ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এদেশের সাহিত্যিকদের সত্য উচ্চারণ আমাকে অভিভূত করেছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১১ নভেম্বর ২০১৮

এদেশের সাহিত্যিকদের সত্য উচ্চারণ আমাকে অভিভূত করেছে

মনোয়ার হোসেন ॥ বিশ্বখ্যাত মার্কিন লেখক পুলিৎজারজয়ী এ্যাডাম জনসন। অংশ নিয়েছেন ঢাকা লিট ফেস্টে। উৎসব আঙ্গিনায় কথা হয় এই লেখক ও শিক্ষাবিদের সঙ্গে। জনকণ্ঠ প্রতিনিধির সঙ্গে সে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের চিন্তার স্বাধীনতা, অবরুদ্ধ উত্তর কোরিয়ার কথা, লিট ফেস্টের উৎসবমুখরতা, বিশ্বব্যাপী আলোচিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকা-সহ বিবিধ বিষয়। বাংলাদেশের সাহিত্য প্রসঙ্গে এ্যাডাম জনসন বলেন, বাংলাদেশে এটি আমার প্রথম সফর। এখানে এসে দারুণ লাগছে। চিন্তার স্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের সত্য উচ্চারণ আমাকে অভিভূত করেছে। তারা আসলে যা বলছেন তা কিন্তু বিশ্বের সব কবি-সাহিত্যিকদেরই কথা। আর এটাই আমার জন্য একটা নতুন দেশে আসার অন্যতম উদ্দেশ। আমি নতুন লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হতে পারব, নতুন নতুন বই পড়তে পারব। যে কারণেই আমি আমার সাধ্যমতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরতে চেষ্টা করি। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আমার অনেক ছাত্র আছে। আমি তাদের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করি। যেটা একজন শিক্ষক হিসেবেও আমাকে ঋদ্ধ করে। এ্যাডাম জনসনের লেখা প্রথম উপন্যাস ‘দ্য প্যারাসাইট লাইক আস।’ উপন্যাসটি এক নৃ-বিজ্ঞানী এবং একটি ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠীর মানুষদের ঘিরে। প্রথম উপন্যাসে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে নিয়ে লেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি মনে করি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের জীবনের গল্পগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আমার জন্মভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তো বিরাট বিষয়। কারণ আমেরিকা পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ক্ষুদ্র নৃ-জাতিসত্তার দেশ। তাই তাদের জীবনের গল্পগুলো, তাদের কথাগুলো আমার কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ্যাডাম জনসনের সর্বোচ্চ আলোচিত বই ‘দ্য এরফ্যান মাস্টার’স সন।’ ’১২ সালে উপন্যাসটির জন্য তিনি পুলিৎজার সম্মাননা পেয়েছেন। এতে উঠে এসেছে উত্তর কোরিয়ার নানা কাহিনী। উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে লেখার বিষয়ে এ্যাডাম জনসন বলেন, এটি এমন একটি দেশ যেখানে লেখকদের বই লেখার অনুমতি নেইÑ বিষয়টা ভাবা যায়! আমি সেখানে যাই। মানুষের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু তারা সহজে কথাও বলতে চায় না বাইরের কারও সঙ্গে। আমার মনে হয়েছে তাদের নিজেদেরই অনেক গল্প আছে যা বিশ্বের কাছে বলা উচিত। আরও মজার বিষয় এই যে অনেকে যারা উত্তর কোরিয়া থেকে পালাতে সক্ষম হয় তারা রীতিমতো ট্রমাটাইজ থাকে। তারাও উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে অনেক কথা বলতে চায় না। বিষয়গুলো আমাকে সত্যিই ভাবিয়েছে। লেখকের পরবর্তী লেখা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সত্যি বলছি, ঢাকা নিয়ে লিখব। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি বইয়ের কাজ করছি। আর জলবায়ু পরিবর্তনে যেসব দেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার অন্যতম বাংলাদেশ। আমি সুন্দরবন ঘুরতে চাই। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের এই সম্পদটিরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকা- প্রসঙ্গে এ্যাডাম বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটা ঘটনা। এক খুনীকে একটি দেশে পাঠানো হলো একজন মানুষকে হত্যার জন্য, এটা শুধু খাশোগি নয় যে কোন মানুষের হত্যার জন্য ভয়ঙ্কর একটি সত্য। আর খাশোগি এমন এক সাংবাদিক যার মাধ্যমে মানুষের কণ্ঠ ছড়িয়ে যায়। তিনি যে কাজটি করেন তা সরকারের কার্যক্রমে দৃষ্টিপাত করে। ক্ষমতার অপব্যবহার জানান দেয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই হত্যাকা- নিয়ে আমার দেশও চুপ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজীর অধ্যাপক এ্যাডাম জনসন। ’১৫ সালে ন্যাশনাল বুক এ্যাওয়ার্ড জিতে নেন তিনি। ’১৩ সালে ‘দ্য অফ্যান মাস্টার’স সন’ উপন্যাসের মাধ্যমে জয় করে নেন পুলিৎজার পুরস্কার। তার লেখা কল্পকাহিনী প্রকাশিত হয়েছে স্কোয়ার, জিকিউ, হার্পার’স ম্যাগাজিনসহ টিন হাউস, দ্য বেস্ট আমেরিকান শর্ট স্টোরিতে।
×