ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংলাপ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৮ নভেম্বর ২০১৮

সংলাপ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার দায়দায়িত্ব সরকারের মন্তব্য করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বল এখন সরকারের কোর্টে। বুধবার গণভবনে ১৪ দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে বেইলি রোডের বাসায় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ৭ দফা দাবি নিয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করেছি। প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব মেনে নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাব। এ সময় বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭ দফা দাবি আদায়ে সংলাপের পাশাপাশি আন্দোলন চলবে। আন্দোলনে মাধ্যমেই দাবি আদায় করব। বেলা ২টায় গণভবনে সংলাপ শেষে জাতীয় ঐক্যফন্টের নেতারা ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় গিয়ে মধ্যাহ্নভোজ ও সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিকেল সোয়া ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রথমেই লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৭ দফা দাবি নিয়ে ১ নবেম্বর ও ৭ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আয়োজন করায় তাকে ধন্যবাদ জানাই। ৭ দফা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে সারাদেশে হাজার হাজার হয়রানিমূলক ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যতে আর কোন হয়রানিমূলক মামলা না করার কথা জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন আর কোন হয়রানিমূলক মামলা হবে না এবং ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের আর গ্রেফতার করা হবে না। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ ৭ দফা দাবির বিষয়ে আমরা প্রস্তাব করেছি। আলোচনা হয়েছে। ৭ দফার প্রথম দফাই ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি। ৭ দফা দাবি আদায়ে সংলাপের পাশাপাশি আন্দোলন চলবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে ঐক্যফ্রন্টের করণীয় কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসূচী ঘোষণা করা আছে। তফসিল যেদিন ঘোষণা হবে সেদিনই নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচী পালন করা হবে। এ ছাড়া ৯ নবেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশ শেষে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। ফখরুল বলেন, আমরা এখন জনগণের কাছে যাচ্ছি, তাদের নিয়েই দাবি আদায় করব। আমরা সংলাপটাকেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। সে কারণে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, এখনও ভাল ফলের প্রত্যাশা করছি। এক প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, আমরা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান চেয়েছি। এ জন্যই সংলাপকালে বলেছি আরও আলোচনা করতে চাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলোচনায় কোন সমাধান না পেলে পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য সব দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থবহ নির্বাচনের জন্যই আমরা তফসিল ও নির্বাচন পেছানোর দাবি করছি। আরও এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, সংলাপে ওনারা বলেছেন, তফসিল ঘোষণার পরও আলোচনা হতে পারে। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে আলোচনার কোন সম্পর্ক নেই। আর প্রয়োজনে আবারও তফসিল ঘোষণা করা যাবে। আমরা রাজশাহীতে যাচ্ছি। সেখানের সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচী দেয়া হবে। সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নর জবাবে ফখরুল বলেন, সংলাপ ফলপ্রসূ হলো কিনা, তা তো আলোচনা শেষে বোঝা যাবে। আলোচনা তো অব্যাহত আছে। সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আশার আলো দেখছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনগণ যদি দেখে, তাহলে আশার আলো দেখা হবে। ঐক্যফ্রন্টে ৭ দফা দাবির কয়টি সরকার মেনে নিয়েছে? এমন প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, আমরা পুরোটাই বিবেচনা করব। যখন পুরো বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, তখন আপনাদের জানাব। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে অবশ্যই আলোচনা হয়েছে। সে ব্যাপারে আমরা বলেছি, তিনি তো আইনগতভাবেই জামিনে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য। সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার দাবিতে সরকার রাজি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা বলেছেন, আলোচনা হতে পারে। আমাদের দাবিগুলো নিয়ে সরকারের কাছে গিয়েছি। সরকার বলেছে, তারা ভবিষ্যতে এগুলো নিয়ে আলোচনা করে দেখবে। আলোচনার সুযোগ আছে। সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা তফসিল ঘোষণা না করতে বলেছি। তারপরও ঘোষণা হলে পুনঃতফসিল হতে পারে। আর তফসিল ঘোষণা হলেও আলোচনা চলতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন পেছানোর প্রস্তাব দেয়নি। আমরা সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের এই প্রস্তাব সংবিধান সম্মত। তিনি বলেন, তফসিলের আগে আমরা সংবিধানের আলোকেই সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার প্রস্তাব করেছি। সংলাপের পর ড. কামাল হোসেনের বাসায় তার উপস্থিতিতে বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আ ম আব্দুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, দলের কার্যকরি সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, দলের উপদেষ্টা এসএম আকরাম ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। ১০৪৬ হয়রানিমূলক মামলার তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ॥ গণভবনে ১৪ দলের ১১ নেতার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ নেতার বৈঠক শুরুর আগেই বিএনপির পক্ষ থেকে ১ হাজার ৪৬টি রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলার তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। বুধবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে এ তালিকা দেন বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন জিয়া, পাবনা জেলা বিএনপি নেতা মোঃ সালাহ উদ্দিন প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বের হয়ে তাইফুল ইসলাম টিপু সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি মহাসচিবের স্বাক্ষর করা একটি চিঠিসহ হয়রানিমূলক গায়েবি মামলার তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ এ তালিকা গ্রহণ করেছেন। এদিকে গণভবনে সংলাপের সময়ও হয়রানিমূলক মামলার তালিকার একটি কপি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেছেন বলে জানা গেছে।
×