ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোর ব্যবস্থা

নির্বাচন সামনে রেখে হার্ডলাইনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৯ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচন সামনে রেখে হার্ডলাইনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী

শংকর কুমার দে ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় হার্ড লাইন বেছে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হস্তে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জনজীবন স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে টহল শুরু, চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি, নজরদারি, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গী, অপরাধী গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হার্ড লাইন বেছে নেয়ার খবর পেয়ে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার দিন বৃহস্পতিবার রাজশাহী অভিমুখে রোড মার্চ ও জনসভার ঘোষণা দিয়েছিল তা বুধবার রাতেই আকস্মিকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট। বুধবার রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেনকে। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ আদালতে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে নাইকো দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশী বাধার মুখে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে জাতীয় বিপ্লবী ও সংহতি দিবসের পূর্বঘোষিত যে আলোচনা সভা হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি। শুধু তাই নয়, বিএনপির অন্তত ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য র‌্যাব মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে মহড়া দিতে শুরু করেছে। র‌্যাব-৮-এর কার্যালয় সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের ঠেকাতে র‌্যাব-৮-এর আওতাধীন বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর এবং শরীয়তপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ নিয়ে নিরাপত্তা মহড়া দিয়েছে র‌্যাব। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে তারা মিরপুর এলাকা থেকে আট ব্যক্তিকে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সন্ত্রাসী, অপরাধী, মাদক কারবারি, জঙ্গী, গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যেকোন বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন শেষে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যাবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি মিডিয়া মোঃ মাসুদুর রহমান বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ভবনে ঢাকা মেট্রোপলিটন কমিশনারের সঙ্গে গত ৩ নবেম্বর শনিবার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ভবন, সিইসি, নির্বাচন কমিশনারদের নিরাপত্তা ও তফসিল পরবর্তী মেট্রোপলিটন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে এসেছিল ডিএমপির প্রতিনিধি দল। ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ ৭ পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন সিইসি। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার আগে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে সিইসি ভবনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে ডিএমপির ডিসি মাসুদুর রহমানের দাবি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সরকার বিরোধী সহিংস আন্দোলন গড়ে তুলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভ-ুল করার ছক কষার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করতে না পারে সেজন্য নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ে সহিংসতা ও নাশকতা সৃষ্টি করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। এ ক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তির সহায়তায় তৃতীয় পক্ষকে ডেকে আনার ছক কষা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথের আন্দোলনে যে কোন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- ঠেকাতে দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। সারাদেশের বিএনপি-জামায়াত, তাদের অঙ্গ সংগঠন-সহযোগী সংগঠন ও সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মী, ক্যাডারের তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যেসব নেতা-কর্মী, ক্যাডারদের বিরুদ্ধে বিগত সময়ে আন্দোলনের নামে সহিংসতা, নাশকতামূলক তৎপরতা চালিয়ে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে এবং রাজপথে ওই ধরনের ফৌজদারি অপরাধ করার আশঙ্কা বিদ্যমান তাদের নামের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও ক্যাডারের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমাবাজির মামলা রয়েছে, তাদের নামের তালিকা তৈরি করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে।
×