ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রযুক্তির সুবাদে যেভাবে হারানো মোবাইল ফিরে পেলেন মার্কিন নারী

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৭ নভেম্বর ২০১৮

প্রযুক্তির সুবাদে যেভাবে হারানো মোবাইল ফিরে পেলেন মার্কিন নারী

আজাদ সুলায়মান ॥ বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ফুপিয়ে কাঁদছিলেন মার্কিন নারী পর্যটক ক্রিস্টিনা মেরি। তার কান্না দেখে এগিয়ে আসেন আরেক সহৃদয় যুবক। কেন এভাবে কাঁদছেন- প্রশ্ন শেষ না করতেই মেরির জবাব, একটু আগে আমি একটা উবার নিয়ে এখানে আসি। ও গাড়িতেই আমার ব্র্যান্ড নিউ স্যামসাং ৯ মডেল ছিল, যেটাতে রয়েছে বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ নাম্বার ও ঠিকানা। গাড়িতে ফেলেই নেমে পড়ি এই রেলস্টেশনে। যুবকটি মেরিকে নিয়ে আসেন কয়েক গজ দূরে বিমানবন্দর গোলচক্কর ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান ভূঞার কাছে। মেরির অভিযোগ, দুদিন আগেই তিনি ঢাকায় এসেছেন- বাংলাদেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য দেখতে। গুলশানের একটা হোটেল থেকে উবারের এক্সিও মডেলের একটি গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দর রেলস্টেশন আসেন চট্টগ্রামের ট্রেন ধরতে। তার হাতের ফোনটা গাড়ির সিটেই রাখা ছিল। নামার সময় ভুল করে সেটা ফেলে রেখে যান। গাড়িটি ফোন নিয়েই চলে গেছে। মেরি বার বার তার ফোনে কল দিতে থাকেন সিদ্দিকের মোবাইল দিয়ে। ও প্রান্তে তার মোবাইলটা অনবরত বেজেই চলছে। কিন্তুু চালক তা রিসিভ করছেন না। এভাবে তিনি কল করতেই থাকেন। চালক কিছুতেই রিসিভ করেননি। পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান গাড়ির নাম্বার মনে আছে কিনা জানতে চান। মেরি সেটা বলতে পারেন নি। তবে তিনি ক্ষণিকের জন্য একটা স্মার্ট ফোন চান। সিদ্দিকুর রহমান নিজের ফোনটা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মেরি একটা বিশেষ এ্যাপস ডাউনলোড করেন। তিনি মুহূর্তেই দেখতে পেলেন- তার স্যামসাং ফোনটার বর্তমান লোকেসন বসুন্ধরায় ভিকারুননিসা স্কুলের সামনে। সিদ্দিকুর বুঝতে পারলেন- উবারের ওই গাড়িটির লোকেসন সেখানেই। ঘটনাক্রমে ওই এলাকায় টহলরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ছিলেন সিদ্দিকুরেরই সহোদর আমিনুর রহমান ভূঞা। তাকে তিনি ভিকারুননিসা স্কুলের সামনে গিয়ে উবারের এক্সিও মডেলের কোন গাড়ি রয়েছে কিনা খুঁজতে বলেন। কিন্তু সে সময় বসুন্ধরায় চলছিল প্রধানমন্ত্রীর একটি বিশেষ প্রোগ্রাম। যে কারণে তাৎক্ষণিক ডিউটি ছেড়ে আমিনুর রহমান সেখানে ছুটে যেতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর মেরি দেখলেন গাড়িটির লোকেসন কেমব্রিজ স্কুলের সামনে। মোবাইল ফোনে সিদ্দিক এ মেসেজ পাঠান আমিনকে। তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন গাড়িটি নেই। তখন তিনি জানতে চান- নতুন লোকেসন। মেরি দেখলেন গাড়িটি চলে গেছে খিলবাড়িরটেক নামের একটা এলাকায়। সিদ্দিক এ মেসেজ পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে আমিন গিয়ে হাজির হন সেখানে। এবার সৌভাগ্যক্রমে তিনি পেয়ে যান- ওই গাড়িটির লোকেসন (যার নং ঢাকা মেট্রো-গ-২২-৩৮৫৪)। তিনি চালককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। তখন দেখতে পান- পাশেই সিটের ওপর রাখা একটি ফোন বার বার রিং হচ্ছে। মোবাইলটা কার প্রশ্ন করা হলে চালক রাসেল জানান, এটা এক মার্কিন মহিলার, যাকে গুলশান থেকে বিমানবন্দর নিয়ে যাওয়ার পর তিনি ফোনটা গাড়িতে রেখেই নেমে গিয়েছেন। ট্রাফিক সার্জেন্ট আমিনের দ্বিতীয় প্রশ্ন-বার বার মোবাইলটার রিং বাজার পরও কেন রিসিভ করেননি। রিসিভ করলে তো- মালিককে তা ফিরিয়ে দিতে পারতেন। চালক ইতস্তত করতে জবাব দেন, আমি এত দামি ফোন কিভাবে রিসিভ করতে হয় জানি না। এরপর গাড়িটি নিয়ে আমিন চলে আসেন বিমানবন্দর গোলচক্করে ট্রাফিক পুলিশের অফিসে। অধীর আগ্রহে থাকা ক্রিস্টিনা মেরির সামনে ফোনসহ চালক রাসেলকে হাজির করতেই আনন্দে ফের কেঁদে ওঠেন, বলতে থাকেন ‘ও মাই গড, আনবিলিভএবল।’ তিনি আনন্দের আতিশয্যে বার বার সিদ্দিকুর রহমানের হাত ধরে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে থাকেন, বাংলাদেশ পুলিশের প্রশংসা করেন। তখন তাকে গাড়ির চালক রাসেলের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা মামলা দায়ের করবেন কিনা জানতে চাইলে মেরির সাফ জবাব, না কোন দরকার নেই। ও তো এটা জোর করে নিয়ে যায়নি। আমিই ভুলে গাড়িতে ফেলে রেখে গিয়েছি। তারপর ক্রিস্টিনাকে অন্য একটি গাড়িতে করে বনানীর একটা গেস্ট হাউসে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন সিদ্দিকুর । চালককেও ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, মঙ্গলবার সিদ্দিকুর রহমান ভূঞা জনকণ্ঠকে বলেন, এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। এই ফোন পাওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিলনা। গাড়ির নাম্বার নেই, চালকের ফোন নাম্বার নেই। এমন এক অনিশ্চয়তার মাঝে ক্রিস্টিনা মেরি আমার ফোনটা হাতে নিয়েই কি একটা এ্যাপস ডাউন লোড করে সার্চিং দিল সঙ্গে সঙ্গেই জানা গেল ফোনের লোকেসন। পরে মেরি জানালেন মোবাইল ফোনের আইএমই কিংবা নাম্বার জানা থাকলে তার লোকেসন শনাক্ত করা যায়। হারানো মোবাইল ফোন পাওয়ার নতুন মেথডে আমরাও অবাক। তবে ফোনটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই চালক যদি রিসিভ করত, তার যদি সদিচ্ছা থাকত, তাহলে মুহূর্তেই মেরির সঙ্গে কথা বলে বিমানবন্দরে এসে ফেরত দিতে পারত। এতে বোঝা যায় তার ইনটেনশন খারাপ ছিল। যা মামলা করার মতো অপরাধ। কিন্তু মেরি ফোনটা পেয়েই মহা খুশি, উদারচিত্তে তার প্রতি কোন অনুযোগও করেননি।
×