ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নবমবারের মতো ডেনিম এক্সপো শুরু

বিনিয়োগ ও রফতানি বাড়াতে ব্র্যান্ডিংয়ে মনোযোগ প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৮ নভেম্বর ২০১৮

বিনিয়োগ ও রফতানি বাড়াতে ব্র্যান্ডিংয়ে মনোযোগ প্রয়োজন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের ডেনিম শিল্প বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দিলেও ইতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে দেশের এই অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছে না বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা মনে করেন, সরকার এবং খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা সমন্বিত উদ্যোগ নিলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বর্তমান রফতানি আয়কে দ্বিগুণ করা সম্ভব। বুধবাব রাজধানীর কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুই দিনব্যাপী অষ্টম বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোতে অংশ নিতে আসা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। নবমবারের মতো শুরু হওয়া ডেনিম এক্সপো চলবে আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত। এছাড়া প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এর সময়। এ প্রদর্শনীতে ডেনিম শিল্প সংশ্লিষ্ট ১৬ হাজার উদ্যোক্তাদের আমন্ত্রণ করা হয়। ডেনিম শিল্পে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয় এ এক্সপোতে। এবারের প্রর্দশনীতে এবার ১২টি দেশের ৬৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। ডেনিম শিল্পে টেকসই ও ‘ইকোলজি’ তথা পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর নবম সংস্করণের মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে ‘সিমপ্লিসিটি’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রতিপাদ্যের আলোকে প্রদর্শনীতে ক্রেতার চাহিদা কিভাবে সহজে বোঝা যায়, কিভাবে তাদের সঙ্গে দর কষাকষির জন্য প্রস্তুত করা যায় এবং সর্বোপরি কিভাবে সিমপ্লিসিটি বা সহজতা বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পের উন্নয়নের সোপান হতে পারে সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। আয়োজক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর এই ৯ম সংস্করণ দেশের পোশাক শিল্পের জন্য এক নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দেশের পোশাক শিল্পের স্বচ্ছতা তুলে ধরার মাধ্যমে ডেনিম রফতানি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করাই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য। আয়োজকরা জানান, ক্রেতা ও ভোক্তাদের কাছে পোশাক উৎপাদনের স্থান ও প্রক্রিয়া যথাযথভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে সাপ্লাই চেইনে স্বচ্ছতা আনায় গুরুত্ব দিয়ে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রদর্শনীতে ভিন্নধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত শীর্ষ পণ্য ও এক্সপোর থিমের ওপর ভিত্তি করে তাদের কার্যক্রম প্রদর্শন করবে, যা সম্পূর্ণ ডেনিম সরবরাহকারী চেইনকে প্রতিনিধিত্ব করবে। স্কয়ার ডেনিমস লিমিটেডের জিএম সৈয়দ আহমেদ চৌধুরী বলেন, চীন, ভারত ও পাকিস্তানের ডেনিম জিন্স থেকে বাংলাদেশের ডেনিম জিন্সের মার্কেট চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়া আমরা যতটা কম দামে ডেনিম জিন্স দিতে পারব তা অন্য কোন দেশ দিতে পারবে না। ফলে আমাদের সম্ভাবনা (পটেনশিয়াল) ডেনিমের ক্ষেত্রে বেশি। এভাবে প্রচার ও প্রসার হলে আমরা খুব দ্রুত এগিয়ে যাব রফতানিতে। স্পেনের জিনোলোজিয়ার প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এবং কমিউনিকেশন ম্যানেজার কারমেন সিলা বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে নেতিবাচক ধারণাও আছে। তবে কেউ যদি বাংলাদেশে একবার সফর করে। আর পোশাক খাতের সম্ভাবনা নিজ চোখে দেখে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ নিয়ে তাদের সব ধরনের নেতিবাচক ধারণা মুহূর্তেই পাল্টে যাবে। কেননা এ দেশে এখন বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান আছে, যা অনেকেই জানে না। বাংলাদেশের বস্ত্র খাতের বড় প্রতিষ্ঠান জাবের এ্যান্ড জুবায়ের গ্রুপের ব্র্যান্ড এ্যান্ড কাস্টমার কেয়ারের ব্যবস্থাপক অনল রায়হান বলেন, বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য একটি বড় প্লাটফর্ম। এরই মধ্যে এই এক্সপো একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এ প্রদর্শনীতে বিশ্বের বড় ক্রেতারা আসে নেটওয়ার্কিং করতে, একই সঙ্গে তাদের এ দেশীয় ক্রেতাদের কারখানাগুলোও পরিদর্শন করে। আমাদের কারখানাগুলোর উন্নতি দেখে তারা সত্যিকার অর্থে বিস্ময় প্রকাশ করে। ডেনিম এক্সপোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ডেনিম এক্সপোর মূল উদ্দেশ্যই হলো আন্তর্জাতিক ডেনিম সম্প্রদায়ের চাহিদা পূরণ করা। পাশাপাশি দেশের ডেনিম পণ্য সম্পর্কে বিশ্বকে জানানো, নতুন ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন এবং ডেনিমের সর্বাধুনিক উদ্ভাবন সম্পর্কে জ্ঞান আহরণের সুযোগ সৃষ্টি করা ডেনিম এক্সপোর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য সরকার অনেক কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া, বন্দরে অদক্ষতা, অপর্যাপ্ত রেল এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, গ্যাস এবং বিদ্যুত সঙ্কট সমাধানসহ একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। কাপড়ের জন্য বাইরের উৎসের ওপর নির্ভরশীল না হওয়াটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের এখনও প্রায় ৬০ শতাংশ ডেনিম কাপড় আমদানি করতে হয়। সেজন্য আমাদের গবেষণা, উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের ওপর আরও জোর দিতে হবে। তবে পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বকে দেয়ার মতো অনেক কিছু আছে বাংলাদেশের। সবার আগে আমাদের দেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।
×