ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ বিয়ে-শাদি বা নিকাহ্

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৯ নভেম্বর ২০১৮

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ বিয়ে-শাদি বা নিকাহ্

(গত শুক্রবারের পর) তখন হযরত ফাতিমা (রা) বললেন : আল্লাহ ও তাঁর রসূল যাতে রাজি আমিও তাতে রাজি। এরপর হযরত রসূলুল্লাহ (সা) হযরত আলী (রা)-কে বললেন : তোমার কাছে কি আছে? তিনি বললেন একটি ঘোড়া এবং একটি বর্ম। হযরত রসূলুল্লাহু (সা) বললেন : ঘোড়াটি তোমার কাজে লাগবে। বর্মটি বিক্রি কর। তিনি বর্মটি চার শ’ আশি দিরহামে বিক্রি করে প্রাপ্ত মূল্য এনে প্রিয়নবী (সা.)-এর কোলের ওপর রাখলেন। হযরত রসূলুল্লাহ্্ (সা) কিছু দিরহাম হযরত বিলাল রাদিআল্লাহ্্ তা’আলা আন্্হুর হাতে দিয়ে বললেন : বাজার থেকে খোশবু কিনে আনো। হযরত বিলাল খোশবু কিনে আনলেন। হযরত রসূলুল্লাহ্্ (সা)-এর নির্দেশে তিনি হযরত আনাস (রা), হযরত আবু বকর (রা), হযরত উমর (রা), হযরত উসমান (রা), হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ (রা)-সহ বেশ কয়েক মুহাজির ও আনসার সাহাবায়ে কেরামকে ডেকে আনলেন। হযরত আলী (রা) তখনও মজলিসে উপস্থিত হননি। হযরত রসূলুল্লাহ্ (সা) খুতবা পাঠ করে বললেন : ফাতিমাকে আলীর সঙ্গে শাদি দেয়ার নির্দেশ আমি আল্লাহ্র কাছ থেকে পেয়েছি। তোমরা সাক্ষী হও যে, আমি চার শ’ মিসকাল রুপার মহরানার ইওয়াজে ফাতিমাকে আলীর সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছি, যদি আলী তা কবুল করে। ঠিক সেই মুহূর্তে মজলিসে আলী (রা) হাজির হলেন। হযরত রসূলুল্লাহ (সা) আবার ওই কথাগুলো হযরত আলী (রা)-কে শুনিয়ে বললেন, আলী! তুমি কি এটা কবুল করেছ? হযরত আলী (রা) বললেন, আলহাম্ দুলিল্লাহ্ আমি আল্লাহ্্ সব নিয়মতের শোকর গুজারি করছি এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমি তাকে কবুল করলাম। হযরত রসূলুল্লাহ (সা) বললেন : আল্লাহ্্ তোমাদের মিলন দান করুন, তোমাদের চেষ্টাকে ফলবতী করুন, তোমাদের ওপর বরকত বর্ষণ করুন, তোমাদের পবিত্র সন্তান-সন্তুতি দান করুন। এরপর এক ঝুড়ি খেজুর আনিয়ে তিনি মজলিসের সবাইকে বললেন: এর থেকে তোমরা লুট করে খাও। মজলিসের সবাই ঝুড়ি থেকে কাড়াকাড়ি করে খেজুর তুলে নিয়ে আনন্দের সঙ্গে তা খেতে লাগলেন। প্রিয়নবী সরকারে দো-আলম নূরে মুজাসসম হযরত মুহম্মদ (সা) হযরত ফাতিমা (রা)-কে জেহেজ দিলেন ঝাউকাঠ দিয়ে তৈরি করা খাটিয়া, খেজুরের পাতা ভরা একটি চামড়ার বালিশ, ছাগলের চামড়া ও ভেড়ার চামড়ার দুটো মশক, আটা পেষার জন্য যাঁতা, দুটো লাঠির কলসি আর হযরত আলী (রা)-কে দিলেন একটি মেষ চর্ম ও একখানি পুরনো ইয়ামনী চাদর। তারপর রুনুমায়ী (বর-কনের মুখ দর্শন) হলো। হযরত রসূলুল্লাহ (সা) হযরত আলী (রা)-কে বললেন : আমি না আসা পর্যন্ত তুমি ফাতিমার সঙ্গে কথা বলবে না। রাতে প্রিয়নবী (সা) বাসর ঘরে ঢুকে ফাতিমা (রা)-কে বললেন : মা, এক পেয়ালা পানি নিয়ে এসো। হযরত ফাতিমা (রা)-এর পা হাঁটতে গিয়ে লজ্জায় ওড়না জড়িয়ে যাচ্ছিল। তিনি কাঠের পেয়ালায় পানি ভর্তি করে আনলেন। হযরত রসূলুল্লাহ (সা) পেয়ালার কিছুটা পানি মুখে নিয়ে আবার তা পেয়ালাতেই রাখলেন। তিনি কন্যাকে তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াতে বললেন। তখন তিনি ফাতিমা (রা)-এর মাথায় ও বুকে ওই পেয়ালার পানি হাতে নিয়ে ছিটিয়ে দিলেন, তারপর দোয়া করলেন এবং সমস্ত পানি ফাতিমার দুই কাঁধে ঢেলে দিলেন, তারপর হযরত আলী (রা)-কে আর এক পেয়ালা পানি আনতে বললে হযরত আলী পানি নিয়ে এলে একইভাবে আলীর ওপর পানি ছিটিয়ে দিয়ে দোয়া করে বললেন : আল্লাহুম্মা বারিক ফিহিমা ওয়া বারিক লা হুমা ফী শামলিহিমা। তারপর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে এই নবদম্পতির জন্য দোয়া করে বললেন : বিস্মিল্লাহি ওয়া বারাকাতিহি। অতঃপর হযরত আলী করামাল্লাহু ওয়াজহাকে বললেন: আপন স্ত্রীর সমীপবর্তী হও। এই বলে তিনি বাইরে এলেন। আসার সময় তিনি কন্যা ফাতিমা (রা)-কে বললেন : মা, আমার বংশের উত্তম ব্যক্তির সঙ্গে তোমার শাদি দিলাম। বিয়ের তিন দিন পর হযরত আলী (রা) ওয়ালিমা (বউ ভাত) অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। তাতে খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল যবের রুটি এবং মেষের গোশ্ত। এ ছাড়া ছিল খেজুর এবং ঘি ও খেজুর দিয়ে তৈরি হায়স নামক এক উন্নত মানের হালুয়া। এই হযরত আলী (রা) ও ফাতিমা (রা) দম্পতিরই পুত্র হচ্ছেন হযরত হাসান (রা) ও হযরত হুসাইন (রা)। যাদের সম্পর্কে প্রিয়নবী (সা) বলেছেন : এঁরা জান্নাতের যুবকদের সরদার। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আন্নিকাহু মিন্্ সুন্নাতি ফামান রাগিবা ‘আন্্ সুন্নাতি ফা লায়সা মিন্নীÑ বিয়ে আমার সুন্নত, যে আমার সুন্নতকে প্রত্যাখ্যান করে সে আমার দলের নয়। বিয়ে-শাদি উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন, নিটকজন, আপনজন, পাড়া-প্রতিবেশীকে খাওয়ানো হয়, বিশেষ করে যে ওয়ালীমা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তা করা সুন্নত। তবে এতে অপচয় হতে পারে এমন কোন ব্যয় করা আদৌ উচিত নয় এবং শুধু ধনী ও প্রভাবশালীদের বেছে বেছে দাওয়াত না দিয়ে দরিদ্র ভুখা-নাঙ্গা মানুষকেও এই দাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। হাদিস শরীফে আছে : সর্বনিকৃষ্ট খানার মজলিস হচ্ছে সেই ওয়ালিমার মজলিস যাতে ধনবানদের দাওয়াত দেয়া হয় আর বিত্তহীনদের বাদ দেয়া হয়। আর যে জন দাওয়াত পেয়ে তা প্রত্যাখ্যান করল সে অবশ্যই রসূলুল্লাহর নাফরমানি করল। প্রিয়নবী (সা) কারো বিয়ে করার কথা শুনলে তাঁকে বলতেন : বারাকাল্লাহু লাকা আওলিম্্ ওয়ালাও বিশাতি- আল্লাহ্্ তোমাকে প্রাচুর্য দান করুন। ওয়ালিমার আয়োজন কর একটি বকরি দিয়ে হলেও। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা)
×