ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব-তামিম ছাড়া টেস্টে ছন্নছাড়া বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৭ নভেম্বর ২০১৮

সাকিব-তামিম ছাড়া টেস্টে ছন্নছাড়া বাংলাদেশ!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ভয়টা আগেই ছিল। এবার সফরকারী জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে পুরো সিরিজে খেলতে পারবেন না দেশসেরা দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। সে কারণে বর্তমানে খর্বশক্তির নিচু দলে পরিণত হলেও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে শঙ্কা ছিল বাজে কোন পরিস্থিতিতে পড়ার। তবে গত ৪/৫ বছর ধরে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের অন্যতম শক্তিধর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কারণেই হয়তো ওয়ানডে সিরিজে সাকিব-তামিমের অভাব বোঝা যায়নি বিন্দুমাত্র। কিন্তু টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেই তাদের অভাবটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গেল বাংলাদেশ দল। গত ১৭ বছরে বাংলাদেশের মাটিতে জয়ের মুখ না দেখা জিম্বাবুইয়ে প্রথম টেস্টে প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করে হারিয়ে দিয়েছে। তামিম-সাকিব না থাকায় দলের ব্যাটিং শক্তি হয়েছে অনেকখানিই খর্ব। সেটা দুই ইনিংসে নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে। আর সাকিব না থাকায় দলের বোলিং শক্তিটাও কমে গেছে। একাই প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে লড়তে হয়েছে তাইজুল ইসলামকে। অর্থাৎ টেস্ট ক্রিকেটে এখনও সাকিব-তামিমের বিকল্প নেই। একই সঙ্গে দু’জনকে ছাড়া পুরোপুরি ছন্নছাড়া একটি দল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে ২০০৫ সালে নিজেদের প্রথম টেস্ট জয় এসেছিল জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। সেই ম্যাচের সময় সাকিব কিংবা তামিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারই শুরু হয়নি। তবে এরপর দেশের মাটিতে যতগুলো ম্যাচই খেলেছে বাংলাদেশ দল এ দু’জন ছিলেন স্কোয়াডে। একই সঙ্গে দু’জনের অনুপস্থিতি থাকেনি। এছাড়া বাংলাদেশ দলের বাকি ৯ জয়ের পেছনেই অন্যতম ভূমিকা ছিল সাকিব-তামিমের। এ ৯টি টেস্ট ম্যাচ জয়ে তামিমের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৪.৭২ গড়ে ৪টি করে সেঞ্চুরি এবং হাফসেঞ্চুরিসহ ৯৮৫ রান। দ্বিতীয় সর্বাধিক ৮২১ রান করেছেন সাকিব ৪৮.২৯ গড়ে ২টি সেঞ্চুরি ও ৫টি অর্ধশতকসহ। এছাড়া এই ম্যাচগুলোয় বোলিংয়েও ভয়ানক সাকিব সর্বাধিক ৫৬ উইকেট শিকার করেন যার মধ্যে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ৬ বার এবং ২ বার ম্যাচে ১০ উইকেট। তাছাড়া ঘরের মাটিতে যে কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই টেস্ট ম্যাচগুলোর ব্যাটিং-বোলিং পারফর্মেন্সে সাকিব-তামিম সবাইকে ছাড়িয়ে। দেশের মাটিতে দু’জনই ৩৪টি করে টেস্ট খেলেছেন। তামিম ৬৫ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৮.৬৮ গড়ে ৫টি সেঞ্চুরি ও ১৫টি হাফসেঞ্চুরিসহ সর্বাধিক ২৪৭৬ রান করেছেন। আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সাকিব ৬২ ইনিংসে ২৩০৭ রান করেছেন ৪০.৪৭ গড়ে ২টি সেঞ্চুরি ও ১৫টি হাফসেঞ্চুরিসহ। আবার বল হাতেও সাকিব নিয়েছেন সর্বাধিক ১২৮ উইকেট যার মধ্যে ১৩ বারই ইনিংসে ৫ উইকেট বা তারচেয়ে বেশি শিকার করেছেন তিনি। এসব পরিসংখ্যানই বলে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সাকিব-তামিমের টেস্ট দলে থাকাটা কত জরুরী ছিল। যদিও টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ প্রত্যয় জানিয়েছিলেন দু’জনের অনুপস্থিতিতে সুযোগ পাওয়া তরুণদের যে সুযোগ রয়েছে সেটাকে কাজে লাগিয়ে দারুণ কিছু করার। বাস্তবে সেটা হয়নি। কারণ শুধু জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেও এ দু’জন সেরা পারফর্মার। এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ৫ টেস্টে ১ সেঞ্চুরি, ১ ফিফটিতে তামিমের রান ৪২.২০ গড়ে ৪২২, সাকিবের সেখানে ৬ টেস্টে ৪৭৪ রানের পাশে ছিল ২৬ উইকেট। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে এ দুই সেরা পারফর্মারকে ছাড়া খেলতে নামার পরও জিম্বাবুইয়েকে উড়িয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাস তুঙ্গস্পর্শী ছিল বাংলাদেশ দলের। সেই আত্মবিশ্বাস বালির বাঁধের মতো ভেসে গেছে। প্রথম ইনিংস মাত্র ১৪৩ রানেই গুটিয়ে যাওয়া দলটি দ্বিতীয় ইনিংসেও বেহাল দুর্দশায় পতিত হয়েছে। ১৬৯ রানেই গুটিয়ে গেছে দ্বিতীয় ইনিংস। এ নিয়ে টানা ৪ টেস্টের ৮ ইনিংসে বাংলাদেশ দলের ইনিংস ২০০ ছুঁতে পারেনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত মার্চে দ্বিতীয় টেস্টে ১১০ ও ১২৩, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রথম টেস্টে ৪৩ ও ১৪৪ এবং দ্বিতীয় টেস্টে ১৪৯ ও ১৬৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। এরপরও সাকিব থাকাতে বোলিং কিছুটা হলেও এ ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশ দলকে লড়াই করার মনোভাবে রাখতে পেরেছিলেন। এবার তাদের অভাবে বিনা যুদ্ধেই জিম্বাবুইয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। গত ১৭ বছরে এই প্রথম বিদেশের মাটিতে তাই জয়ের মুখ দেখেছে তারা। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এর আগে মাত্র একবারই দুই ইনিংসে এত বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনী ছিল বাংলাদেশ দলের। তবে দেশের মাটিতে নয়, ২০১৩ সালের এপ্রিলে হারারে টেস্টে দুই ইনিংসে বাংলাদেশের রান ছিল ১৩৪ ও ১৪৭। কিন্তু ঘরের মাটিতে এমন দুর্দশার চিত্র এই প্রথম। সে কারণে সাকিব-তামিমের অভাবটাই যে বড় কারণ তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাদের পরিবর্তে দলে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটাররা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। সিলেটে অনুষ্ঠিত এই টেস্টটিই প্রমাণ দিচ্ছে সাকিব-তামিমের মতো দেশসেরা দুই পারফর্মার না থাকলে এই ফরমেটে একেবারে ছন্নছাড়া একটি দল বাংলাদেশ।
×