ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শহর, গ্রামেগঞ্জে এখন কেবলই ভোটের উৎসবের আমেজ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৯ নভেম্বর ২০১৮

শহর, গ্রামেগঞ্জে এখন কেবলই ভোটের উৎসবের আমেজ

সমুদ্র হক ॥ আর রাখঢাক নেই। সব পথ মিশে গেছে ভোটের মাঠে। শীতের আগমনে তাপমাত্রা নিচে নামছে। তবে ‘ইলেকশন ফিভার’ মাপার থার্মোমিটারের মার্কারি উপরের দিকেই উঠছে। আওয়ামী লীগের যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের ভর্তি ফর্মের মতো মনোনয়ন ফর্ম বিতরণ শুরু হচ্ছে শুক্রবার। অন্যান্য দলের মনোনয়ন ফর্ম বিতরণ এই শুরু হলো বলে। তারপর আছে জোটভুক্ত হওয়া না হওয়ার প্রক্রিয়া। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মানসিক চাপ দ্রুত বাড়ছে। যা থেকে সৃষ্ট রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। দুয়ারে ভোট। হাতে সময় কম। নাওয়া-খাওয়ার সময় ঠিক থাকছে না। রাতের ঘুমও কমে এসেছে। এমন চাপের মুখোমুখি হওয়া সম্ভাব্য প্রার্থী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মন-মেজাজের পাশাপশি ভোটাররা আছে ফুরফুরে ও খোশ মেজাজে। বিশেষ করে নতুন ভোটারদের ভোট প্রদানের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। তাদের অপেক্ষা একটি সুন্দর সকালের; যেদিন জীবনে প্রথম তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে একাদশ সাধারণ নির্বাচনে নতুন ভোটারের সংখ্যা দুই কোটির বেশি। বগুড়ার ভোটের মাঠের এই চিত্রের সঙ্গে দেশের আর সব এলাকার চিত্র কমবেশি একই। খোঁজখবর করে এমনটিই জানা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে একাদশ সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই হিসাবে নির্বাচন হবে ভর শীত মৌসুমে। অর্থাৎ পৌষ মাসে। এর আগেই অগ্রহায়ণ মাস শুরু হয়ে পৌষ মাস পর্যন্ত নবান্নের উৎসব চলতে থাকবে। নবান্ন ও ইলেকশনের যৌথ উষ্ণ উৎসবে এবারের শীত কতটা পড়বে! এবারের শীত ইলেকশনের উষ্ণতার কাছে কতটা হার মানবে! কারণ ভোটের মাঠের উষ্ণ হাওয়ায় জলীয়বাষ্প ওলটপালট হবে। আর পশ্চিমাবায়ু দিশা হারিয়ে এলোমেলো বইবে। জলবায়ু বিশারদদের মতে, শীতের স্থায়িত্বকাল কমে এসেছে। তার ওপর একাদশ নির্বাচনের আনন্দঘন হৈহুল্লোরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শীত যে কতটা অনুভূত হবে কে জানে। যেভাবেই শীত পড়ুক পাঁচ বছর অন্তর ভোটাররা কয়েকটা দিন রাজা হয়েই থাকবেন। তাদের দুয়ারে আনাগোনা বাড়বে প্রার্থীদের। এই ক’দিন বাক্সবন্দী হয়ে থাকবে প্রার্থীদের রাগ-অনুরাগ, চোখ রাঙানী। ভোটের মাঠে সৃষ্টি হবে অর্থনীতির বাড়তি বলয়। নির্বাচনী এলাকার পথেপ্রান্তরে বেড়ে যাবে ভাসমান দোকান। বিশেষ করে চায়ের দোকান। ভাসমান চায়ের দোকানে এখন শুধু চা থাকে না। কফিও পাওয়া যায়। ৫ ও ১০ টাকার কফির স্ট্রিপ গরম পানিতে গুলিয়ে দিলেই হলো। এ ছাড়াও বিদ্যুতায়িত এলাকায় চায়ের দোকানে কফি মেকার বসেছে। বিস্কুট, কলা, বেকারি সামগ্রী ও হোটেলে বেচাকেনা বেড়ে যাবে। এভাবে কয়েকটা দিন আলোঝলমলে হয়ে থাকবে গ্রামীণ অর্থনীতির আকাশ। গ্রামের পথে পা বাড়ালে এমন প্রস্তুতির চিত্র ভেসে আসছে। এই সময়টায় আমন আবাদের মাঠও সোনালি হয়ে উঠছে। বগুড়ার মাঠে যদিও আমন মাড়াইকাটাই শুরু হয়নি। কৃষক দিন গুনছে। আমন ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিয়েছে। কৃষকবধূ বাড়ির উঠান লেপে নিচ্ছে। উৎসবের এমন আয়োজনের পাশাপাশি ইলেকশনের উৎসবও গতি পাচ্ছে। মনোনয়ন না পাওয়া পর্যন্ত এখন সকল প্রত্যাশী প্রার্থী হওয়ার আমেজ নিয়েই মাঠে যাচ্ছেন। কুশলাদি বিনিময়ের সঙ্গে এমন মধুর আচরণ করছেন যেন কতদিনের চেনা। বয়স্ক ভোটাররা তাদের এমন আচরণ দেখে অভ্যস্ত। বর্তমানে এই ভোটাররাও খুব কৌশলী। কখনও ডিপ্লোম্যাটের চেয়েও বেশি। এর কারণ ‘ভিলেজ পলিটিক্স’ দেখে ভোটাররা এতটাই অভ্যস্ত যে সম্ভাব্য প্রার্থীগণের কে বসন্তের কোকিল আর কে শহুরে বাবু তা বুঝতে শিখেছে। এখন আর তারা ইমোশনাল নন। প্রার্থীগণের ইমোশনাল ব্ল্যাক মেলিং করার কথার অর্থ তারা বোঝে গ্রামীণ ভাষায়। পাশাপাশি নতুন তরুণ ভোটার আছে প্রথম ‘কলেজ লাইফের’ আমেজ নিয়ে। কোন পরোয়া করছে না। তাদের একটাই লক্ষ্য : জীবনে প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এই তরুণ ভোটারদের নিয়ে ভাবতে হবে প্রার্থীদের। এর অন্যতম কারণ তারুণ্যের উদ্দীপনায় এদের মনটিও জোয়ার-ভাটার মতো। কখন কোন্দিকে যায় তা নিজেরাও ঠিক করতে পারে না। এদের আবেগটিও বেশি। সব মিলিয়ে ভোটের সকল পথ এখন মিশে গেছে এক প্রান্তে। যেখানে ইলেকশন। এই পথ প্রার্থীর। এই পথ ভোটারের। এই পথ সাধারণের। এই পথ গণতন্ত্রের। এই পথ পাঁচ বছর অন্তর গণতন্ত্রের উৎসবের। যে উৎসবের পথ ধরে জনগণ রাজনৈতিক দলকে বসিয়ে দেবে ক্ষমতায়।
×