ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেসিডেন্ট মুন প্রতিশ্রুতি কী রাখতে পারবেন

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ৭ নভেম্বর ২০১৮

প্রেসিডেন্ট মুন প্রতিশ্রুতি কী রাখতে পারবেন

দক্ষিণ কোরিয়ার বাম ভাবাপন্ন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সরকার সম্প্রতি দেশের ন্যূনতম মজুরি প্রতি ঘণ্টা হিসাবে সাড়ে ছয় ডলারেরও বেশি বাড়িয়েছে। এই মজুরি বৃদ্ধি হচ্ছে গরিবের আয় বাড়িয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারের পরিকল্পনার অংশ। এক বছর আগে ন্যূনতম মজুরি যা ছিল তার চেয়ে এই বর্ধিত জরুরী ১৬ শতাংশ বেশি। আগামীতে আরও মজুরি বৃদ্ধির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সরকারের এমন পদক্ষেপে খুদে ব্যবসায়ী শ্রেণী বেশ ক্ষুব্ধ। তারা এটাকে স্রেফ পাগলামি ও বিপর্যয়কর হিসাবে দেখছে। ব্যবসায়ী মহলের এই সরব প্রতিবাদ সরকারের অভ্যন্তরে অস্বস্তির কারণ ঘটিয়েছে। অবাক হওয়ার ব্যাপার হলো স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও এই মজুরি বৃদ্ধির সুফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মুন তাঁর ‘আয় বৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি আনে’ এই স্ট্যাটেজিতে অটল থাকতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এই নীতি ভোটারদের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে মুন এখন বলছেন, গোড়াতে যেমন পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেভাবে মজুরি এত তাড়াতাড়ি বাড়বে না। এদিকে তার ‘আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি’ নীতির অন্যতম এক স্থপতি ও উপদেষ্টাকে পদায়নতি করা হয়েছে। আর একজন বাদ পড়ার পথে রয়েছে। সংস্কারের অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং সংস্কারের পাল্টা রাজনৈতিক প্রত্যাখ্যাত নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন তাদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। ওদিকে পরিসংখ্যান বলে যে সর্বনিম্ন আয়ের মজুরদের ২০ শতাংশের আয় গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় এ বছরের একই সময় ৩.৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আর অধিক আয়ের মজুরদের বেড়েছে ১২.৪ শতাংশ। তার মানে মূলত যাদের সাহায্য করার জন্য মুনের এই নীতি তাদের কোন কাজে আসেনি। অন্যদিকে এই নীতির কারণে প্রবৃদ্ধি যে বেড়েছে তা নয় বরং প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের আশপাশের ঘোরাফেরা করছে। প্রবৃদ্ধি যে বাড়ছে যা তার জন্য অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের মতো অনিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ এবং বন্ধকী ঋণের কঠোরতর বিধি নিয়মের ফলে বিনির্মাণ কাজে মন্থরতা। প্রেসিডেন্ট মুনের সংস্কার কার্যক্রমে যে বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তাহলো ছোট ছোট ফার্মগুলোর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতার বিকাশ। অনেক অর্থনীতিবিদদের মতে এটা মোটামুটিভাবে সঠিক। শ্রমের বাজারে একদিকে বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী ও অন্যদিকে ছোট ও মাঝারি শিল্পের মধ্যে চরম মেরুকরণের কারণে শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ বেশির ভাগ দক্ষিণ কোরীয় ছোট ছোট ফার্মে নিয়োজিত। এই ফার্মগুলো মূলত সার্ভিস খাতে কেন্দ্রীভূত। এদের উৎপাদনশীলতা বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর তুলনায় যথেষ্ট কম। ফলে মজুরির ক্ষেত্রে এই দুইয়ের মধ্যে বিশাল ব্যবধান থাকে। শিল্প লাভের ১০ শতাংশ নিচের স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলির শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি গত দুই দশকে কদাচিৎ বেড়েছে। আগামী বছরের বাজেটে সার্বিক ব্যয় ১০ শতাংশ বৃদ্ধির ব্যবস্থা রয়েছে। এর এক তৃতীয়াংশের বেশি বাড়তি অর্থ সামাজিক ব্যয়ের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে। মূল পেনশনের অর্থ বাড়বে, শিক্ষা পরিচর্যার জন্য আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ হবে এবং যেসব ছোট ছোট কাজ তরুণদের বিনিয়োগ করে থাকে তারা ভর্তুকি পাবে। এসব পদক্ষেপ সম্ভবসাধ্য। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারী ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ তা ওইসিবি তথা ধনী দেশগুলোর গড় ১১০ শতাংশের অর্ধেকেরও কম। বেশির ভাগ ওইসিডি দেশ সমাজসেবা খাতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে দক্ষিণ কোরিয়া তার চেয়েও কম ব্যয় করে। তবে প্রেসিডেন্ট মুনের নেয়া সংস্কার কর্মসূচীর কিছু কিছু হিতে বিপরীত হতে পারে। খুদে ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন ও অধিক শ্রমিক নিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। এতে হয়ত পরীর জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×