ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে যৌন কেলেঙ্কারি

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৭ নভেম্বর ২০১৮

ভারতে যৌন কেলেঙ্কারি

ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর (৬৭) গত ১৭ অক্টোবর পদত্যাগ করেছেন। প্রিয়া রামানি নামে এক সিনিয়র সাংবাদিক তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও অশোভন আচরণ আসার ১০ দিন পর তিনি পদত্যাগ করলেন। এর মধ্যে দিয়ে ভারতের ‘মীনু’ আন্দোলনের প্রথম বড় বিজয় রচিত হলো এবং সেই সঙ্গে দেশের নারী আন্দোলনেরও এক নতুন পরিবর্তন ঘটল। কমপক্ষে ১২ জন নারী সাংবাদিক আকবরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন। আকবরও এক পর্যায়ে প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। বলাবাহুল্য প্রিয়া রামানিই আকবরের বিরুদ্ধে প্রথম যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। পরে আনেন অন্যরা। অভিযোগ অস্বীকার করে আকবর বলেছিলেন যে এগুলো ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যার পেছনে বিদ্বেষপ্রসূত মনোভাব কাজ করেছে। প্রিয়া রামানি প্রকাশ্যে অভিযোগ আনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আকবরে আরও ১৯ জন সাবেক অধস্তন মহিলা সহকর্মী ও একই অভিযোগ এনে বলেন পত্রিকা অফিসের দিনগুলোতে আকবর স্বভাবগতভাবেই তাঁর অধস্তন নারী সাংবাদিকদের শরীর অপাঙ্গদৃষ্টিতে লেহন করতেন, অশোভনভারে তাদের স্পর্শ করতেন এবং মিটিংয়ের আয়োজন করতেন হোটেল রুমে যেখানে তিনি পুরোদস্তুর পোশাক ধারণ করে থাকতেন না। এম জে, আকবর নিজের সুনাম অক্ষুণœ রাখার স্বার্থেই সহসা পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। যৌন হয়রানি বা হেনস্তা কিংবা অশালীন আচরণের এমন অভিযোগের ফাঁদে যেসব রুই কাতলা ধরা পড়েছেন আকবর নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে বড়। তবে তিনিই একমাত্র বড় নন। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই মিডিয়া, শিল্পকলা, শিক্ষাঙ্গন ও ব্যবসায় জগতের বেশকিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। নারী সহকর্মীরা এভাবে তাদের উর্ধতন পুরুষ সহকর্মীদের হাতে যৌন নিগৃহীত হয়েছেন এমনকি ধর্ষিতাও হয়েছেন। যারা চুপ থেকেছেন তাদের কিছু হয়নি। কিন্তু যারা আপত্তি বা প্রতিবাদ করেছেন তাদের কেউ চাকরি হারিয়েছেন কেউ সাসপেন্ড হয়েছেন। কেউ সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস করে দিয়েছেন, আবার অনেকে একেবারেই চুপ করে গেছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের কেউ কেউ ‘মীটু’ আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করার পাশাপাশি পাল্টা লড়াই করেছেন। যেমন বরুণ গ্রোভারের কথাই ধরা যাক। ইনি একজন জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেতা। এক অজ্ঞাতনামা নারী অভিযোগ আনে যে কলেজ জীবনে তিনি তার এক সহপাঠিনীর শ্লীলতাহানি করেছিলেন। বরুন এমন অভিযোগ সবিস্তারে খ-ন করেন। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে যিনি অভিযোগ এনেছেন তিনি অজ্ঞাতনামা থাকতে চাইলে থাকুন কোন আপত্তি নেই। তবে তিনি যেন তার অভিযোগ অনুপুঙ্খভাবে উপস্থাপন করেন। কারণ ‘মীটু’ আন্দোলনের অর্থেই নিগৃহীত নারীদের অভিযোগের যথার্থতা প্রতিপাদন হওয়া দরকার। উপর মহলে যৌন হয়রানির বিভিন্ন ঘটনা এভাবে হঠাৎ করে ফাঁস হওয়ায় দেশজুড়ে তীব্র বিতর্কের সঞ্চার হয়েছে। যারা প্রকাশ্যে অভিযোগ এনেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের অপমান-অপদস্থ করে নানা ধরনের বক্তব্যের স্রোত বইছে। এমন অভিযোগও উঠেছে যে এরা নিজেদের পাবলিসিটি পাওয়ার জন্য এ কাজ করেছেন। কেউ কেউ তাদের শিথিল নৈতিকতাসম্পন্ন বলেও মন্তব্য করেছেন। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো পুরুষদের অশোভন আচরণের যেসব ঘটনা এ পর্যন্ত ফাঁস হয়েছে সেগুলি ভারতীয় সমাজের সর্বোচ্চ স্তরেই সীমাবদ্ধ। অথচ রূঢ় বাস্তবতা হলো এই সমাজের নিচু জাতের মহিলারাই সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার। আবার অন্যদিকে ভারতের ‘মীটু’ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়েছে দক্ষিণপন্থী, রাজনৈতিক মহল। আরএসএসের মুখপাত্র ‘অর্গানাইজার’ সাময়িকীতে বলা হয়, যৌন হয়রানির গোটা বিতর্কটা নির্দিষ্ট কিছু শিল্পে সীমাবদ্ধ যেখানে গ্ল্যামার ও অর্থ আছে। মডেলিং ও অভিনয়ের মতো পেশাই এখন কেলেঙ্কারিতে নিমজ্জিত এর কারণ হচ্ছে এ দেশের উদারপন্থী এলিটরা সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×