ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কোহিনূর আক্তার

সুসময়ে ‘সিআর সেভেন’

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ৭ নভেম্বর ২০১৮

সুসময়ে ‘সিআর সেভেন’

সময় বদলায়, বয়স বাড়ে। পরিবর্তন হয় জার্সির রং। কিন্তু রোনাল্ডো যেন অপরিবর্তনশীল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, স্প্যানিশ লা লিগার মতো ইতালিয়ান সিরিএ লীগেও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো দুর্দান্ত। তবে শুরুটা খুব ভাল হয়নি তার। বলতে পারেন জুভেন্টাসে শুরুতে খুব বাজে সময় পার করছিলেন সিআর সেভেন। প্রথমত, নতুন ক্লাবে গোলের দেখা পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যেই আবার ধর্ষণের পুরনো অভিযোগ নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। চারদিক থেকেই ধেয়ে আসতে শুরু করে সমালোচনার তীর। কেউ কেউ তো শেষই দেখে ফেলেছিলেন পর্তুগীজ সুপারস্টারের ক্যারিয়ার। কিন্তু রোনাল্ডো যেন খুব সহজেই ফুরিয়ে যাওয়ার পাত্র নন। শেষ পর্যন্ত সেটাই প্রমাণিত। একটু সময় নিয়েই স্বরূপে ফিরেছেন সিআর সেভেন। শুরুর ধাক্কা সামলিয়ে ফর্মে ফিরেছেন রোনাল্ডো। এখন নিয়মিত গোলও পাচ্ছেন তিনি। ইতালিয়ান সিরিএ লীগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন রোনাল্ডো। সিরিএ লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের হয়ে ৯৯০ মিনিট খেলে প্রতিপক্ষের জালে ৭ বার বল জড়িয়েছেন তিনি। এই সময়ে সতীর্থদের দিয়ে আরও পাঁচ গোল করাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন রোনাল্ডো। সাত গোল করে রোনাল্ডোর সঙ্গে রয়েছেন নেপোলির ড্রায়েস মার্টেন্স এবং লোরেঞ্জো ইনসাইনও। তবে ৯ গোল করে ইতালিয়ান সিরিএ লীগে গোলদাতার তালিকায় এ মৌসুমে শীর্ষে অবস্থান করছেন ক্রিজসটোফ পিয়াটেক। ৯৩৪ মিনিট খেলে প্রতিপক্ষের জালে ৯ গোল করেন তিনি। ছয়টি করে গোল করেছেন মাউরো ইকার্দি এবং সিরো ইম্মোবিল। পাঁচটি করে গোল করেছেন রোনাল্ডোরই সাবেক সতীর্থ গঞ্জালো হিগুয়েইন, গ্রেগরি ডিফ্রেল, ফ্রান্সেস্কো কাপুতো এবং রদ্রিগো ডি পাউলের মতো তারকারা। ২০০৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদ পাড়ি জমান রোনাল্ডো। এরপর গত ৯ বছরে স্পেনের ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটিকে দু’হাত ভরে দিয়েছেন পর্তুগীজ এই ফুটবলার। খেলেছেন সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে। গড়ে উঠেছিল অন্য রকম এক বন্ধন; যা বন্ধুর চেয়েও বেশি। তবে সব বন্ধন ছিঁড়ে ১০ জুলাই রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে রোনাল্ডো নাম লেখান ইতালির শীর্ষ ক্লাব জুভেন্টাসে। রোনাল্ডোর ক্লাব ছাড়ার কারণ হিসেবে ওই সময় রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সিআর সেভেন নিজেই থাকতে চাননি ক্লাবে। এ ছাড়া সমর্থকদের কেউ কেউ বলছিলেন, টাকার জন্যই হয়ত ক্লাব ছেড়ে গেছেন রোনাল্ডো। তবে সম্প্রতি ফ্রান্স ফুটবলকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে রোনাল্ডো জানালেন ভিন্ন কথা। টাকা কিংবা অন্য কোন কারণ নয়, ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের কারণেই রিয়াল ছেড়েছেন ৩৩ বছরের এই ফুটবলার। এ নিয়ে রোনাল্ডোর ভাষ্য, ‘ক্লাবের পক্ষ থেকেই অবহেলাটা বুঝতে পারছিলাম। বিশেষ করে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের কাছ থেকে। আমি বুঝতে পারছিলাম, তারা আর আমাকে চাচ্ছে না এখানে। প্রথম চার বছরে আমার কাছে আসলেই মনে হয়েছিল যে হ্যাঁ আমিই, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। এরপর থেকে ধীরে ধীরে অনুভূতিটা কমেছে আমার। প্রেসিডেন্টের কাছ থেকেও আর আগের মতো আচরণ পাইনি। ভাবটা এমন ছিল যে আমাকে না হলেও হবে তাদের। আমি কী বোঝাতে চাচ্ছি, আশা করি বুঝতে পারছেন! এটাই আমাকে ক্লাব ছাড়ার ব্যাপারে ভাবিয়ে তুলেছিল।’ ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা কথাগুলোও পুরোপুরি মিথ্যা বলে মন্তব্য রোনাল্ডোর, ‘আমি খবরে দেখতাম, তারা বলে বেড়াচ্ছে আমি নাকি ক্লাব ছাড়তে চাই। আমার সব সময় মনে হতো প্রেসিডেন্ট আমাকে ধরে রাখবেন না। আমি টাকার জন্য ক্লাব ছাড়িনি। টাকা কামাতে চাইলে তো চীনেই যেতে পারতাম। তাহলে এখনের চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বেশি টাকা পেতাম। জুভেন্টাসেও আমি রিয়ালের মতোই টাকা পাচ্ছি। ব্যাপারটা কখনই বেতনসংক্রান্ত ছিল না। পার্থক্যটা হচ্ছে, জুভেন্টাস আমাকে আসলেই চেয়েছে। আমাকে তারা সেটা দেখাতেও পেরেছে যে তারা আমাকে চায়।’ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে খুব বাজে একটা সময়েই রিয়াল মাদ্রিদের কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন জিনেদিন জিদান। কোচ হিসেবে জিদানের অনভিজ্ঞতা নিয়ে সে সময় কম সমালোচনা হয়নি। তবে সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে তিনি রিয়ালকে এনে দেন টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা। লস ব্ল্যাঙ্কোসদের হয়ে সফল এই অধ্যায়ে জিদানের প্রধান অস্ত্র ছিলেন সিআর সেভেন। অবশ্য তৃতীয় বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জেতার পর পরই রিয়ালের দায়িত্ব ছেড়ে দেন জিদান। ফরাসী এই কোচের বিদায়ের পর পরই ক্লাব ছাড়েন রোনাল্ডোও। জিদান চলে যাওয়াতেই কি ক্লাব ছেড়ে দেন পর্তুগীজ সুপারস্টার? রিয়াল ছাড়ার পর ওই সময় এমনটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বিস্তর। তবে ফ্রান্স ফুটবলকে দেয়া সাক্ষাতকারে এই কথা উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। জুভেন্টাসের তারকা ফুটবলার বলেন, ‘জিদানের ক্লাব ছাড়ার সঙ্গে আমার সিদ্ধান্তের কোন সম্পর্ক নেই।’ বেশ কিছুদিন ধরে মাঠের বাইরের ঘটনা নিয়েও শিরোনামে রোনাল্ডো। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন রোনাল্ডো। সিআর সেভেনের মতে, ‘এই ব্যাপারটা আমার পারিবারিক জীবনে প্রভাব ফেলেছে। আমার একজন সঙ্গী আছে, চারটি বাচ্চাও আছে, বয়স্ক মা আছেন, ভাই-বোন মিলিয়ে বড় পরিবার আমার। তা ছাড়া আমার একটা সুনাম আছে সমাজে এবং সেটা অনুকরণীয়। এমন অবস্থায় চিন্তা করুন একজন আপনার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনল। আপনার কিছু থাকুক বা না থাকুক, আমি জানি কী করেছি। সত্যিটা একদিন তো বের হবেই। যারা আমার জীবনকে সার্কাস মনে করে এটাকে উপভোগ করতে চায় তারাও জানবে। আমি আমার সঙ্গীর কাছে ব্যাপারটা খুলে বলেছি। আমার ছেলেকেও বলেছি, তার যদিও এখনও বোঝার মতো বয়স হয়নি। আমার মা আর বোনদের জন্যও এটা অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। তারা সকলেই হতভম্ব হয়েছে এবং খুবই রেগেছে। জীবনে আমি প্রথমবার তাদের এমন অবস্থায় দেখেছি।’ প্রায় এক দশক আগে ৯০ মিলিয়ন ইউরোতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটডে ছেড়ে স্পেনে পাড়ি জমানো রোনাল্ডো ৯ বছর কাটিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে। এই ৯ বছরে স্প্যানিশ জায়ান্টদের দু’হাত ভরে দিয়েছেন। এই সময়ে রিয়াল মাদ্রিদকে জিতিয়েছেন ১৫টি শিরোপা। যার মধ্যে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ আর দুটি লা লিগা। সব মিলিয়ে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন পাঁচবার। এবারের ব্যালন ডি’অরও জিততে চান জুভেন্টাসের এই পর্তুগীজ যুবরাজ। রোনাল্ডোর মতে তিনিই যোগ্য এই শিরোপার। একই সঙ্গে ষষ্ঠবারের মতো ব্যালন ডি’অর জিতে ছাড়িয়ে যেতে চান লিওনেল মেসিকেও।
×