ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইতোমধ্যে ৫৯ জন চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন ॥ গ্রাহকসেবা বিঘ্নিত

বিমানের ক্যাজুয়াল কেবিন ক্রুদের চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় ক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১১ নভেম্বর ২০১৮

বিমানের ক্যাজুয়াল কেবিন ক্রুদের চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় ক্ষোভ

আজাদ সুলায়মান ॥ পাঁচ বছরেও চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বিমানে দৈনিক ভিত্তিতে ক্যাজুয়াল কেবিন ক্রুরা। এতে শুধু বিমানের গ্রাহক সেবাই বিঘিœত হচ্ছে না, ইতোমধ্যে ৫৯ জন চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও বিমান তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্যাজুয়াল ক্যাটাগরিতে বর্তমানে ১৪৫ জন কেবিন ক্রু চাকরি করছেন। তাদের চাকরি স্থায়ী করার বিষয়ে বিমানের শীর্ষ পর্যায়ে দেন দরবার করলেও তা আমলে না নিয়ে উপরন্তু ফের নতুন করে আরও কেবিন ক্রু নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। এতে ভুক্তভোগী কেবিন ক্রুদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে। জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি আমাদের বিবেচনাধীন আছে। এ সংক্রান্ত সাব কমিটির পরবর্তী বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সেখানেই একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে আশা করছি। এটা বড় কোন সমস্যা নয়, সমাধান হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, বছর পাঁচেক আগে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৮৯ দিনের ভিত্তিতে ২ শতাধিক কেবিন ক্রু নিয়োগ দেয়া হয়। উদ্যমী ও উচ্চশিক্ষিত এসব তরুণ তরুণীদের অস্থায়ী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে তাদের বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তারা দেশি-বিদেশি ফ্লাইটে নিয়মানুবর্তিতা, কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু চাকরি স্থায়ী না করে বারবার বাড়ানো হয়েছে চুক্তির মেয়াদ। তারা শুরু করেছিলেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা বেতনে। পাঁচ বছরেও তাদের চাকরি স্থায়ী হয়নি। একাধিকবার চুক্তির মেয়াদ বেড়েছে, কিন্তু বেতন বাড়েনি এক টাকাও! একই পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগকৃতদের সঙ্গে তারা সমানতালে কাজ করছেন। কিন্তু বেতন পান তাদের তিন ভাগের এক ভাগ। পান না অতিরিক্ত কাজের টাকা। তাদের অনেকের সরকারী চাকরির বয়স শেষ হয়েছে। স্থায়ী না হওয়ায় যে কোন মুহূর্তে চাকরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৯ ক্রু বিদেশী এয়ারলাইনসে চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। আরও অনেকেই চাকরি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তরুণ স্মার্ট এই ক্রুরা চাকরি ছাড়তে শুরু করায় বিমানের যাত্রীসেবা হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাদের খেদোক্তি-জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় বিমানকে দিলেও আমরা নিগৃহীত হচ্ছি চরমভাবে। ছুটি নেই, বিশ্রাম নেই, ডিউটি করানো হচ্ছে পারিশ্রমিক ছাড়াই। খাবার থেকে শুরু করে পোশাক সবকিছুতেই আমরা বৈষম্যের শিকার। নিত্যদিনই শুনতে হচ্ছে অশ্রাব্য গালাগাল, চাকরি খাওয়ার হুমকি-ধমকি, আরও কত কি। বছরের পর বছর এমন চলতে থাকলেও দেখার কেউ নেই। আবেদন করলেও আমাদের কথা শোনেনি কেউ। ভুক্তভোগী এসব কেবিন ক্রু বলেন, আমরা অনেক আশা নিয়ে চাকরি নিয়েছিলাম। কিন্তু এটি এখন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক ফ্লাইটে ডিউটি শেষে বিশ্রাম না দিয়েই তুলে দেয়া হচ্ছে আরেক লম্বা ফ্লাইটে। কোন পারিশ্রমিক নেই। সাপ্তাহিক ছুটির দিনও নেই নিস্তার। দিনরাত খাটুনিতে অনেকে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলেও তাদের বেতন কেটে রাখা হয়। ছুটি চাইলে অশ্রাব্য গালাগাল। চাকরি খাওয়ার হুমকি। শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়। ছুটি নেই বলে অবিবাহিতরা বিয়ে করতে পারছেন না। যারা বিয়ে করছেন, তারা পারছেন না সন্তান নিতে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বিমানে বর্তমানে কেবিনক্রুর চরম সংকট। যেখানে নতুন অর্গানোগ্রামে কেবিন ক্রুদের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে ৮ শতাধিক, সেখানে বর্তমানে কাজ করছেন ৪০৮ জন। এর মধ্যে স্থায়ী মাত্র আড়াই শতাধিক। বাকি আমরা ১৪৫ জন কেবিন ক্রু সবাই দৈনিক ভিত্তিক চাকরি করছি। এ জন্য বিমানের গ্রাহক সেবাও বিঘিœত হচ্ছে। যেমন ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইট অপারেট করতে কমপক্ষে ১৬ জন কেবিন ক্রু আবশ্যক, সেখানে প্রায়ই মাত্র ১২ জন দিয়ে ডিউটি করানো হয়। এতে একদিকে যাত্রীসেবায় ফাঁকি দেয়া হচ্ছে অন্যদিকে কাজের ভারে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এমন একটা জরুরী ইস্যু বিমান জেনেও আমলে নিচ্ছে না। একইভাবে জেদ্দা ও রিয়াদের মতো দূর পাল্লার ফ্লাইটেও কম কেবিন ক্রু দিয়ে যাত্রী সেবা দেয়া হয়। এতে যাত্রীদের মূলত ঠকানো হচ্ছে। অথচ তাদের কাছ থেকে সেবার পুরো টাকাই নেয়া হয়।
×