ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অপূর্ব কুমার কুণ্ডু

বরদেশ্বরী ত্রিনয়নী নাট্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৮ নভেম্বর ২০১৮

বরদেশ্বরী ত্রিনয়নী নাট্যোৎসব

গছের শিকড় মাটির তলে নিম্নগামী যেন অন্ধকারের যাত্রী। অপরদিকে ডাল-কা--লতা-পাতা উর্ধগামী অনেকটা সূর্যের পানে তাকিয়ে বেড়ে ওঠা আলোক পথযাত্রী। শিকড় অতীত, বৃক্ষের অবস্থান বর্তমান আর বেড়ে ওঠার প্রবণতা ভবিষ্যত। এই অতীত-বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়েই তো সমকাল। সমকালে দাঁড়িয়ে অতীতের অনুসন্ধান আর ভবিষ্যতের বিনির্মাণের চেতানাকে আশ্রয় করে সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি মানসিংহের স্মৃতি বিজরিত গঙ্গাসাগর দীঘিতটে, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে গত ৬-৮ নবেম্বর অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উদযাপিত হচ্ছে তিন দিনব্যাপী বরদেশ্বরী ত্রিনয়নী নাট্যেৎসব-২০১৮। নাট্যোৎসবের স্লোগান শিকড়েরর সন্ধান মরমে শিহরণ। শিহরণ শুধুমাত্র না বরং অনুরাগী দর্শক শ্রোতাদের আকুল আবেদন- নিবেদন আর প্রহসনের যন্ত্রণার চাপে গয়া সাপুড়ে বাধ্য হয় কাল সাপকে নিয়ে খেলা চালিয়ে নিতে। ফলাফলে দংশন এবং মৃত্যুর শেষ সীমানায় পৌঁছে স্ত্রী চম্পাবতীর আত্মদান। স্বামী গয়ার দেহের বিষ স্ত্রী চম্পাবতী চুষে নিজে আত্মাহুতি দেয় কিন্তু স্বামীকে বাঁচায়। পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের মূল রচনা আশ্রয় করে সৈয়দ শামসুল হকের নাটক চম্পাবতী। নির্দেশক খোরশেদুল আলমের নির্দেশনায় শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের প্রযোজিত নাটক চম্পাবতী মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে উদ্বোধিত হয় বরদেশ্বরী ত্রিনয়নী নাট্যোৎসব। উৎসবমুখর পরিবেশ, বিনোদিত আবহ আর মাদক-সন্ত্রাস-অবিচার নির্মূল করে স্বপ্নের ঢাকার অন্বেষণে এক যুবকের নিরন্তন লাড়াই নিয়ে দ্বিতীয় মঞ্চায়ন ঢাকার অসুখ ডাক্তার চাই। নারায়ণ চন্দ্র দাস রচিত, লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস নির্দেশিত নাটকটি ছিল প্রথম দিনের দ্বিতীয় মঞ্চায়ন। মঞ্চ মায়া আর নাট্য বাস্তবতার ফিউশানে সাত ভাই চম্পা কাহিনীর আধুনিক রূপায়ণ গুণজান বিবির পালা। সায়িক সিদ্দিকীর রচনা নির্দেশনা এবং পদাতিক নাট্য সংসদ, টিএসসির প্রযোজিত নাটকটি ছিল উৎসবের দ্বিতীয় দিনের প্রথম প্রযোজনা। প্রযোজনায় নান্দনিক আর সহস্র দর্শকদের তাল-লয়-সুরে দোলা দেয় থিয়েটার আর্ট ইউনিটের প্রযোজনা, এসএম সোলায়মানের রচনা আর রোকেয়া রফিক বেবীর নির্দেশিত নাটক আমিনা সুন্দরী। এসএম সোলায়মানের প্রাণভোমরা থিয়েটার আর্ট ইউনিট বুঝিয়ে দিল অভিনয় বলিষ্ঠতায় তারা কেন ঢাকার দলগুলোর মধ্যে অদ্বিতীয়। আজ বৃহস্পতিবার উৎসব সমাপনী। সমাজে সহনশীলতা যখন বিরাজ করে তখনই পুরাণের ভিন্নতর ব্যাখ্যার প্রয়োগ ঘটে। সেভাবেই আজকের মঞ্চায়ন সাইমন জাকারিয়ার রচনা, নাজনীন হাসান চুমকীর অভিনীত-নির্দেশিত এবং সাধনা প্রযোজিত নাটক সীতার অগ্নি পরীক্ষা। যাত্রা সম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাসের সহধর্মী এবং যাত্রা সম্রাজ্ঞী জ্যোৎ¯œা বিশ্বাস নির্দেশিত অভিনীত, ব্রজেন্দ্র কুমার দে রচিত, চারুনীক নাট্যগোষ্ঠী প্রযোজিত যাত্রা পালা মহীয়সী কৈকেয়ী মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে আজকে হবে বরদেশ্বরী ত্রিনয়নী নাট্যোৎসব সমাপনী। বরদেশ্বরী ত্রিনয়নী নাট্যোৎসবের আহব্বায়ক এবং শারদীয় নাট্যোৎসবের প্রবক্তা লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার যেহেতু আমাদের অঙ্গীকার সে কারণে এবারের উৎসব স্লোগান শিকড়ের সন্ধান মরমে শিহরণ। শিকড় সন্ধানী ছয়টি প্রযোজনা নিয়েই তিন দিনের আয়োজন। শারদীয় নাট্যোৎসবের অংশ গ্রহণের ধারাবাহিকতায় শ্যামা পূজায় এবার আরও ছয়টি দলের নতুন ছয়টি প্রয়োজনা দেখছে এবং আজওযে তিন সহস্রাধিক দর্শক দেখবে সেটি আনন্দের। আমাদের বিশ্বাস, উৎসব এবং আনুষ্ঠানিকতা পরস্পরের পরিপূরক। জ্ঞান-বিনোদন এবং সম্মানজনক সম্মানী প্রদানের মধ্য দিয়ে আমাদের আয়োজন সর্বমহলে আনন্দের বাতাস বইয়ে দিয়েছে। অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের উপস্থিতি যে নাট্যোৎসবকে চিনিয়ে দিয়েছে সর্বস্তরে-সর্বজনে সেই নাট্যোৎসবের অজকের আয়োজনে সকল নাট্যানুরাগীদের প্রতি রইল আসার আন্তরিক আমন্ত্রণ এবং কাটারি ভোগের চালের খিচুড়ি খাওয়ার সবিনয় নিমন্ত্রণ।
×