ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তাহিরা খাতুন সান্ত¡না

ডায়ানার বিস্ময়ে ওয়াংয়ের দুঃখ

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ৭ নভেম্বর ২০১৮

ডায়ানার বিস্ময়ে ওয়াংয়ের দুঃখ

লি না অবসর নেয়ার পর দীর্ঘদিন আর চীনের বড় কোন টেনিস তারকা আসেনি। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে অবশ্য মেয়েরা টেনিসে বেশ পিছিয়ে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে লি অবসরে গিয়েছিলেন দেশের সর্বকালের সেরা মহিলা টেনিস তারকা হিসেবে। সেজন্য চীনের মেয়েদের মধ্যে টেনিস প্রসারে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন তিনি। এরপর বেশ নামডাক শোনা যাচ্ছিল ঝ্যাং শুয়াইয়ের। যদিও তিনি লি পর্যায়ের কাছাকাছিও হতে পারেননি। তবে চলতি বছর জোরেশোরে আলোচনায় এসেছেন ২৬ বছর বয়সী ওয়াং কিয়াং। তিয়ানজিন প্রদেশের এ টেনিস তারকা ক্যারিয়ারে মাত্র দুটি ডব্লিউটিএ জিতেছেন, সেটা এ বছরই। এ কারণে শুয়াইকে টপকে চীনের এক নম্বর খেলোয়াড় এখন তিনি। তবে বছরের শেষভাগে এসে তার সঙ্গী হয়েছে দুঃখ। আরেকটি ডব্লিউটিএ জেতার সুযোগ ছিল হংকংয়ের প্রুডেনশিয়াল ওপেন টেনিসে। কিন্তু বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে টেনিস বিশ্বে নিজের জোরালো পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন ইউক্রেনের ১৮ বছর বয়সী তন্বী-তরুণী ডায়ানা ইয়াস্ট্রেমস্কা। ক্যারিয়ারের প্রথম ডব্লিউটিএ জিতেছেন কোন আলোচনাতে না থেকেও। লি না এশিয়ার প্রথম মহিলা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে কোন গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে উঠেছিলেন ২০১১ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। তবে শিরোপা জিততে পারেননি। সে বছরই ফ্রেঞ্চ ওপেনে প্রথম এশিয়ান হিসেবে এবং অবশ্যই চীনের প্রথম নারী হিসেবে গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের বিরল কীর্তি গড়েন। এরপর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলেন তিনি। সে কারণে ২০১৪ সালে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। এর আগের বছরও এই আসরের ফাইনাল খেলেছিলেন তিনি। উইম্বলডনে তিনবার খেলেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনাল। ২০১৩ সালের ইউএস ওপেনে সেমিফাইনালও খেলেন। এ কারণে ২০১৪ সালে প্রথম চাইনিজ মহিলা হিসেবে ডব্লিউটিএ র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে উঠেছিলেন। কিন্তু সে বছরই অবসরে যাওয়ার পর চীন থেকে আর কোন বড় তারকা দেখা যায়নি। শুয়াই মাঝে মাঝে কিছুটা ভাল করলেও সেটি আহামরি কিছু ছিলনা। কিন্তু এ বছর জুলাই থেকে ওয়াংয়ের নাম উচ্চারিত হতে থাকে। তার উত্থান ঘটে জিয়াংশি ওপেন জিতে। স্বদেশী ঝেং সাইসাইকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ডব্লিউটিএ জয় ছিল সেটি তার। অবশ্য, ওয়াং প্রথমবার তার যোগ্যতার ঝলক দেখিয়েছিলেন ২০১৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে হারিয়ে। তখন ডেনিশ এই সুন্দরী র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০ নম্বরে ছিলেন। তবে এরপর ওয়াংকে সবাই ভুলে গিয়েছিলেন। কারণ, তাকে আর সেভাবে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। কিন্তু ওয়াংয়ের উত্থান ঘটেছে চলতি বছর। জুলাইয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ডব্লিউটিএ শিরোপা জেতার মাধ্যমে তার এই নতুন শুরুর সূত্রপাত। এরপর ফ্রেঞ্চ ওপেনে সবার নজর কাড়েন ভেনাস উইলিয়ামসকে সরাসরি সেটে বিধ্বস্ত করে। এরপর বেজিং ও উহান ওপেনে ক্যারোলিনা পিসকোভাকে হারিয়ে নিজের সামর্থ্য ও যোগ্যতার প্রমাণ দেন তিনি। গত মাসে আবার চীনের শীর্ষ খেলোয়াড় শুয়াইকে হারিয়ে গুয়াংঝু ওপেন জিতে নিজেই হয়ে যান দেশের এক নম্বর। ক্যারিয়ারের এ দুটি ডব্লিউটিএ তাকে পৌঁছে দেয় ক্যারিয়ারসেরা র‌্যাঙ্কিং ২৪ নম্বরে। সর্বশেষ হংকং ওপেনে একেবারেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন। ফর্মের তুঙ্গে থাকা ইউক্রেনের এলিনা সিতোলিনা ও স্পেনের গারবিন মুগুরুজাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠেন। শিরোপা জিততে পারলে আরও ভাল র‌্যাঙ্কিংয়ে পৌঁছে যেতেন। হংকংয়ের ভিক্টোরিয়া পার্ক টেনিস স্টেডিয়ামের প্রবেশদ্বারসহ আশপাশের এলাকা সেজেছিল ওয়াংয়ের জন্যই। সবখানে তার ছবি সংবলিত পোস্টারই শোভা পাচ্ছিল। হংকং যেন তার ঘরের পরিবেশ, দর্শকরাও ছিলেন তার জন্য উৎসব করতে প্রস্তুত। কিন্তু সবাইকে হতচকিত করে দিয়ে ফাইনালে জিতে গেলেন ইউক্রেনের অখ্যাত ডায়ানা ইয়াস্ট্রেমস্কা। ১৮ বছর বয়সী এ তরুণী ক্যারিয়ারে প্রথমবার ডব্লিউটিএ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সরাসরি ৬-২, ৬-১ সেটে চীনের এক নম্বর ওয়াংকে। অথচ ডায়ানা ফাইনালে উঠেও আলোচনার বাইরে, কারণ হংকং ওপেনের আগে তাকে চেনার মতো কিছুই কখনও করতে পারেননি। সে কারণে এমনকি গুগলেও এই টুর্নামেন্টে তার খেলার কোন ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু ১৮ বছর বয়সী এ সুন্দরী সে কারণেই ছিলেন চাপমুক্ত। প্রত্যাশার চাপে শুরু থেকেই মুষড়ে পড়েছেন ওয়াং। পুরো টুর্নামেন্টে দুরন্ত এ চাইনিজ তরুণী কোন প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেননি ডায়ানার বিপক্ষে। মাত্র ৬৫ মিনিট সময় নিয়েছেন এ ইউক্রেনের তরুণী। ফলাফলটা দেখে বোঝার উপায় নেই হংকংয়ে গত এক সপ্তাহে কি অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন চাইনিজ এ তারকা। সেই ওয়াং কিনা ফাইনালে এসেই একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে গেলেন। ডায়ানা ডব্লিউটিএ র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০২ নম্বর এবং তার ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করলে সবচেয়ে ভাল যে ব্যাপারটি পাওয়া যায়, তা হচ্ছে ২০১৬ সালের জুনিয়ার উইম্বলডন প্রতিযোগিতায় ফাইনাল খেলা। কিন্তু ফাইনালে নামার আগের দিনই নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসটা অনুভব করছিলেন ডায়ানা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগের দিনই আমার মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস কাজ করছিল যে আমি হয়ত শিরোপা জিতব। তবে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। আমি খেতে পারিনি, পেটে অদ্ভুত এক ব্যথা অনুভূত হচ্ছিল যা আগে কখনও হয়নি। আগেও ফাইনাল খেলেছি, তবে এই প্রথম এমন অনুভূতি হয়েছে। তবে খেলার সময় আমার কোন চাপ ছিল না। জেতার পরেও চাপ নেই, আমার আকাক্সক্ষা শুধু ভাল খেলে যাওয়া এবং আরও শিরোপা জেতা।’ ওয়াং অবশ্য আগের দিনই কঠিন হ্যামস্ট্রিংয়ের যন্ত্রণায় পড়েছিলেন। কারণ, কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটি সেমির দিন সকালে খেলতে হয়েছে। সেই সন্ধ্যায় আবার সেমিফাইনাল খেলেছেন। বড় এ দুটি ম্যাচেই তার প্রতিপক্ষ ছিলেন অনেক বড় তারকা। ফাইনালে হয়ত সেটারই প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু জুলাই থেকে শুরু করে দুটি ডব্লিউটিএ জয়, তিনটিতে সেমিফাইনাল খেলা এবং হংকংয়ে ফাইনালে ওঠার কারণে ওয়াংকে ইতোমধ্যেই বড় তারকাদের কাতারে বিবেচনা করা হয়েছে। তিনিই হেরে গেলেন। ওয়াং বলেন, ‘আমার মনে হয় গত দুই ম্যাচের পর থেকেই আমি বেশ ক্লান্ত। আজ সে দারুণ খেলেছে। আমার জন্য সেটা কঠিন হয়েছে। অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ছিল সে এবং তেমন কোন ভুলই করেনি।’ শেষ মুহূর্তের এই একটি বাজে নৈপুণ্য তাকে বেশিদূর উঠতে দেয়নি। অথচ, ফাইনালের আগে ওয়াং জানিয়েছিলেন তিনি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা বিশে জায়গা করে নিতে চান। শেষ পর্যন্ত এখন ২৩ নম্বরে ঠাঁই পেয়েছেন। আর ডায়ানা অবিশ্বাস্য এই জয়ে সবাইকে হতচকিত করার পাশাপাশি এখন নিজেই বিস্মিত হয়েছেন। ১০২ নম্বর থেকে একলাফে এ সুন্দরী উঠে এসেছেন ৬৬ নম্বরে।
×