে যার মতো করে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রচার করেছেন সাংসদ বিএম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, প্রয়াত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর পতœী দিলশাদ আরা মিনু, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার, সমাজ সেবক ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক মোঃ নাজির মিয়া, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এম এ করিম, কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের শিক্ষা, পাঠাগার ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এম বি কানিজ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ করছেন। কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সাবেক সদস্য ও শিল্পপতি রেজওয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিশের নেতা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তা মাওঃ যোবায়ের আহমদ আনসারীও জনসংযোগ করছেন। বিএনপির একক প্রার্থী বিশিষ্ট শিল্পপতি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ এ কে এম একরামুজ্জামান (সুখন)। রাজনৈতিকভাবে ক্লিন ইমেজের অধিকারী তিনি। তবে নির্বাচনী এলাকায় তার কোন তৎপরতা নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) ॥ আসনটি মূলত বিএনপির ঘাঁটি ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জোটগতভাবে আসনটি তাদের দখলে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এবারও জাতীয় পার্টি আসনটি একক বা জোটগতভাবে রাখার চেষ্টা করছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগ এ আসনটি দখলে নেয়ার জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। স্বাধীনতার পর থেকে আসনটি তাদের হাত ছাড়া। অনেকটাই মজবুত অবস্থানে জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধা এমপি। এ আসনে শক্ত অবস্থান জাতীয় পার্টির। আওয়ামী লীগ চায় দলীয় প্রার্থী। হারানো আসন ফেরত পেতে চায় বিএনপি। বর্তমানে আসনটি জাতীয় পার্টি এরশাদের দখলে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। দলীয় কোন্দলে খুন হন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। আসনটিতে মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের একডজন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছে। জাতীয় পার্টিও কাজ করছে। বিএনপির নির্বাচনী কোন তৎপরতা নেই। এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাসদসহ বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। প্রার্থীদের পক্ষে তাদের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ব্যানার, বিলবোর্ড ও ফেস্টুন টানিয়ে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোসহ নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আসনে জাতীয় পার্র্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা। সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ একাধিক ভাগে বিভক্ত। আশুগঞ্জ উপজেলায় আ’লীগের অবস্থান খুবই শক্তিশালী। এখানেও একাধিক গ্রুপ সক্রিয়। প্রয়াত নেতা ইকবাল আজাদের সহধর্মিণী শিউলি আজাদ সভা সমাবেশ করছেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সাত্তার বিনপির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় প্রচার-প্রচারণায় বিএনপি নীরব রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মঈনউদ্দিন মঈন, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতা কামরুজ্জামান আনসারী ও অধ্যক্ষ শাহ জাহজান আলম সাজু নিয়মিত জনসংযোগ করছেন। উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. আব্দুর রহমান প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা আছে। মাঠ পর্যায়ে তাদের তেমন কোন তৎপরতা নেই। মাঠের সূত্রগুলো বলছে, ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে জোট হলে এ আসনটি ইসলামী ঐক্যজোটকে দেয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রয়াত সংসদ সদস্য মুফতি ফজলুল হক আমিনীর পুত্র ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনীকে দেয়া হতে পারে। যদি জাতীয় পার্টিকে আবারো এ আসন ছাড় দেয়া হয় তবে আমিনীর তনয় মনোনয়ন পাবেন না। আওয়ামী লীগ যদি এ আসন নিজের দলীয় প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করায় তবে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে বিএনপির সঙ্গে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) জেলা সদর এ আসনটি মর্যাদার আসন। স্বাধীনতার পর থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগ বিরোধী হিসেবে বিবেচিত। রাজনৈতিক পালা বদলে এখন আসনটি আওয়ামী লীগেরই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভাজন ও কোন্দল থাকলে ও নির্বাচন প্রশ্নে সবাই একাট্টা। জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বড় দল হওয়ায় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। দলীয় কোন কোন্দল নেই। দলীয় সূত্র বলছে, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, বর্তমান সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এবারও আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। মোকতাদির চৌধুরী নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছেন। সপ্তাহে অন্তত একবার এলাকায় আসছেন। যাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে। গণসংযোগ করে নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। বিএনপি তাদের হারানো আসন ফিরে পেতে চেষ্টা করছে। প্রচার প্রচারণায় নেই তারা। মাঠে তাদের নেতাকর্মী ও সম্ভাব্য প্রার্থীর কোন তৎপরতা নেই। দলীয় মনোনয়নে এবারও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে থাকলে সমীকরণ হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাতীয় পার্টি প্রার্থীর মধ্যে। কার ভাগ্যে জোটে এবার মহাজোটের সমর্থন। এই আলোচনা রয়েছে সদর আসন জুড়ে। আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছুটা বিরোধ রয়েছে। বিএনপি তাদের হারানো আসন ধরে রাখতে চেষ্টা করছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল প্রকাশ্যে কোন তৎপরতা চালাতে না পারলেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। মাঠে না থাকলে ও জেলা বিএনপির সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী হারুন আল রশিদ দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এখন পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনী কোন প্রচার প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিএনপি নির্বাচনে এলে এ আসনে মহাজোট প্রার্থী অর্থাৎ নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এ আসন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক মেয়র মোঃ হেলাল উদ্দিন প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। পোস্টার ব্যানার করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সাবেক সচিব মুক্তিযোদ্ধা, জনতার মঞ্চের নেতা মিজানুর রহমানও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। তিনি সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম এমএসসি ও প্রার্থী হতে পারেন। তিনি বিভিন্নভাবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে সভা মিটিং করছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের যুব বিষয়ক উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া দলীয় কর্মকা-ে মাঝে মাঝে এলাকায় আসছেন। জাতীয় পার্টির আরেক প্রার্থী জামাল রানা বিভিন্ন সময় শোডাউন করে বেশ আলোচিত। তিনি ও এ আসনে নিয়মিত জনসংযোগ করছেন। ব্যানার পোস্টার ছড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে জোট করলে চিত্র পাল্টে দিতে পারে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) ॥ কসবা আখাউড়া উপজেলার বিএনপি ছাড়া আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রচার ও গণসংযোগে সক্রিয়। প্রার্থী হতে কেন্দ্রীয়ভাবে জোর লবিং ও তদ্বির চালাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী থাকলে ও এ আসনে বর্তমান আইন মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হকই দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে নিশ্চিত করেছে তার কর্মী সমর্থকরা। অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক এমপি ও সচিব মুসফিকুর রহমান বিদেশে অবস্থান করছেন। তিনি নির্বাচন করবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। তিনি ছাড়াও বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। সীমান্তবর্তী আখাউড়া-কসবা দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ সংসদীয় আসন। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডঃ আনিছুল হক প্রতি সপ্তাহে এলাকায় এসে অবস্থান করেন। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা সমাবেশে যোগদান করছে। নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন। দলীয় কোন্দলের কারণে নির্বাচনে ভোটের মাঠে প্রভাব পড়তে পারে। সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট শাহ আলমও নিয়মিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কসবা উপজেলার আহ্বায়ক তারেক-এ আদেল দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। তাদের তেমন কোন তৎপরতা নেই। বিএনপি গত ১০ বছর কসবায় কোন মিছিল সভাসমাবেশ করতে পারেনি। পুলিশের গ্রেফতার ভয়ে নেতাকর্মীরা বাড়ি ঘর ছাড়া। মাঠে ময়দানে কোথাও তাদের অবস্থান নেই। বিএনপির পক্ষে তেমন কোন তৎপরতা নেই কসবায়। একই অবস্থা আখাউড়াতে। এ আসন থেকে মনোনয়ন চান আখাউড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রকৌশলী মোঃ মোসলিম উদ্দিন। তিনি আখাউড়ার স্থায়ী বাসিন্দা। নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মনোনয়ন পাবার চেষ্টা করছেন তিনি। দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তার রয়েছে যোগাযোগ। গত সপ্তাহে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রকৌশলী মোসলিম উদ্দিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে কারাগারে থাকা দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সকল প্রকার মামলা এবং সাজা প্রত্যাহারসহ দলীয় বিভিন্ন দাবির প্রতি সমর্থন জানান। প্রচারে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীই এগিয়ে রয়েছেন। আনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে এ আসনে। এ ছাড়া বিএনপির জেলা কমিটির সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন হাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ শফিকুল ইসলাম প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের কোন প্রচার নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) ॥ এই আসনে তৎপর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদ (ইনু) ৩টি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নিয়মিত জনসংযোগ ও সভাসমাবেশ করছে। অন্তত ২ ডজন মনোনয়নপ্রত্যাশী নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাশায় আওয়ামী লীগের ১২ জন সম্ভাব্য ও বিএনপির ৬ জন সম্ভাব্য প্রার্থী ছাড়াও মাঠের প্রচারণায় বেশ সক্রিয় জাতীয় পার্টি, জাসদ (ইনু)র সম্ভাব্য প্রার্থী। ১৪ সালে নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগের ফয়জুর রহমান বাদল। আসন্ন নির্বাচনে মহজোটের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জোটের শরিক ২ দল জাসদ ও জাতীয় পার্টি খুবই তৎপর। জাসদের এ্যাডভোকেট শাহ জিকরুল আহমেদ খোকন, জাতীয় পার্টির কাজী মামুনুর রশীদ মহাজোটের মনোনয়ন চান এ আসনে। অন্যদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের কমিশনার একে এম মমিনুল হক সাঈদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কৃষকলীগের উপদেষ্টা এবাদুল করীম বুলবুল ও ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোর্শেদ হোসেন কামাল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট কাজী মোরশেদ হোসেন কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার জাকির আহম্মদ প্রার্থিতার জন্য জনসংযোগ করছেন। তারা নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করছেন। ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের কমিশনার মমিনুল হক সাঈদ প্রচারণায় নতুনত্ব এনেছেন। কয়েক হাজার নৌকা নিয়ে তিনি নৌকা প্রতীকের শো ডাউন করেন। বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। বিএনপির প্রয়াত সাবেক এমপি কাজী মোঃ আনোয়ার হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন তাপস, কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা তকদির হোসেন মোঃ জসীম বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তেমন কোন প্রচার চালাতে দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিয়মিত শো ডাউন করে আসছে। জোট গত নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টি এ আসনের দাবি ছাড়বে না বলে জানান তাদের দলের নেতা কর্মীরা। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এ আসন পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হচ্ছেন দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা কাজী মামুনুর রশিদ। এলাকায় পরিচ্ছন্ন ইমেজ ও কাজের মানুষ হিসেবে পরিচিত এ জাপা নেতা। ইতোমধ্যেই জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থী কাজী মামুনুর রশিদকে পরিচয় করে দিয়েছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেই। গত সপ্তাহে নবীনগরে জাতীয় পার্টির বিশাল সমাবেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে দলের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন এবং জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এলে কাজী মামুনুর রশীদকে মন্ত্রী পরিষদে স্থান দেয়ার ঘোষণা দেন। তিনি তার পক্ষে ভোট চান এবং তাকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে এ আসন জাতীয় পার্টি অথবা জাসদকে ছাড় দিতে হতে পারে। এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সফিকুল ইসলাম ও সিনিয়র সহ-সভাপতি সায়েদুল হক সাঈদ প্রার্থিতার জন্য কাজ করছেন। আসনটিতে মহাজোটের মনোনয়ন চান জাসদের প্রভাবশালী নেতা শাহ জিকরুল আহামেদ খোকন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের টিকেটে এমপি হবার সুবাদে এলাকার জনগণের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ বাঞ্ছারামপুর ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের বাঞ্ছারামপুরে বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারে ব্যস্ত। বাঞ্ছারামপুরে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান এমপি ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম ও মহিউদ্দিন আহমেদ (মহি) এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিএনপি তাদের হারানো আসনটি ফিরে পেতে মরিয়া। ৯১ সালে বিএনপির এটিএম ওয়ালী আশরাফ জয়লাভ করে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ক্যাপ্টেন অবঃ তাজুল ইসলাম। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এমপি হন এবি তাজুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থীর মধ্যে এবি তাজুল ইসলাম ছাড়াও রয়েছেন-আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দিন হলের সাবেক জি. এস. ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা কামাল, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এ্যাডভোকেট কাজী আজিজুর রহমান দুলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাঈদ আহমেদ বাবু। নির্বাচনী মাঠে বিএনপির একাধিক নেতা রয়েছে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সভাপতি ও সাবেক এমপি আব্দুল খালেক, উপজেলা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোঃ রফিক সিকদার, উপজেলার বিএনপির সদস্য কৃষিবিদ মেহেদি হাসান পলাশ, উপজেলা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট মোঃ জিয়াউদ্দিন জিয়া, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোস্তফিজুর রহমান এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম সিকদার।
×