ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নবরূপে সজ্জিত ‘গ্যালিলিও’ নাটকের তৃতীয় মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৭ নভেম্বর ২০১৮

নবরূপে সজ্জিত ‘গ্যালিলিও’ নাটকের তৃতীয় মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আরেকবার দর্শককে মুগ্ধ করে মঞ্চস্থ হলো ‘গ্যালিলিও’। নাট্যরসিকরা উপভোগ করলেন দুই কিংবদন্তি অভিনেতা আলী যাকের আর আসাদুজ্জামান নূরের অনবদ্য অভিনয়। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের দর্শকনন্দিত প্রযোজনা গ্যালিলিও দেখতে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল ছিল দর্শকে পরিপূর্ণ। নবরূপে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। বছর ত্রিশেক আগে ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হয়েছিল গ্যালিলিও। আতাউর রহমানের নির্দেশনায় অল্প সময়েই ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়ে যায় নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নাটকটি। ১৯৯৮ সালে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় নাটকটির প্রদর্শনী। প্রযোজনাটির মূল অভিনেতা আলী যাকেরের অসুস্থতা আর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ব্যস্ততার সঙ্গে খালেদ খানের মৃত্যুতে নাটকটি আবদ্ধ হয়ে যায় স্মৃতির পাতায়। নবরূপে সজ্জিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন পান্থ শাহরিয়ার। নবরূপায়নে আড়াই ঘণ্টা ব্যাপ্তির নাটকটির সময়সীমা নামিয়ে আনা হয়েছে দেড় ঘণ্টায়। বার্টল্ট ব্রেখটের ‘দ্য লাইফ অব গ্যালিলিও গ্যালিলি’ অবলম্বনে গ্যালিলিও নাটকটির অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম। নতুনভাবে মঞ্চে আসা প্রযোজনাটির তৃতীয় প্রদর্শনী হলো মঙ্গলবার। নাটকের কাহিনীর সময়কাল ১৬০৯ সাল। ইতালির বিখ্যাত পদার্থ ও অঙ্কশাস্ত্রবিদ গ্যালিলিও গ্যালিলি ঘোষণা দিলেন সূর্য স্থির আর পৃথিবী ঘূর্ণায়মান। আরও বললেন সৌরজগতে স্ফটিক স্তর বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। এর আগে মানুষ জানতো, পৃথিবী স্থির এবং সূর্য চারপাশে ঘুরে আলোকিত করছে পৃথিবীকে। মানুষের দীর্ঘকালের বিশ্বাসে আঘাত হানে গ্যালিলিওয়ের এ মতবাদ। ক্ষেপে ওঠেন চার্চের অধিকর্তা। বছর দশেক আগে এমন কথা বলায় পুড়িয়েও মেরে ফেলা হয়েছিল একজনকে। যুক্তিকে আশ্রয় করে গ্যালিলিও ছুটে যান মানুষের কাছে। প্লেগের মতো মহামারিও তাকে আটকে রাখতে পারেনি। চার্চের ক্ষমতা আর রাষ্ট্রযন্ত্রের সামনেও মাথানত করেনি। তবে শারীরিক যন্ত্রণার কাছে নতি স্বীকার করে ১৬৩৩ সালের ২২ জুন সে স্বীকার করে তার মতবাদ ভুল। সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় ইতালির সমস্ত গবেষণা, নতুন চিন্তা আর আবিষ্কারের পথ। তার অনুসারীকে গ্যালিলিওকে কলঙ্কের নাম বলে ঘোষণা দেন। গ্যালিলিও চলে যান ধর্ম আদালতের কড়া নজরদারিতে। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন আর্চ বিশপের মতামত দেয়া আর হোরেসের মধ্যে। কিন্তু নিজের মধ্যে গর্ববোধ আগলে রেখেছিলেন সযতেœ। মৃত্যুর আগে লিখে রেখেছিলেন তার মতবাদ। পরবর্তী প্রজন্মকে জানিয়ে গিয়েছিলেন বিজ্ঞান সাধারণের জন্য, সবার জন্য। গ্যালিলিও নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন আলী যাকের। অধ্যক্ষ, বারবেরিনি ও পোপ চরিত্রে অভিনয় করছেন আসাদুজ্জামান নূর। খালেদ খানের আন্দ্রিয়া সার্তি চরিত্রে রূপ দিয়েছেন পান্থ শাহরিয়ার। সিনোরা সার্তি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারহানা মিঠু, লুদোভিকা মার্সিলি চরিত্রে মোস্তাফিজ শাহীন, সাগরেদো ও বেলারমিন চরিত্রে কাওসার চৌধুরী, ফেদারজোনি চরিত্রে ফারুক আহমেদ, ধর্মযাজক চরিত্রে ফখরুজ্জামান চৌধুরীহ নাগরিকের নতুন ও পুরোনো অভিনেতারা অভিনয় করেছেন প্রযোজনাটিতে । তিন দিনব্যাপী বরদেশ্বরী ত্রিনয়নী নাট্যোৎসব ॥ ‘শিকড়ের অন্বেষণ মরমে শিহরণ’ স্লোগানে শুরু হলো বরদেশ্বরী ত্রিনয়নী নাট্যোৎব। মোঘল স¤্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি রাজা মানসিংহের স্মৃতিবিজড়িত রাজারবাগের ঐতিহাসিক বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার থেকে তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের সূচনা হয়। সন্ধ্যায় মন্দিরের গঙ্গাসাগর দীঘির চার úাশে সহ¯্রাধিক প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব। প্রথম দিনে মঞ্চস্থ হয় দুইটি নাটক। বরদেশ্বরী ত্রিনয়নী নাট্যোৎসবের আহ্বায়ক লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার যেহেতু আমাদের অঙ্গীকার সে কারণে এবারের উৎসব স্লোগান ‘শিকড়ের অন্বেষণ মরমে শিহরণ’। শিকড়সন্ধানী ছয়টি প্রযোজনা নিয়ে সাজানো হয়েছে তিন দিনের আয়োজন। শারদীয় নাট্যোৎসবের ধারাবাহিকতায় শ্যামাপূজায় এবার আরও ছয়টি দলের নতুন ছয়টি প্রয়োজনা উপভোগ করবে তিন সহ¯্রাধিক দর্শক। আমাদের বিশ্বাস, উৎসব এবং আনুষ্ঠানিকতা পরস্পরের পরিপূরক। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের মূল রচনা আশ্রয়ে সৈয়দ শামসুল হক রচিত চম্পাবতী নাটকের মাধ্যমে উদ্বোধিত হয় ত্রিনয়নী নাট্যোৎসব। শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র প্রযোজিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন খোরশেদুল আলম। শিহরণ শুধুমাত্র না বরং অনুরাগী দর্শক শ্রোতাদের আকুল আবেদন-নিবেদন আর প্রহসনের যন্ত্রণার চাপে গয়া সাপুড়ে বাধ্য হয় কাল সাপকে নিয়ে খেলা চালিয়ে নিতে। ফলাফলে দংশন এবং মৃত্যুর শেষ সীমানায় পৌঁছে স্ত্রী চম্পাবতীর আত্মদান। স্বামী গয়ার দেহের বিষ স্ত্রী চম্পাবতী চুষে নিজে আত্মাহুতি দেয় কিন্তু স্বামীকে বাঁচায়। এভাবেই এগোয় নাটকের কাহিনী। মাদক-সন্ত্রাস-অবিচার নির্মূল করে স্বপ্নের ঢাকার অন্বেষণে এক যুবকের নিরন্তন লাড়াইয়ের গল্প নিয়ে উৎসবে মঞ্চস্থ দ্বিতীয় নাটকের শিরোনাম ছিল ‘ঢাকার অসুখ ডাক্তার চাই’। নারায়ণ চন্দ্র দাসের রচনায় অগ্নিবীণা প্রযোজিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস। আজ বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন রাত সাড়ে আটটায় মঞ্চস্থ হবে পদাতিক নাট্য সংসদের নাটক ‘গুণজান বিবির পালা’। রচনার পাশাপাশি প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন সায়িক সিদ্দিকী। এদিন রাত দশটায় মঞ্চস্থ হবে থিয়েটার আর্ট ইউনিটের প্রযোজনা ‘আমিনা সুন্দরী’। এস এম সোলায়মানের রচনা থেকে প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন রোকেয়া রফিক বেবী। উৎসবের শেষ দিন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় মঞ্চস্থ হবে নাট্যদল সাধনার প্রযোজনা ‘সীতার অগ্নিপরীক্ষা’। সায়মন জাকারিয়ার রচনা থেকে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাজনীন হাসান চুমকী।
×