ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

বাংলা সিনেমার শতবর্ষ

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৮ নভেম্বর ২০১৮

বাংলা সিনেমার শতবর্ষ

‘বাংলা সিনেমার শতবর্ষ’ এই শিরোনামে লিখতে বেশ গর্ব অনুভব করছি। বাংলা সংস্কৃতির একজন মানুষ হয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের এমন দীর্ঘ সময়ের ইতিহাস বেশ মর্যাদার। আমরা যারা বিংশ বা একবিংশ শতাব্দীর মানুষ তাদের কাছে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস কয়েক পুরুষের। সময় ১৯১৮, প্রথম বাংলা নির্বাক ফিচার ফিল্ম ‘বিল্ব মঙ্গল’, পরিচালক রুস্তমজী ধতিওলা-এর তেরো বছর পর প্রথম সবাক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘জামাই ষষ্ঠী’ এরপর গৌরবের দীর্ঘ ইতিহাস। এখন ২০১৮, সময়ের হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রের বয়স একশ’ বছর। যদিও উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের বয়স অর্ধযুগ আগেই একশ’ পেরিয়েছে। তারপরও বিশ্ব চলচ্চিত্রে বাংলা চলচ্চিত্রের তাৎপর্য নিজ যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সত্য বলতে উপমহাদেশ বা ভারতীয় চলচ্চিত্রকে বিশ্বদরবারে বাংলা সিনেমা অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, তপন সিন্হা, ঋতুপর্ণ ঘোষদের মতো চলচ্চিত্র পরিচালকরা বাংলা সিনেমাকে দিয়েছে অনন্যমাত্রা। আজ বাংলা চলচ্চিত্র সময় এবং কাজে পরিণত। আসছে ১০ নবেম্বর কলকাতায় শুরু হচ্ছে ২৪তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। বাংলা সিনেমার শতবর্ষ উপলক্ষে আসছে শনিবার কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে প্রদীপ জ্বালিয়ে এই উৎসব উদ্বোধন করবেন বলিউড নক্ষত্র অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, ওয়াহিদা রহমানসহ বলিউড বাদশা শাহরুখ খান, সঞ্জয় দত্ত, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মহেশ ভাট, নন্দিতা দাশ ও আরও অনেক নন্দিত মানুষেরা। পঞ্চমবারের মতো এবারও উৎসবের উদ্বোধন করবেন অমিতাভ বচ্চন। ২৪তম এই উৎসবে ভারতের বাইরে থেকে যোগ দিচ্ছেন মাজিদ মাজিদি, ফিলিপ নয়েস, জিল বিলকক, সাইমন বেকারের মতো বরেণ্য নির্মাতারা। এদের সঙ্গে টালিউডের ধ্রুবতারা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায় গৌতম ঘোষ, রঞ্জিত মল্লিক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়দের মতো গুণী মানুষেরা। মহানায়ক উত্তম কুমার ও তনুজা অভিনীত ‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ দিয়ে এই উৎসবের পর্দা উঠবে। একই সঙ্গে ১৪টি কালজয়ী বাংলা ছবি দেখানো হবে। আট দিনের এই উৎসবে ট্যাগ লাইন ‘কার্নিভ্যাল অব ওয়ার্ল্ড’। এই উৎসবের জন্য ১৫০০ ছবির আবেদন জমা পড়েছে, এর মধ্য থেকে ৭০টি দেশের ১৭১টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি আর ১৫০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি উৎসবের জন্য বাছাই করা হয়েছে। এসব ছবি দেখানো হবে কলকাতার ১৬টি প্রেক্ষাগৃহে। উৎসব চলবে ১৭ নবেম্বর পর্যন্ত। উৎসবের ‘ফোকাস কান্ট্রি’ অস্ট্রেলিয়া। বিশেষ ফোকস কান্ট্রি তিউনিসিয়া। এ বছর অস্ট্রেলিয়ান সিনেমারও শতবর্ষ। যে কারণে উৎসবে থাকছে অস্ট্রেলিয়ার বেশকিছু সিনেমা। উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক প্রসেনজিৎ বলেছেন, ‘বাংলা ছবিকে বিশ্ব আঙ্গিনায় পৌঁছে দেয়ার জন্য এ বছর উৎসবের মূল লক্ষ্য করা হয়েছে। এই উৎসবকে ঘিরে জলসাঘর বিভাগে থাকছে ১০০টি কালজয়ী বাংলা গানের প্রদর্শনী। চলচ্চিত্রের জনক হীরালাল সেনের স্মরণে ১৩ নম্বেবর মধুসূদন মঞ্চে প্রদর্শিত হবে নাটক ‘হীরালাল বায়োস্কোপ’। উৎসবে সেরা বিদেশী ছবির পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে ৫১ লাখ রুপী আর শ্রেষ্ঠ পরিচালককে ২১ লাখ রুপী সঙ্গে থাকবে রয়েল বেঙ্গল গোল্ডেন টাইগার ট্রফি। সেরা ভারতীয় ছবিকে দেয়া হবে ‘হীরালাল সেন মেমোরিয়াল এ্যাওয়ার্ড’। শ্রেষ্ঠ ছবিকে দেয়া হবে পাঁচ লাখ রুপী, শ্রেষ্ঠ নির্দেশককে দেয়া হবে সাত লাখ রুপী। শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিকে পাঁচ লাখ রুপী। শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রকে দেয়া হবে তিন লাখ রুপী এবং স্মারক। কলকাতা ২৪তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পালিত হবে ‘বাংলা সিনেমার শতবর্ষ’ যে কারণে এই উৎসেবের গুরুত্ব বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের কাছে অন্যবারের তুলনায় একটু বেশি গুরুত্ববহ।
×