ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ আইনের আওতায় বিধিমালা তৈরি হচ্ছে

প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ করলে মামলা হবে

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৭ নভেম্বর ২০১৮

প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ করলে মামলা হবে

তপন বিশ্বাস ॥ স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ আইনের অধীনে বিধিমালা প্রণয়ন করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ করলে এবং তা প্রমাণ হলে অধিগ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাকে জবাবদিহি করতে হবে। এই ধরনের অনিয়মের জন্য সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে। অধিগ্রহণাধীন ভূমির ভিডিও এবং স্থিরচিত্র ধারণের পর অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার জন্য কোন স্থাপনা, ঘরবাড়ি বা অবকাঠামো নির্মাণ করে কৃত্রিম উপায়ে ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হলে তা ক্ষতিপূরণের তালিকাভুক্ত করা যাবে না। সরকারী প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত ভূমির বাজার মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ২০০ ভাগ এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৩০০ ভাগ অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ যোগ করে ভূমি মালিককে দেয়া হবে। যা স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ বিধিমালা ২০১৮ নামে অভিহিত হবে। শিগগিরই এই বিধিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, আইন বাস্তবায়নের জন্য বিধিমালা অপরিহার্য একটি বিষয়। বিধিতেই সবিস্তারে বলা থাকে কীভাবে আইনের বিধানগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। উল্লেখ্য, স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ আইন গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিককে আবাসস্থল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের জন্য গণপূর্ত বিভাগ যেভাবে স্থানান্তরমূল্য নির্ধারণ করবে তার ওপর ১০০ ভাগ অতিরিক্ত অর্থ যোগ করে মালিককে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। সরকারী প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত মূল্যের ওপর ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ অর্থ আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে আদায় করা হবে। ১০ লাখের উর্ধে হলে ২ শতাংশ হারে আনুষঙ্গিক খরচ আদায় করা হবে। আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ক্ষেত্রে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রাক্কলিত অর্থের ওপর ১০ শতাংশের উর্ধে হলে সাড়ে ৭ শতাংশ অর্থ আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে আদায় করা হবে। এছাড়া বেসরকারী বা ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত অর্থের ওপর ১৫ শতাংশ অর্থ আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে নেয়া হবে। যে সংস্থা ভূমি অধিগ্রহণ করবে সেই সংস্থার কাছ থেকে অনুষঙ্গিক ব্যয় আদায় করা হবে। জেলা প্রশাসক আনুষঙ্গিক খরচ সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা তৈরি করে তা অনুসরণ করবে। কোন ভূমি মালিক ক্ষতিপূরণে সন্তুষ্ট না হলে এবং জেলা প্রশাসকের কাছে আরবিট্রেশন করলে জেলা প্রশাসক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের ১০ শতাংশ অধিক ক্ষতিপূরণ মঞ্জুর করতে পারবেন। অবৈধভাবে ভূমিমূল্য বৃদ্ধি রোধে জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট মৌজার মূল্য হারের অধিক মূল্যে জমি ক্রয়-বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদেশ জারি করতে পারবেন। জনস্বার্থ বিরোধী অবকাঠামো তৈরি নিয়ন্ত্রণে ডিসির অনুমতি ব্যতিরেকে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না মর্মে আদেশ জারি করতে পারবেন। ভূমি মূল্য সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে নিতে হবে। এসব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দলিল সম্পাদন করে ক্ষতিপূরণ দাবি করলে তা গৃহীত হবে না। অধিগ্রহণ প্রস্তাবে উর্বর কৃষিজমি, মূল্যবান কৃষিজমি পরিহার করতে হবে। জলাশয়, বনভূমি, ঘনবসতি, শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য এলাকা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত সম্পত্তি অধিগ্রহণ পরিহার করতে হবে। অধিগ্রহণ প্রস্তাবের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রের মূল কপি সংযোজন করতে হবে। কোন পত্রের মূল কপি দেয়া সম্ভব না হলে প্রস্তাবক কর্মকর্তার সত্যায়িত স্পষ্ট ফটোকপি দিতে হবে। অস্পষ্ট, কাটাকাটি, ঘষামাজা কিংবা স্বাক্ষরবিহীন কাগজপত্র কোন অবস্থায় গ্রহণ করা হবে না। ৫০ বিঘা পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণে ডিসির সুপারিশে বিভাগীয় কমিশনার অনুমোদন দিতে পারবেন। ৫০ বিঘার উর্ধে হলে তা অধিগ্রহণে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। অধিগ্রহণাধীন ভূমিতে ডিসি, যে সংস্থার জন্য অধিগ্রহণ করা হবে সেই সংস্থা এবং যার জমি অধিগ্রহণ করা হবে তার উপস্থিতিতে যৌথ তদন্ত পরিচালনা করা হবে। দেখা হবে কী কী অবকাঠামো রয়েছে। গাছপালা, পুকুর বা অন্য কোন স্থাপনা রয়েছে কিনা। এ সবের ভিডিও এবং স্থিরচিত্র গ্রহণ ও সংরক্ষণ করা হবে। যাতে পরবর্তীতে কেউ কোন বিষয়ে অবৈধ কোন দাবি উত্থাপন করতে না পারে। যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে তার বিস্তারিত ফিরিস্তি প্রকল্পের নিকটবর্তী সুবিধাজনক দৃষ্টিগ্রাহ্য স্থানে লটকিয়ে দিতে হবে। এছাড়া ডিসি অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস, স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও পৌরসভা অফিসের ওয়েবসাইটে ও নোটিস বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে। প্রকল্প এলাকায় পুকুর থাকলে পুকুর সংলগ্ন নাল জমির দরের ভিত্তিতে পুকুরের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। পাশে কোন নাল জমি না থাকলে ভিটি জমির দরের ২/৩ ভাগ হারে পুকুরের জমিমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। তবে মাছের ক্ষতিপূরণ বাবদ শতকরা ১ ভাগ মূল্য পুকুরের মূল্যের সঙ্গে যোগ করা হবে। গাছপালার মূল্য বন বিভাগ নির্ধারণ করবে। ফসলের মূল্য নির্ধারণ করবে কৃষি বিভাগ এবং ফসলের বাজারদর নির্ধারণ করবে জেলা বাজার কর্মকর্তা। বর্গাদার উৎপাদিত ফসলের মূল্য নির্ধারণের সময় পৃথক রোয়েদাদ তৈরি করা হবে। ঘরবাড়ি স্থানান্তরের ব্যয় হিসেবে নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে ১শ’ ভাগ অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। ইতোপূর্বে সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা সংস্থার জন্য অধিগ্রহণকৃত কোন সম্পত্তি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকলেও তা বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির জন্য নতুন করে অধিগ্রহণ করা যাবে না। অধিগ্রহণ করা যে কোন সম্পত্তি অব্যবহৃত থাকলে তা নির্ধারিত আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ওই সম্পত্তি সরকারের নামে নাম জারি করতে পারবেন। অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের অর্থ ও আনুষঙ্গিক ব্যয় জেলা প্রশাসকের অনুকূলে জমা দিতে হবে। কোন ভূমি নিয়ে দেওয়ানি মামলা চলমান থাকলে মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ সরকারের খাতে (ডিপোজিট এ্যাকাউন্টস অব দি পাবলিক এ্যাকাউন্ট অব দি রিপাবলিক) গচ্ছিত থাকবে। জেলা প্রশাসক ৬০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের পরিশোধ না করতে পারলে সুস্পষ্ট কারণসহ মাসিক বিবরণী ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। ধর্মীয় উপাসনালয়, কবরস্থান, শ্মশান স্থানান্তরের ক্ষেত্রে নতুন করে তা নির্মাণ করে দেয়া হবে। এই ক্ষেত্রে স্থানান্তর ব্যয় পাবে না তবে অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। অধিগ্রহণ সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারী কোন সংস্থা কিংবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি যে বা যারাই করুক অবশ্যই ক্ষতিপূরণের সঙ্গে পুনর্বাসনের প্রস্তাব তথা ব্যবস্থা থাকতে হবে।
×