ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভুল নীতির কারণে সৌরবিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৭ নভেম্বর ২০১৮

ভুল নীতির কারণে সৌরবিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে না

রশিদ মামুন ॥ সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের খরচে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য দেখা গেছে। ভারতের রাজস্থানে ইউনিট প্রতি মাত্র তিন সেন্টে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে রেকর্ড করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে এখনও প্রতি ইউনিট সৌরবিদ্যুত ক্রয়ে সর্বনিম্ন ১২ সেন্টে চুক্তি করছে। চারগুণ বেশি দরের ব্যয় বহুল বিদ্যুত ক্রয়ে বিদ্যুত বিভাগেরও আগ্রহ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনবান্ধব যে নীতি নেয়া হয়েছে আামদের এখনে সেসব বিষয়ের অভাব রয়েছে। কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত আর তা আলোর মুখ না দেখায় সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের খরচ কমছে না। ভারত সারাদেশে ৩০ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। ক্রমান্বয়ে ভারত সৌরবিদ্যুত উৎপাদনকে আরও বিস্তৃত করার চেষ্টা করছে। প্রতিবেশী দেশ হলেও বাংলাদেশ সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে কার্যকর বড় ভূমিকা রাখতে পারছে না। ভারতে গড় বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতার মাত্রা সাত থেকে আট ভাগ সেখানে আমাদের ৫ ভাগের কাছাকাছি। এই কারণে কিছুটা উৎপাদন কম হলেও আমাদের এখানে বিদ্যুতের দাম এত বেশি হওয়ার কোন কারণ নেই বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শক্তি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল হক বলেন, ভারতের মতো সৌরবিদ্যুতবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে। ভারত অনেক আগে থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু সেখানে আমরা কেবল শুরু করেছি। তিনি বলেন, আমাদের এখানে ছাদে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের খরচ ৬ সেন্টে নেমে এসেছে। কিন্তু এখনও বড় সৌরবিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ কমছে না। বাংলাদেশে মাত্র ২৩ মেগাওয়াট গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফে একটি ২০ মেগাওয়াট এবং জামালপুরের সরিষাবাড়িতে ৩ মেগাওয়াট। দেশের অন্য এলাকায় সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা নিলেও তা সফল হচ্ছে না। বিদ্যুত বিভাগেরও এসব বিষয়ে আগ্রহের ঘাটতি দেখা গেছে। তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আনার ক্ষেত্রে যে আগ্রহ দেখা যায় সৌর বিদ্যুতের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। উল্টো জমির সঙ্কটসহ নানা বিষয় উত্থাপন করে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে অনীহা দেখানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ভারতে সৌরবিদ্যুতে উৎসাহিত করতে সরকার বিনামূল্যে জমি দেয়ার পাশাপাশি জমি উন্নয়ন করে দেয়। একই সঙ্গে বিদ্যুত সঞ্চালন করার জন্য গ্রিড লাইনও নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে এসব কোন কিছুই করা হয় না। শুধু বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বিদ্যুতের একটি ক্রয় চুক্তি করা হয়। সরকার জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াতেও কোন সহায়তা করে না। উল্টো উপজেলা, জেলা প্রশাসন থেকে ভূমি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণের দীর্ঘ প্রক্রিয়াতে বিনিয়োগকারী আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সরকারীভাবে যেসব সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করা হয় সেগুলোও বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখে ভূমি মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক একটি সৌরবিদ্যুত প্রকল্পের পরিচালক বলেন, ভারত যে সুবিধা দেয় একই সুবিধা আমাদের দেয়া হলেও আমার তিন সেন্টে সৌরবিদ্যুত দিতে পারি। কিন্তু আমাদের এখানে কোন সুবিধাই দেয়া হয় না। উল্টো নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সৌরবিদ্যুত প্রকল্পকে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এতে করে সময়মতো প্রকল্পগুলোর কাজই শুরু করা যায় না। বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণের জন্য ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ কমিটি রয়েছে ওই কমিটির বৈঠকে ভারত বাংলাদশের মধ্যে একটি সোলার গ্রিড করার আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তবে ভারতের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের কোন আগ্রহ দেখানো হচ্ছে না। বাংলাদেশে এখনও চরাঞ্চল এবং পাহাড়ী এলাকায় অকৃষি জমি রয়েছে যেগুলোতে চাইলেই সৌরবিদ্যুত উৎপাদন করা যায়। এছাড়া দেশের কুড়িগ্রাম, রংপুর, পঞ্চগড়ে সৌরবিদ্যুত উৎপাদন উপযোগী অকৃষি জমি রয়েছে। কিন্তু এসব জমিতে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে বিদ্যুত বিভাগ কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিভিন্ন সময়ে অকৃষি জমি অধিগ্রহণ করে সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে ভারতের নীতি গ্রহণ করার কথা বললেও সত্যিকার অর্থে তেমন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। জানতে চাইলে টেকসই এবং নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (¯্রডো) চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে প্রধান বাধা জমি। আমাদের জমির সঙ্কট রয়েছে। এরপরও ভারত যে নীতি গ্রহণ করেছে তা আমরা এখনও গ্রহণ করতে পারিনি। ভারতের নীতি গ্রহণ করলে বাংলাদেশও সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের খরচ কমিয়ে আনতে পারত। ভারত নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করে কাজ করছে। সেখানে বাংলাদেশে বিদ্যুত বিভাগের সঙ্গেই রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন। অনেকেই মনে করেন ভবিষ্যতের বিদ্যুত উৎপাদনের কথা চিন্তা করে নবায়যোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে পৃথক করা জরুরী।
×