স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি মঞ্চে এসেছে নাট্যম রেপার্টরির ষষ্ঠ প্রযোজনা নাটক ‘ডিয়ার লায়ার’। জেরমি টিমোথি কিলটি রচিত ‘ডিয়ার লায়ার’ নাটকটি অনুবাদ করেছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত অনুবাদক অধ্যাপক আবদুস সেলিম। নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের গুণী নির্দেশক ড. আইরিন পারভীন লোপা। নাটকে বার্নার্ড শ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মঞ্চ সারথী আতাউর রহমান এবং স্টেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরেক গুণী অভিনয় শিল্পী অপি করিম। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে নাটকটির তৃতীয় মঞ্চায়ন হবে বলে জানা গেছে।
‘ডিয়ার লায়ার’ নাটকের আবহসঙ্গীত করেছেন তানভির আলম সজীব, আলো বজলু, অঙ্গ সজ্জায় বাবুল, গ্রাফিক্স ডিজাইন দিবেন্দু উদাস। নাটকের নেপথ্য শিল্পী উজ্জল, তমা, মুক্তনীলসহ নাট্যম রেপার্টরির সদস্যরা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে গত ১৮ অক্টোবর নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। এরপর দিন নাটকের দ্বিতীয় প্রদর্শনী হয়। নাট্যম রেপার্টরির নান্দনিক প্রযোজনা ‘ডিয়ার লায়ার’। উনিশ শতকের প্রথমদিকে বিশ্ববিখ্যাত আইরিশ সাহিত্যিক ও নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ তখনকার প্রখ্যাত মঞ্চ অভিনেত্রী প্যাট্রিক ক্যাম্পবেল স্টেলার প্রেমে পড়েন। স্টেলা এবং বার্নার্ড শ’র মধ্যে যে গভীর প্রেম গড়ে উঠেছিল তা প্রকাশ পায় তাদের মধ্যে আদান-প্রদান করা কিছু চিঠিতে। কালের পরিক্রমায় তাদের এই ভালবাসার চিঠিগুলো নিয়ে জেরমি টিমোথি কিলটি লিখেছেন নাটক ‘ডিয়াল লায়ার’। নাটকে শুধু প্রেম ভালবাসার কথাই ফুটে ওঠেনি পাশাপাশি তাদের পারিবারিক অবস্থার কথা, উঠে এসেছে ইউরোপিয়ান যুদ্ধের কথা আর সঙ্গে প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথাও ফুটে উঠেছে। তবে তাদের দু’জনের চিঠিতে যেটি বেশি করে লক্ষণীয় তা হলো ভালবাসার মিষ্টি যুদ্ধ। যে যুদ্ধটা মঞ্চ সারথী আতাউর রহমান এবং অপি করিম বেশ ভালই জমিয়ে তোলেন। ‘ডিয়ার লায়ার’ নাটকটি মূলত মঞ্চে পাঠ নাটক হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। কিন্তু পাঠ-অভিনয় হিসেবে উপস্থাপিত হলেও এর মাত্রা ছিলো ভিন্ন। ভিন্ন এক অভিধায় নাটকটি নির্মাণ করেছেন নির্দেশক আইরিন পারভীন লোপা। এই নাটকের মধ্য দিয়েই অপি করিম নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের বাইরে কোন নাট্য দলে অভিনয় করছেন। নাটকের অঙ্গসজ্জার কারণে মঞ্চ সারথী আতাউর রহমানকে অনেকটাই বার্নার্ড শ’য়ের মতো মনে হয়। আর সেই সঙ্গে তার সুনিপুণ আভিনয় দর্শককে সময়ের পরিক্রমটাও বেশ ভালভাবেই মনে করিয়ে দেয়। বয়স বাড়ছে আর সেই সঙ্গে পরিবর্তন হচ্ছে অভিনয় শিল্পীর কণ্ঠ। কণ্ঠের জাদু খেলায় মাতিয়ে রাখাই পাঠ-অভিনয়ের প্রধান লক্ষ্য। দু’একটি ভুলত্রুটি ছাড়া অভিনেতা সেই লক্ষ্যে ঠিকঠাক পৌঁছতে চেষ্টা করেন নিঃসন্দেহে। সেই সঙ্গে আছে অপি করিমও। এক ঘন্টার এ নাটকে দু’জনের অভিনয়ে মুগ্ধ হতে থাকে নাট্যপিপাসু দর্শক। সাধারণত পাঠ-অভিনয়ে মঞ্চসজ্জার কোন বালাই থাকে না কিন্তু তাতেও এক নতুনত্ব এনেছেন নির্দেশক। নাটক দেখতে ঢুকে প্রথম দর্শনেই দর্শকমনে করবে এটি বোধহয় মঞ্চ নাটকই হবে। খুবই সাধারণের মধ্যে বেশ ভাল একটি রুচিশীল মঞ্চ নির্মাণের চেষ্টা করেছেন নির্দেশক নিজেই। আবার অভিনেতাদের মঞ্চে হাঁটাচলা দেখেও মনে হয় হয়তো এটি মঞ্চাভিনয়, পাঠাভিনয় নয় । পাঠ নাটক হলেও নাটকে মঞ্চ নাটকের সবকিছুই রেখেছেন তিনি। মাঝে মধ্যে তাদের দু’জনের মুভমেন্ট, নাটকের আবহসঙ্গীত, পোশাক, আলো, মঞ্চ নির্মাণসহ সবকিছুই আছে ‘ডিয়ার লায়ার’ এ। যা দর্শককে একাধিকবার মঞ্চে নিয়ে যায়। ‘ডিয়ার লায়ার’ ঢাকার মঞ্চে অন্যতম ভাল লাগার মত একটি প্রযোজনা।
