ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে কাজ

নির্বাচনের সময়েও দশ মেগা প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে থাকবে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৯ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচনের সময়েও দশ মেগা প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে থাকবে

এম শাহজাহান ॥ প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক দশটি মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরদারির মধ্যে থাকবে মেগা প্রকল্পগুলো। দশ মেগা প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থব্যয়ে সক্ষমতা দেখিয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। সর্বশেষ গত জুন মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পে ১৬ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যা মোট বরাদ্দের প্রায় ৫৯ শতাংশ। মোট ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হতে যাচ্ছে দেশের বৃহত্তম এই সেতু। এরপরই অর্থব্যয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার যানজট নিরসন হবে। এছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে পায়রাবন্দর। অর্থব্যয়ে এই প্রকল্পটি তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের মোট বরাদ্দের প্রায় ৩৪ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্রমতে, নির্বাচনকালীন সরকারের সময় এসব প্রকল্পের কাজ যাতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নিয়মিত এসব প্রকল্পের দিকে নজর রাখবে। ইতোমধ্যে মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক এসব প্রকল্পের কাজ। ভবিষ্যতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার ভিত্তি রচনার ক্ষেত্রে মেগা প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, পদ্মা বহুমুখী সেতুটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ও দূরত্ব ও সময় হ্রাস পাবে। জিডিপি বাড়বে ১ শতাংশ। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পে ক্রমপুঞ্জীভূত ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। প্রায় ৫৯ শতাংশ। এছাড়া উত্তরা ফেজ-৩ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০.৬ কিমি. দীর্ঘ মেট্রো রেল লাইন-৬ বাস্তবায়নের কাজ শেষ হলে গণপরিবহন অনেক সম্প্রসারিত হবে। ঢাকার যানজট হ্রাস পাবে। জাইকার আর্থিক সহায়তায় এ প্রকল্পটির জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে যা মোট ব্যয়ের প্রায় ২৪ শতাংশ। পদ্মা রেল সংযোগ সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। চীনের আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং জুন পর্যন্ত ৯ হাজার ৭৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে যা মোট ব্যয়ের প্রায় ২৪ শতাংশ। এছাড়া দোহাজারী রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে গুণদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে। এডিবির আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ১৮ শতাংশ। এদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পে বিদ্যুত উৎপাদনের বড় উৎস হিসেবে কাজ করবে। এ প্রকল্পে অর্থ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে রাশিয়া। জুন পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। মাতার বাড়ি আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্প থেকে আসবে বিপুল পরিমাণ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত। জাইকার অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পে ৪ হাজার ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। যা মোট ব্যয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ। এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীতে একটি ফ্লোটিং স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। আরও একটি এফএসআরইউ স্থাপনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। গ্যাসের প্রাকৃতিক উৎস ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। এছাড়া ভারতের আর্থিক কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন রামপাল থার্মাল বিদ্যুত প্রকল্পে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করবে। এ প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ১৬ হাজার কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৯৫ কোটি টাকা। পায়রাবন্দর নির্মাণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সমুদ্র বন্দরের সুবিধাদি বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। এ প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে সরকার। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৩৪ শতাংশ। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫০ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি জিটুজি এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও দাতা সংস্থা সন্ধানের চেষ্টা চলছে। দশ মেগা প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতোমধ্যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার উদ্দেশে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক দশটি বৃহৎ প্রকল্পকে মেগাপ্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরদারিতে আনা হয়েছে। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হবে। এদিকে, অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পে। পদ্মা সেতুর রেল সংযোগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। মূল সেতুর জন্য রাখা হচ্ছে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প বা মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, অবকাঠামো খাতে সরকারের বিনিয়োগ বাড়ছে। বাজেট বাস্তবায়নের হার গড়ে এখন প্রায় ৯০ শতাংশ থাকছে প্রতিবছর। এটা আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সব মেগা প্রজেক্ট আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো টাকার অঙ্কে বৃহৎ, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও জটিল। প্রকিউরমেন্টের দিক থেকেও অনেক বেশি আমদানি নির্ভর। আর এ কারণেই এগুলো ছিল আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এখন সেগুলো কাটিয়ে ওঠা গেছে। এসব প্রকল্পের কাজ এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
×